বিশ্ব ইজতেমা ও তাবলিগকে ধর্মীয় পর্যটন ঘোষণা এবং কাকরাইলে তাবলিগের মারকাজ মসজিদে সরকারি প্রশাসক নিয়োগের দাবিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে ধর্ম মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (ডিজি), বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও কাকরাইলে তাবলিগের মারকাজ মসজিদের প্রধানকে বিবাদী করা হয়েছে।
তবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তাবলিগের মুরুব্বিরা। ইজতেমার ময়দানকে স্থানান্তর করার পেছনে হয়রানি ব্যতিত অন্য কোনো ফায়দা দেখছেন না কাকরাইল মারকাজ। এদিকে তাবলিগের মুরুব্বি ও ওলামায়ে কেরামের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে মো. মাহমুদুল হাসান এ লিগ্যাল নোটিশ।
লিগ্যাল নোটিশ এখনও হাতে পাননি উল্লেখ করে তাবলিগ জামাতের আলমী শূরাপন্থী মুরুব্বি ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান টঙ্গীর ময়দানকে ইজতেমার জন্য করে গেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইজতেমার ময়দানে প্রতিনিয়ত উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো খোড়া যুক্তির মাধ্যমে ইজতেমার এই ময়দানকে অন্যত্র স্থানান্তর করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।যিনি নোটিশ পাঠিয়েছেন আমরা তাকে চিনি না, নোটিশটি এখন পর্যন্ত হাতেও পাইনি।
গাজীপুরের টঙ্গীর পরিবর্তে কক্সবাজারে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করা বোকামি ও অযৌক্তিক হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের কাছে তাবলিগের মহতি এই আয়োজন টঙ্গির ইজতেমা বা তুরাগ তীরের ইজতেমা নামেই পরিচিত। তাবলীগ জামাত বা ইজতেমা পর্যটন খাতের কোনকিছু নয়, এটা আল্লাহ তায়ালার কাজ।বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় ঐতিহ্য। তাছাড়া কক্সবাজার পর্যটন এলাকা হওয়ায় সেখানে ধর্মীয় আবহ কম।তাবলিগের সাথীদের জন্য পরিবেশটা অপ্রীতিকর।
এদিকে আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসানের পাঠানো নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশ যদি প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে কমপক্ষে ১০ লাখ বিদেশি মুসলিম পর্যটক আনতে পারে তাহলে এর মাধ্যমে প্রতিবছর বাংলাদেশ কয়েক বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে তাবলিগের এই মুরুব্বি বলেন, ইজতেমায় ২০ হাজারের মতো মুসল্লি বিদেশ থেকে আগমন করেন। এ সংখ্যাটা সৌদি আরবের হজের মৌসুমে হাজীদের সাথে তুলনা করা বোকামি ছাড়া কিছু নয়। আর মেহমানরা আসেন আল্লাহর কাজ করতে। তারা অপচয় করেন না, সবাই মিতব্যয়ী। সুতরাং, আল্লাহর কাজ করতে আসা মেহমানদের নিয়ে বাণিজ্যিক খাত শক্তিশালী করার চিন্তা অযৌক্তিক।
ইজতেমা স্থানান্তরের চলমান বিতর্কে খুশী নন তাবলিগের সাধারণ সাথীরাও। এ প্রসঙ্গে রংপুর থেকে আল্লাহর রাস্তায় মেহনত করতে আসা মাওলানা আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি চিল্লায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে কাকরাইলে অবস্থান করছি। বিতর্কের বিষয়টি আমার সামনে এসেছে কিন্তু পাত্তা দেইনি। তাবলিগে বিভক্তি ও করোনাকালের সংকট কাটিয়ে তাবলিগের সাথী ভাইয়েরা এখন বিশ্বব্যাপী আল্লাহর দীনের দাওয়াত দিতে ব্যস্ত। এ মুহুর্তে নতুন বিতর্ক মহতি এই কাজকে গতিহীন করার চক্রান্ত। সরকারের কাছে আমাদের মতো সাধারণ তাবলিগীরে সাথী ভাইদের আবেদন থাকবে, বিষয়টিকে যেন তারাও পাত্তা না দেন।
এ ব্যাপারে তাবলিগের নিমাজুদ্দীনপন্থী মুরুব্বি মাওলানা জিয়া বিন কাসেম বলেন, “এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। যে ব্যক্তি নোটিশ পাঠিয়েছেন তাকে চিনি না। তিনি আমাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শও করেননি। তাবলিগের কেউ বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। আর তিনি যে সকল যুক্তি দেখিয়েছেন সবই অবান্তর। সুতরাং, এ বিষয়ে কোনো মতামত নেই আমাদের।