একের পর এক হার, একের পর এক ব্যাটিং ব্যর্থতা। টেস্টে বাংলাদেশ দলের পায়ের নিচের জমিন অনেক আগে থেকেই নরম। আবার তা যেন ধেবে তলিয়ে যাওয়ার দশা। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে টানা তিন টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার পর সাকিব আল হাসান শুধু খেলোয়াড়দের নয়, দায় দিতে যান গোটা সিষ্টেমকে। যেখানে আছেন এমনকি দর্শকরাও।
সোমবার সেন্ট লুসিয়ায় দ্বিতীয় টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১০ উইকেটে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশ। দুই টেস্টের কোনটিতেই লড়াই করতে পারেনি। হারের ধরণ প্রায় একই। দুই ম্যাচেই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল ব্যাটিং।
ক্যারিবিয়ান পেস আক্রমণের সামনে কীভাবে টিকে থাকতে তা খুঁজে পাননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। এর আগে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেখা গেছে একই দৃশ্য। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ওদের স্পিনারদের খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডে এক টেস্ট জেতা যেন এখন বেশ অলৌকিক ঘটনায় মনে হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর মুমিনুল হক নেতৃত্ব ছেড়ে দিলে তৃতীয় দফায় দায়িত্ব আসে সাকিবের কাঁধে। কিন্তু বদলায়নি চিত্র। দিনের পর দিন এমন দশার পেছনে আসলে দায় কার?
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বললেন দায় সামগ্রিক সিষ্টেমের, ‘খেলোয়াড়দের এখানে খুব বেশি দোষ দেওয়াটা ঠিক হবে না। শুধু খেলোয়াড়দেরই দোষ দিলে হবে না। আমাদের দেশের সিস্টেমটাই কিন্তু এমন। আপনি কবে দেখছেন বাংলাদেশে ৩০ হাজার দর্শক টেস্ট ম্যাচ দেখছে বা ২৫ হাজার দর্শক মাঠে এসেছে টেস্ট দেখতে?’
‘ইংল্যান্ডে তো প্রতি ম্যাচে (টেস্ট) এরকম দর্শক থাকে। টেস্টের সংস্কৃতিটাই আমাদের দেশে ছিল না কখনো, এখনো নেই।’
টেস্ট ম্যাচে ভরপুর গ্যালারি থাকে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায়। বাকি দেশগুলোতে দীর্ঘ পরিসরে দর্শক খরা অভিন্ন চিত্র। যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ধরাশায়ী হলো বাংলাদেশ সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠেও দর্শক ছিল না। কিন্তু তাই বলে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে তা প্রভাব ফেলেনি।
সাকিব অবশ্য এই কথা দিয়ে বোঝাতে চাইলেন সামগ্রিভাবেই টেস্টের সংস্কৃতি নেই বাংলাদেশে। টেস্ট মর্যাদার ২২ বছর হয়ে গেলেও এখনো কুলিন সংস্করণের মূল্যায়ন করতে পারছেন না তারা, ‘টেস্ট সংস্কৃতি নেই বলে যে হবেও না, সেটাও কিন্তু নয়। এই জিনিসটা পরিবর্তন করাই আমাদের বড় দায়িত্ব। সবাই মিলে যদি একসঙ্গে পরিকল্পনা করে আগানো যায় তাহলেই হয়তো কিছু সম্ভব হবে। নইলে আসলে খুব বেশি দূর আগানো সম্ভব হবে না। কারণ আমাদের টেস্টের সংস্কৃতিই নেই।’
‘আমরা যে টেস্ট ক্রিকেটকে খুব বেশি মূল্যায়ন করি, তা নয়। হ্যাঁ, হতে পারে আমরা ফলাফল ভালো করিনি, এ কারণে মূল্যায়নও হয়নি। তবে একটার সঙ্গে আরেকটার সম্পর্ক আছে। একটার সঙ্গে আরেকটাকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাহলেই ভালো কিছু সম্ভব।’