ফাইজুল ইসলাম:
আল্লাহ মানুষকে দুই কারণে আজাব দেন না, এমনকি কাফের মুশরিক পৌত্তলিকদেরও দেন না।
একবার আবু জেহেল আল্লাহর রাসুলের কাছে এসে বললেন,”মুহাম্মদ, আমাদের উপর নাকি আজাব আসবে, আল্লাহকে বলো আমাদের উপর পাথর বৃষ্টি নামানোর জন্য। তুমি বলেছো আল্লাহ নাকি অমুক অমুক সম্প্রদায়ের উপর পাথর বৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন। ”
এবার আল্লাহ আয়াত নাজিল করলেন। সূরা আনফালের ৩৩ নাম্বার আয়াত,
“ওমা কা’নাল্লহু লিইউ আজ্জিবাহুম ওয়া আংতা ফিইহিম, ওমা কানাল্লহু মুয়াজ্জিবাহুম ওয়াহুম ইয়াসতাগফিরুন। “
অর্থঃ আল্লাহ এমন নন যে, তুমি তাদের মধ্যে থাকবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন।” (৮:৩৩)
এ আয়াতের তাফসিরে আল্লাহ বান্দার প্রতি দুই কারণে আজাব দেন না।
১) হে নবী মুহাম্মদ, আপনি তাদের মাঝে থাকা অবস্থায় আমি তাদের শাস্তি দিতে পারি না,
২) আরেকটি হচ্ছে বান্দা যখন ইস্তেগফার পড়ে আল্লাহর উপর আজাব দূর করে দেয়া ওয়াজিব হয়ে যায়।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন, আমাদের প্রত্যেকের জন্য আল্লাহ দুটি নিরাপত্তা দান করেছেন আল্লাহ।
১)আল্লাহর রাসুল (স:) কাউলুল রসুলি ফি হা, সাইয়েদুল মুরসালিন,খতামান নাবিয়িন,আম্বিয়ায়ে সালেহীন, রিয়াজুস সালেহীন নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি যতক্ষণ থাকবেন আল্লাহ ওই কওমের উপর আজাব দিবেন না।
২)ইস্তেগফার নামক নিরাপত্তা। এই নিরাপত্তা কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ দয়া করে আমাদের দিয়েছেন।
মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থাকা অবস্থায় আল্লাহ ওই জনপদের উপর আজাব দিবেন না। তিনি পৃথিবী থেকে চলে গেছেন।
আব্বাস রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
“উম্মত যদি ইস্তেগফার ছেড়ে দেয় তবে ধ্বংস হয়ে যাবে।”
এরপর নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করলেন। আল্লাহ সূরা আনফালের ৩৪ নাম্বার আয়াত নাজিল করলেন।
“এবং তাদের কী-বা বলার আছে যে, আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দেবেন না যখন তারা লোকদেরকে মসজিদুল হারাম হতে নিবৃত্ত করে? যদিও তারা এর তত্ত্বাবধায়ক নয়। মুত্তাকীগণই এর তত্ত্বাবধায়ক কিন্তু তাদের অধিকাংশই এটা সম্পর্কে অবগত নয়।” (৮:৩৪)
আল্লাহর নবীর উপস্থিতির কারণে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার জাতি বা গোষ্ঠীকে শাস্তি দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন। আল্লাহর নবী বা পয়গম্বরদের উপস্থিতি কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠীর উপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের শামিল। আর সূরা আনফালের ৩৪ নম্বর আয়াতে মুসলমানদের ওপর মক্কার মুশরিকদের অত্যাচার ও নিপীড়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মক্কার কাফের ও মুশরিকরা মুসলমানদেরকে কাবা ঘরের পাশে নামাজ ও ইবাদত করতে দিত না। মুসলমানরা সেখানে নামাজ পড়তে গেলে কাফেরদের তীব্র বিরোধিতা এবং নানা ধরনের অত্যাচারের মুখোমুখি হতেন। এমনকি তারা মুসলমানদের হজ্জ বা ওমরাহ করারও সুযোগ দিত না। তারা নিজেদেরকে কাবা ঘরের তত্ত্বাবধায়ক মনে করতো। এ আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন, মুশরিকদেরকে তাদের এসব কাজের জন্য অবশ্যই শাস্তি দেয়া হবে। তারা নিজেদেরকে এমন এক পবিত্র স্থানের অভিভাবক ভাবছে যার উপযুক্ত তারা নয়। মসজিদুল হারাম বা কাবাঘর হচ্ছে আল্লাহর ঘর। মুশরিকরা জোর করে অন্যায়ভাবে এর দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করলেও তারা কোনোভাবেই এর তত্ত্বাবধায়ক নয়। তারা তাদের অন্যায় আচরণের জন্য কেবল পরকালেই শাস্তি ভোগ করবে না, এ দুনিয়াতেও তারা নানা রকম বিপদ ও বালা-মুসিবতে জর্জরিত থাকবে।
৩৪ নাম্বার আয়াতের তাফসিরে বিশারদগণ বলেন,
“হে নবী মুহাম্মদ, আপনি তো এখন তাদের মাঝে নাই,এখন তাদের শাস্তি দিতে কোন বাঁধা নাই।
এরপরই বদর যুদ্ধে কাফেরদের প্রত্যেককে আল্লাহ শায়েস্তা করেন। কেননা তখন নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মাঝে ছিলেন না।
নবী মুহাম্মদ সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমত।তিনি শুধুই মুসলমানদের নবী নন,তিনি সমগ্র জাতির সর্বকালের সর্বসময়ের রহমত। কাফের, মুশরিকদের জন্য্ও রহমত।
সূরা আনফালের ৩৩ নাম্বার আয়াত অনুযায়ী আজাব হতে বাঁচার উপায় হচ্ছে নবী তাদের মাঝে উপস্থিত থাকা। যেহেতু নবী আমাদের মাঝে নেই। তাই আমাদের একমাত্র নিরাপত্তা হচ্ছে মহান রাব্বুল আ”লামীনের কাছে তওবা।
ফিচার লেখক :
ফাইজুল ইসলাম (১৭-১৮)
আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়