চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আলহাজ্ব সৈয়দ জিয়াউল করীমকে পরাজিত করতে ধানের শীষের কর্ণধাররা নৌকায় ওঠার খবর জাতীয় গণমাধ্যমের সংবাদে জানতে পেরেছি কয়েকদিন যাবৎ।
আজকে পাওয়া গেল চরমোনাই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুল ইসলাম মাস্টার ও বিএনপির সাবেক অর্থাৎ ১৮ বৎসর আগের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম রাঢ়ী’র ভোট ক্যাম্পিং এর চিত্র।
আবদুস সালাম রাঢ়ী এখনো বিএনপির ইউনিয়ন আহ্বায়ক। চলতি নির্বাচনে তিনি আওয়ামী প্রার্থীর জানের জান। আবদুস সালাম রাঢ়ী হাতপাখা ঠেকাতে নৌকায় উঠেছেন। এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন নৌকা মার্কায় ভোটের জন্য। তিনি আওয়ামীলীগ প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সময়ন্বয়ক।
গত ২০ অক্টোবর আজকের পত্রিকা’য় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সম্পর্ক সাপে-নেউলে হলেও একটি জায়গায় এসে এক হয়ে গেছে দুই দল। বরিশালে চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আসন্ন নির্বাচনে পীরের আধিপত্য ঠেকাতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি। সেই অনুযায়ী তৎপরতাও চালাচ্ছেন দলটির ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
কীর্তনখোলা নদীর পূর্ব তীরে চরমোনাই ইউনিয়ন। বরিশাল সদর উপজেলার আওতাধীন ইউনিয়নটি চরমোনাই পীর তথা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ১৯ বছর ধরে এ ইউনিয়ন পরিষদের কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে দলটি। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে অসন্তোষ দীর্ঘদিন ধরে। যে কারণে আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী না দিলেও চরমোনাই পীরের কর্তৃত্ব ঠেকাতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাতের ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি।
খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় সম্প্রতি চরমোনাইর রাজারচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠানে চরমোনাই ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে থাকার জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন। চরমোনাই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম রাঢ়ী এ প্রসঙ্গে বলেন, চরমোনাই পীর-পরিবার বিএনপির চিরশত্রু। তাই জেলা বিএনপির নির্দেশে পীর-পরিবারের প্রার্থীকে পরাজিত করতে তাঁরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে থাকবেন।
রাজনীতিতে দুই দলের বৈরী অবস্থানের মধ্যেও বিএনপি কেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে—জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় বিএনপি এবারের নির্বাচনে নৌকার পক্ষে সমর্থন দেবে।
১৮ অক্টোবর দৈনিক সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের সূতিকাগার চরমোনাই ইউপিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাট্টা হয়ে পীর পরিবার ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। প্রায় দুই দশক ধরে ইউনিয়নটিতে পীর পরিবার চেয়ারম্যান পদে রয়েছে।
সম্প্রতি জেলা বিএনপির (দক্ষিণ) সভাপতি এবায়েদুল হক চানের অংশগ্রহণে চরমোনাইয়ের রাজারচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিএনপির আলোচনা সভা ও দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া-মোনাজাত হয়। সূত্র জানিয়েছে, দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠানের আড়ালে মূলত সেখানে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপির ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, চরমোনাই ইউনিয়নে বিএনপি প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নূরুল ইসলামের পক্ষে থাকবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম রাঢ়ী বলেন, চরমোনাই পীর পরিবার বিএনপির চিরশত্রু। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নেই। তাই পীর পরিবারের প্রার্থীকে পরাজিত করতে আমরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। এটা জেলা বিএনপির সিদ্ধান্ত বলেও দাবি করেন সালাম রাঢ়ী।
অপরদিকে জেলা সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন বলেন, ইউনিয়ন বিএনপি পীর পরিবারের প্রতিপক্ষ নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে থাকবে।
কথা হলো আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ভোট কারচুপি করবে এমন আশঙ্কায় তারা নির্বাচন বর্জন করেছে।
নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় বিএনপি নেতাদের উচিত ছিলো স্বৈরাচারী সরকারের প্রার্থীকে হারিয়ে আওয়ামীলীগের যে জনসমর্থন নেই তা প্রমাণে কাজ করা। অথবা নিরব ভূমিকা পালন করা। এটা না করে বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে অদাজল খেয়ে নামার সংবাদ কি বলে দেয় না ? ক্ষমতায় যাওয়া আর ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে বিএনপি ইসলামী মূল্যবোধের কথা বলে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে।
বিএনপির হাইকমান্ড নিশ্চয়ই চরমোনাই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের পক্ষে বিএনপি নেতাদের মাঠে নামার সংবাদ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিন্তু তারা যখন প্রতিদিন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেন তখন তো তাদের বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে পারতেন। তাই আমরা ধরে নিতে পারি অস্তিত্ব সংকটে পড়ে ধানের শীষ ভবিষ্যতে নৌকায় উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে বিএনপির সমর্থনের সংবাদ প্রকাশ তার প্রথম ধাপ। এখন হয়তো জনগনের প্রতিক্রিয়া বুঝতে বিএনপি নিরব রয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমীর আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই রহঃ এর এ কথাটি আবারো প্রমাণ করলো আওয়ামী লীগ-বিএনপি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।
চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের নৌকায় ওঠার সংবাদে বিএনপির নিরবতা সারাদেশে বিএনপি সমর্থকদের বার্তা দিচ্ছে তারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অঘোষিতভাবে নৌকাকে সমর্থন দিচ্ছে।
এমন যদি কিছু হয়ও তাতে দেশবাসী বা ইসলামী জনতার হতাশ হবার কোন কারন আছে বলে আমি মনে করি না।
একথা বলার কারণ হলো- চারদলীয় ঐক্যজোট এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহঃ যখন বিএনপি জোট ছেড়ে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণায় আওয়ামী লীগকে রাজি করিয়ে তাদের সাথে আবদুল জলিল-ইউসুফী চুক্তি করলো তার কয়েকদিন পর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন,” কট্টরপন্থী মৌলবাদী একটি দলের সাথে আওয়ামী লীগ চুক্তি করেছে”।
এর অর্থ হচ্ছে চারদলীয় জোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহঃ যখন চার দলীয় জোটে ছিলেন তখন ভালো ছিলেন। আর যখন আওয়ামী লীগের সাথে চুক্তি করেছেন তখন কট্টরপন্থী মৌলবাদী দলের নেতা আখ্যায়িত হয়েছেন।
এই বিএনপি ধানের শীষ নিয়ে আওয়ামীলীগের নৌকায় উঠলে তা স্বাভাবিক ভাবে নিতে হবে। এ বিষয়ে আশ্চর্য হবার কারণ নেই।
দেশবাসীকে জানাতে হবে আওয়ামী লীগ বিএনপি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।
লেখক
সহকারী সমন্বয়কারী
কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া উপ-কমিটি
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
shahid_kabir2007@yahoo.com