বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘যারা আমাদের স্বাধীনতার সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষাকে কেড়ে নিয়েছে, যারা আমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করেছে, যারা আমাদের রুটি-রজি বন্ধ করে দিয়েছে, আমাদের কৃষক, খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের পেটের ভাত কেড়ে নিয়েছে। সেই আওয়ামী লীগ সরকারকে মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা ভোট চুরি করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে।’
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেল রাজধানীর খিলগাঁও জোড়পুকুর খেলার মাঠের সামনে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির জেন-২, খিলগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদা থানার উদ্যোগে জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, গণপরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি ও পুলিশের গুলিতে ভোলায় নূরে আলম, আবদুর রহিম ও নারায়ণগঞ্জে শাওন হত্যার প্রতিবাদে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ইংল্যান্ডে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবিসির সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ‘আওয়ামী লীগের আমলে যেসব নির্বাচন হয় সেগুলো সবচেয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হয়’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সরকার ভোট চুরি করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা আমাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিলাম। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরি করব। আমাদের এখানে গণতন্ত্র থাকবে। আমরা প্রতিবাদ করতে পারব, কথা বলতে পারব, সভা সমাবেশ করতে পারব। আমাদের সাধারণ মানুষকে মোটা কাপড় মোটা ভাত দিতে পারব। তারা কি করেছে, দুইবার- সেই ৭২ থেকে ৭৫ সাল, এখন আবার এই সময়ে তারা আমাদের সেই স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মেগা প্রজেক্ট করে মেগা দুর্নীতি করছে। টাকা পাচার করছে, বিদেশে ঘর-বাড়ি তৈরি করছে। আর আমাদের গণতন্ত্রকে হত্যা করছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির বরকত উল্লাহ বুলু, তাবিথ আউয়াল ও বেগম সেলিমা রহমানকে হত্যার জন্য আঘাত করেছে। ভোলায় নূরে আলম, আব্দুর রহিম এবং নারায়ণগঞ্জে শাওন প্রধানকে হত্যা করে এই আন্দোলনকে দমন করে রাখা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে, আজকেও জেগে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করবো। আমাদের দেশে গণতন্ত্র থাকবে। কিন্তু আজকে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। পরপর দুটো ভোট ডাকাতির নির্বাচন করা হয়েছে।’
‘আজকে আমাদের পরিষ্কার কথা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে মুক্তি দিতে হবে। মুক্তি দিতে হবে সমস্ত বন্দীদেরকে, যাদেরকে রাজনৈতিক কারণে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করেছে, সব তুলে ফেলতে হবে,’ বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি আরো বলেন, ‘পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। যার মাধ্যমে নতুন পার্লামেন্ট গঠন করা হবে, সরকার গঠন হবে। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে আজকে ঐক্যবদ্ধ হই। সকল রাজনৈতিক দল, সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই এবং দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাই।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাস, দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মীর সরাফত আলী সপু, কামরুজ্জামান রতন, সুলতানা আহমেদ, রফিকুল আলম মজনু, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।