ফাইজুল ইসলাম:
প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধু আমাদের অনুভূতি ও অন্তরাত্মায় মিশে আছেন। শেখ মুজিব মানেই বাংলাদেশ। জাতির পিতার প্রতি আমাদের ঋণ, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা অশেষ। শেখ মুজিব মানেই বাংলার মুক্ত আকাশ। শেখ মুজিব মানেই বাঙালির অবিরাম মুক্তির সংগ্রাম। শেখ মুজিব মানেই বাঙালি জাতির অস্তিত্ব। শেখ মুজিব মানেই বাঙালির ঠিকানা। শেখ মুজিব মানেই বাঙালি জাতির আশ্রয়-ভরসা। শেখ মুজিব মানেই বাঙালির আদর্শ। শেখ মুজিব মানেই ঝড়-ঝঞ্ঝার মাঝে মাথা উঁচু করে বাঙালির সঠিক পথে চলা।
যে মুজিব জনতার, সে মুজিবকে কখনো মুছে দেয়া যায় না।
মুজিব এদেশের কোটি মানুষের প্রিয় নাম প্রিয় নাম, প্রতিচ্ছবি। তর্জনীর গর্জনে জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের, ১৯৬৯ সালের পাঁচই ডিসেম্বর সর্বপ্রথম শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নামকরণ করেন।
কবি বলেছিলেন,
“সাবাস বাংলাদেশ
এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়,
জ্বলে পুড়ে পুড়ে মরে ছারখার-
তবু মাথা নোয়াবার নয়। ”
সত্তরের নির্বাচনে রাজনীতির এই মহান কবি, ১৯৭১ সালে নিউজউইক পত্রিকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পয়েট অব পলিটিক্স হিসেবে ঘোষণা করেন, সেই হিসেবে রাজনীতির এই মহান কবি ছিলেন সর্বগুণে গুণান্বিত পরিশ্রম মানবতার জন্য নিজেকে উৎসর্গ পরের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া নেতৃত্বের আজন্ম কলতান,জন্ম, জনসংঘ বদ্ধতা শেখ মুজিবকে করে তুলেছিল অনন্য।গণতন্ত্রের মানষ পুত্র পাকিস্তানের অন্যতম মহান নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মুজিব প্রথমে দীক্ষা গ্রহণ করেন। গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান জনসম্পৃক্ততার অমূল্য জ্ঞান শিক্ষালাভ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এশিয়া নয় সারা পৃথিবীর সাম্য গণতন্ত্র ও মানবতাবাদের প্রবাদ পুরুষ।
জননেতা, কিউবার বিপ্লবী আন্দোলনের অগ্রদূত ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন,
“আমি হিমালয় দেখিনি, শেখ মুজিবকে দেখেছি।”
পর্বতসমূহ ছয় ফুট উচ্চতার এই মহামানব আসলেই হিমালয় এর চেয়েও বড়। মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিনামূল্যে উৎকোচ ব্যতীত তিনি পেয়েছিলেন মানুষের ঐকান্তিক ভালোবাসা। যে ভালবাসায় তিনি জন্ম তথা মৃত্যুর পরেও মানুষের মাঝে,হৃদয়ে অনেকখানি জায়গা জুড়ে আছেন।
১ ৯৭১ সালে যখন শেখ মুজিবুর রহমান ৭ ই মার্চের উত্তপ্ত জনসভায় বলেছিলেন,
“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
তাঁর এই বক্তব্যকে উল্লেখ করে কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন,
“শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অতঃপর কবি এসে –
জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন,
“তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল, হৃদয়ের লাগিল দোলা, সকল দুয়ার খোলা।
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি,
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।”
৭০’এর নির্বাচনের ঐকান্তিক প্রতিচ্ছবিতে যখন শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষের জনসমর্থনের আকণ্ঠ প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তখন পাকিস্তানের প্রেতাত্মা ইয়াহিয়া খান তার হিংস্রাত্মক রক্তের পরিচয় তুলে ধরেন।
অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণ করে ইয়াহিয়া খান জনতার নেতা শেখ মুজিবকে পৃথিবী থেকে মুছে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু যে মুজিব জনতার সে মুজিবকে রুখবে কে?
মুজিব আদর্শের প্রাণ মুজিব এদেশের মানুষের ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি, মুজিব এদেশের রক্তমাংসে গড়া প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন।
সত্তরের নির্বাচনে যখন শেখ মুজিবকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে চেয়েছিল তখন মুজিব এদেশের মানুষের দিকে তাকিয়ে ছিলেন মানুষ কি চায়।
তিনি ইচ্ছে করলেই তার বাহু বলে ক্ষমতা কুন্ঠাবোধ করতে পারতেন। এজন্যই তিনি ৭ই মার্চ বলেছেন,
“আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না আমি এদেশের মানুষের অধিকার চাই।”
গর্বে বুকটা ফেটে যায়, বুকটা ভরে যায় এমন সোনার মানুষ আমাদের সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেই স্বপ্নের পরিক্রমায় আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে।
ইতিহাস কখনো কখনো মানুষকে নতুন করে সভ্যতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, তেমনি বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি মুজিবকেও আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। যাকে বলা হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাঙালি,বাঙালী জাতির গৌরব এদেশের মানুষের প্রাণের স্পন্দন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। মূলত ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ ধূমকেতুর মতো জন্ম নিয়ে একটি সভ্যতা একটি ইতিহাস একটি সার্বভৌম জাতি ও স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিলেন।
১৯৪৮ সালের ১১ ই মার্চ ভাষার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম কারাবন্দী হন। অথচ কেউ কেউ বলে থাকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবের নাকি কোন কার্যকরী পদক্ষেপ ছিল না। ভাষার জন্য যারা আন্দোলন করেছিলেন তাদের মধ্যে শেখ মুজিব ছিলেন অন্যতম।
ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন,
“মা, ভাষা, মাতৃভূমি জগতে প্রত্যেকটি মানুষের নিকট প্রিয়।”
এজন্য শেখ মুজিব পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের বিপক্ষে বাঙালির মায়ের ভাষার জন্য আন্দোলন করেছিলেন।
মুজিব মৃত্যুস্তৃপ থেকে একটি পথহারা জাতিকে নেটৃত্ব দিয়েছিলেন।একটি স্বাধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত, মুক্তি সাম্য গণতন্ত্রের রাজপুত্র -যার হাত ধরেই এদেশের মানুষের ঐতিহ্য হারানো,
হাজার বছরের বাঙালি ঐতিহ্য আবারো ফিরে এসেছে শেখ মুজিবের তর্জনীর আহবানে। ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ যে তর্জনী উপহার দিয়েছিল একটি বাংলাদেশকে।
ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী শেখ মুজিবুর রহমানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আপনার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা কি?
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,
“দেশের মানুষকে ভালোবাসি। ”
আবার জিজ্ঞেস করেছিলেন আপনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কি?
তিনি বলেছিলেন, “আমি আমার দেশকে ভালোবাসি দেশের মানুষকে ভালোবাসি। ”
যে মানুষটি অকৃত্রিম ভালোবাসা আগলে রেখেছিলেন বাঙালি জাতিকে সে জাতি হিসেবে আমরা কতটুকু তার ঐতিহ্য ধারণ করতে পেরেছি।
রাজনীতির এই মহান কবি ছিলেন সর্বগুণে গুণান্বিত।তার পরিশ্রম মানবতার জন্য, নিজেকে উৎসর্গ করে পরের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া নেতৃত্তের আজন্ম দায়িত্ববোধ তাকে করে তুলেছে অপ্রতিরোধ্য।
যে মুজিব জনতার, সে মুজিব কখনো মরে নাই।
স্বাধীনতা, বাংলাদেশ ও শেখ মুজিবের বিষয়ে না নেই। বিনম্র শ্রদ্ধা।
এন.এইচ/