মোকলেছুর রহমান, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
চারপাশে নদী আর মাঝখানে জেগে উঠেছে চর, নেই কোনো স্কুল-কলেজ বা মাদরাসা। ফলে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ নেই, অল্প বয়সেই তাদের কাজ করতে হয় মাঠে। ধরতে হয় সংসারের হাল। অনেকেই শিকার হচ্ছে বাল্যবিয়ের এ চিত্র কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের চর দামালগ্রাম ফান্দের চরের।
জানা গেছে, নদীভাঙন ও বন্যায় সর্বস্ব হারানো এ এলাকার মানুষ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
স্থানীয়দের তথ্য মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় এখানকার ৯০ ভাগ মানুষই নিরক্ষর তাদের বেশির ভাগই কৃষি ও দিন মজুরি করে।
অনেকে জেলার বাইরে গিয়ে শ্রম বিক্রি করে সংসার চালায়। ইচ্ছা থাকলেও সন্তানদের শহর কিংবা বাইরে লেখাপড়া করানোর সামর্থ্য নেই। সন্তানকে লেখাপড়া করাতে চাইলে যেতে হয় জেলা কিংবা উপজেলা শহরে অথবা নদী পারাপার করে যেতে হয় পার্শ্ববর্তী গ্রামের স্কুলে।
এতে এক দিকে যেমন ভোগান্তির শিকার হতে হয়, তেমনি নৌকাযোগে নদী পারাপারে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। ফলে সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন থাকলেও তা দুঃস্বপ্নই থেকে যায়।
চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশু-কিশোরদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে শহিদুল ইসলাম ও শাপলা খাতুন দম্পতি নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন চর দামালগ্রাম (ফান্দেরচর) প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র।
এক বছর ধরে তারা বিনা পারিশ্রমিকে শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। শিক্ষার সুযোগ পেয়ে খুশি শিশু- কিশোররা। স্বপ্ন বুনছেন সমাজের আর ১০ জনের মতো পড়াশোনা করে দেশকে আলোকিত করার।
নাজমুল ইসলাম (১২) নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, সে আগে মাঠে কাজ করত, পাওয়ার টিলার চালিয়ে হালচাষ করে সংসারে সহযোগিতা করত। কখনো তার স্কুলে যাওয়া হয়নি। স্বরবর্ণ কী সেটাও জানত না।
পরে শহিদুল-শাপলার শিক্ষাকেন্দ্রে পড়ার সুযোগে আর মাঠে কাজ করে না। এখন সে লেখাপড়া শিখছে।
আয়েশা খাতুন (১০) ও কাকলী খাতুনসহ (১১) আরও অনেক শিক্ষার্থী জানায়, তারা এর আগে কখনো স্কুলে যায়নি। সুযোগ হয়নি লেখাপড়ার। আগে মাকে সংসারের কাজে সহযোগিতা করত। তারা এখন পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত। লেখাপড়া শিখে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে।
ফান্দেরচর প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছেন।
এলাকার শিশুরা শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে- বিষয়টি তাকে তাড়িত করে বিয়ের পর স্ত্রীকে বিষয়টি জানালে সেও রাজি হয়ে যায়।
পরে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার চিন্তা থেকে একটি মক্তব ঘরে অর্ধশতাধিক শিশু নিয়ে কার্যক্রম শুরু করি।
শহিদুল ইসলামের স্ত্রী শাপলা খাতুন জানান, স্বামীর এই সাহসিকতায় অনুপ্রাণিত হয়ে দুজন মিলে চরের অবহেলিত শিশুদের শিক্ষা দান করছেন। এতে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন তিনিও প্রত্যাশা করেন এখানকার শিশুরা লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে দূর হবে চরাঞ্চলের অন্ধকার।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা জাহান বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমি বিষয়টি জানলাম।
তবে শিক্ষাকেন্দ্রটি পরিদর্শন করে তাদের সহযোগিতা করা যেতে পারে।
এস.আই/