নিয়ম অনুযায়ী রাত ১১টায় বন্ধ হয়ে যায় গুলশান কমিউনিটি ক্লাব। অথচ রাত ১টার পর ক্লাবের বারে ঢুকেই মদ চাইলেন পরীমনি।
চাহিদা অনুযায়ী তার টেবিলে মদের বোতলও সরবরাহ করা হয়। তবে সময় পেরিয়ে যাওয়ায় পরীমনির কথা মতো ওয়েটার মদ সার্ভ (পরিবেশন) করতে রাজি হননি। আর এতেই রেগে গিয়ে ওয়েটারদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হন। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বারের গ্লাস, স্ট্রেসহ বেশকিছু জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন পরীমনি।
জানা গেছে, পরীমনি ওই ক্লাবের সদস্য নন। তারপরেও অন্য একজন সদস্যের রেফারেন্সে তিনি ক্লাবে প্রবেশ করেন। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই বারে ঢুকে মদ পরিবেশন করতে বলেন। পরে ক্লাবের একজন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ এসেও পরীমনির উশৃঙ্খলতার চিত্র দেখতে পান।
জানা যায়, ঘটনার দিন মঙ্গলবার (৮ জুন) রাতে ক্লাবের এক সদস্য সঙ্গে করে দু’জন গেস্ট আনেন। ওই দু’জন গেস্টের একজন জরুরি কাজ আছে জানিয়ে বাইরে যান। যিনি কিছুক্ষণ পরে পরীমনিসহ আরো দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাবে প্রবেশ করেন। ক্লাবের সিসিটিভি ফুটেজেও মধ্যরাতে পরীমনিসহ চার জনকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
ক্লাব সংশ্লিষ্টরা জানান, রাত ১১টার দিকে নিয়ম অনুযায়ী গুলশান কমিউনিটি ক্লাব বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রবেশের সময় ক্লাব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তাদের বাধা দেওয়া হয়।
কিন্তু পরীমনিকে আনতে যাওয়া সেই গেস্ট বলেন, ক্লাবের ভেতরে তার মোবাইল ও কাগজপত্র রয়ে গেছে। এ সময় তাদের এক জনের পরনে হাফপ্যান্ট ও স্যান্ডেল ছিল। ড্রেসকোড না মেলায় তাদের আবারো বাধা দেওয়া হয়। তারপরেও তারা ক্লাবে প্রবেশ করে সরাসরি দ্বিতীয় তলায় বারে যান।
রাত প্রায় দেড়টার দিকে পরীমনি বারে গিয়ে মদ অর্ডার করেন। ক্লাব বন্ধের নির্ধারিত সময় অনেক পেরিয়ে গেলেও তার টেবিলে এক বোতল মদ সরবরাহ করা হয়। এরপর পরীমনি ওয়েটারকে মদ পরিবেশন করতে বলেন। কিন্তু ওয়েটার এতে রাজি না হওয়ায় পরীমনি ক্ষিপ্ত হয়ে গ্লাস-স্ট্রে ছুড়তে থাকেন।
এ সময় তাদের ক্লাব থেকে চলে যেতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তারা কিছুতেই যাচ্ছিলেন না উল্টো ওয়েটারদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হন। এরপর ক্লাবের একজন ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশি সহায়তা চান। সে অনুযায়ী গুলশান থানা পুলিশ এসেও পরীমনির এমন আচরণ দেখতে পান। পরে পুলিশ সদস্যরা তাদের ক্লাব থেকে বের করে দেন।
পরীমনির এমন উশৃঙ্খল আচরণ প্রসঙ্গে গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর বলেন, আমরা তাকে চিনতাম না, পরে এক জনের কাছে শুনেছি উনার নাম পরীমনি। ক্লাবের একজন সদস্যের রেফারেন্সে তিনি ক্লবে এসেছিলেন। সেই সদস্যকে ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী শোকজ করা হয়েছে। ক্লাবের সম্মান ক্ষুণ্নের কথা বিবেচনায় আমরা এই মুহূর্তে কোনোভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছি না।
গুলশান থানা পুলিশ জানায়, পরীমনি গুলশান কমিউনিটি ক্লাবের সদস্য নন। এর পরেও মঙ্গলবার (৮ জুন) রাতে পরীমনিসহ কয়েকজন ওই ক্লাবে প্রবেশ করেন। সেখানে গিয়ে পরীমনি উশৃঙ্খল আচরণ শুরু করেন। এ সময় পরীমনি ও তার সঙ্গে থাকা লোকজন ক্লাবে ভাঙচুর শুরু করেন।
এর মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি জানায়। খবর পেয়ে গুলশান থানা পুলিশ তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা দেখতে পায়। পরে থানায় ফিরে ঘটনাটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে লিপিবদ্ধ করে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, ৯৯৯ থেকে গুলশান থানায় ফোন করলে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ গিয়ে তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা দেখতে পায়। এরপর পুলিশ সদস্যরা থানায় ফিরে এসে জিডি আকারে গোটা বিষয়টি থানায় অবগত করেন।
ঢাকা বোট ক্লাবের ঘটনার পর পরীমনির বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ। নিয়ম ভেঙে প্রতিনিয়ত মধ্যরাতে কয়েকটি সোশ্যাল ক্লাবে এই নায়িকার যাতায়াত ও মদ পানের বিষয়েও তথ্য পাওয়া গেছে।