ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, জাতীয় স্বার্থ বিরোধী পাঠ্যপুস্তক সংশোধনে সর্বব্যাপী গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, বিশ্ব যখন ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে প্রবেশ করছে, বেকারত্ব যখন তারুণ্যকে হতাশায় নিমজ্জিত করছে, অর্থনীতি, রাজনীতি যখন অনৈতিকতার চরম খেসারত দিচ্ছে, দেশের পাঠ্যপুস্তকে যখন প্রায়োগিক বিজ্ঞান, কর্মমুখি শিক্ষা ও নৈতিকতার প্রাবল্য থাকার কথা ছিলো তখন পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি, বিজ্ঞানের নামে ধর্মবিদ্বেষী দর্শন ও নৈতিকতা বিরোধী বিষয়বস্তু সংযোজন করা হয়েছে।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, পাঠ্যপুস্তকের প্রধান প্রবণতা হওয়ার কথা দেশীয় ঐতিহ্য, বোধ-বিশ্বাস, সেখানে নতুন পাঠ্যপুস্তকের প্রধান প্রবণতাই হলো দেশের হাজার বছরের বোধ বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক ও ধর্মবিদ্বেষ। পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার একটি মাধ্যম হতে পারতো নতুন পাঠ্যক্রম, অথচ এই পাঠ্যক্রমেই উল্টো বিবাদের বীজ রোপন করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরস্থ চুং ওয়া রেস্টুরেন্টে ২০২৩-এর মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে জনগণের বোধ-বিশ্বাস, সংস্কৃৃতি ও জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করে সাম্প্রদায়িক উস্কানী, তথ্য ও ইতিহাস বিকৃতি, বিতর্কিত ও অবৈজ্ঞানিক মানব সৃষ্টিতত্ত্বের অনুপ্রবেশ, ট্রান্সজেন্ডার টার্ম, পৌত্তলিক ও ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির আধিপত্য, প্লেজারিজম এবং ধর্ম ও জাতি সত্ত্ব্বাবিরোধী বিষয়বস্তু সংযোজনের মতো নিন্দনীয় ঘটনায় করণীয় সম্পর্কে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘গোলটেবিল বৈঠকে’ সভাপতির বক্তব্যে দলের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই উপরোক্ত কথা বলেন।
পীর সাহেব চরমোনাই তার স্বাগত বক্তব্যে আরো বলেন, পাঠ্য বইয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সর্বনাশ করা ট্রান্সজেন্ডারিজমকে হালকা করে দেখানো হয়েছে। বাঙ্গালী মুসলিমের ঐতিহ্যের অংশ পর্দাকে হেয় করাসহ দেশ ও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী বহুরৈখিক অপচেষ্টা করা হয়েছে। পীর সাহেব চরমোনাই হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, জাতীয় স্বার্থবিরোধী এই পাঠ্যপুস্তক অবশ্যই বাতিল করতে হবে এবং এর সাথে জড়িত সকলকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দেশের সকল ধারা ও মতের সর্বজনকে সাথে নিয়ে রাজনৈতিক সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন গড়ে তুলবে, ইনশাআল্লাহ। যার পরিণতিতে জাতীয়
স্বার্থবিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোষররা সমূলে উৎখাত হবে।
সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, বর্তমান সরকার বিতর্কিত. নিম্নমানের সিলেবাস প্রণয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি শিক্ষা কমিশন বাতিল করে গ্রহণযোগ্য আলেম ও শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে নতুন শিক্ষা কমিশন গঠনের দাবি জানান।
প্রিন্সিপাল মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, দিপুমনি মোদির প্রেসক্রিপশনে পাঠ্যক্রমে নাস্তিক্যবাদী বিষয় সংযোজন করে ধর্মহীন জাতি তৈরি চক্রান্ত করছে।
এবি পার্টির আহ্বায়ক সোলায়মান চৌধুরী বলেন, বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের এদেশে সিলেবাস প্রণীত হবে দেশের মানুষের চিন্তাচেতনার ভিত্তিতে। কিন্তু বর্তমান সরকার জনগণের ট্যাক্সের টাকায় নাস্তিক্যবাদী এবং ধর্মবিরোধী সিলেবাস চাপিয়ে দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে পীর সাহেব চরমোনাই’র নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলনের বিকল্প নেই।
ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, মোদির তত্তকে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠার জন্য মুসলমান শাসকদেরকে বহিরাগত ও দখলদার হিসেবে পাঠ্যক্রমে তুলে ধরা হয়েছে। যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রফেসর ড. একেএম ইউনুস বলেন, বর্তমান পাঠ্যক্রম শুধু ইসলামবিরোধী নয়, বরং মানবতাবিরোধীও। ২০০৫ সালে যেখানে আমেরিকায় বিবর্তনবাদকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে নতুন করে তা পাঠ্যক্রমে সংযোজন করা হয়েছে। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি পাঠ্যক্রম প্রণয়নে জড়িতদের দৃস্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকেবক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদাানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, এবি পার্টির আহ্বায়ক ও সাবেক সচিব সোলায়মান চৌধুরী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের স্থায়ী কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিল ভাইস চেয়ারম্যান আলী হোসেন ফরাজী, গণআধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ঢাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মাওলানা মোঃ ইয়াকুব।
এছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ, নেজামে ইসলাম পার্টির সহ-সভাপতি মুফতী জিয়াউল হক মজুমদার, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মুফতী মোঃ তৈয়্যব হোসাইন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রফেসর ড. একেএম ইউনুস, মহাখালী কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা নজরুল ইসলাম মারূফ, জমিয়তের উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী জাকির হোসাইন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. হানিফ খান, দার্শনিক ও কবি মূসা আল হাফিজ, মাওলানা এবিএম জাকারিয়া প্রমুখ।
এন.এইচ/