ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, ৯২% মুসলমানের দেশে মদকে সহজলভ্য করে প্রজ্ঞাপন জারী করে সরকার যুব সমাজকে ধ্বংস করতে চায়। একদিকে মাদককে সহজলভ্য করা হচ্ছে অন্যদিকে শিক্ষা সিলেবাস থেকে ইসলামী শিক্ষাকে বাদ দিয়ে সঙ্কুচিত করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫১ তম বছরেও বাংলাদেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে।
যারাই ক্ষমতায় গেছে তারা জবর দখলের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে দেশের সম্পদ লুটপাট করেছে। দ্রব্য মূল্য আকাশচুম্বি হওয়ায় জনগন আজ দিশেহারা। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যার্থ সরকারের পদত্যাগ করা উচিত। বাংলাদেশের জনগন আজ ভাল নেই।
শনিবার (৪ জুন) বগুড়ার সুত্রাপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
চরমোনাই পীর মুফতী রেজাউল করীম বলেন, শ্বেতপত্র নামক নাটক বানিয়ে একদল ঘাদানিক দেশের সম্মানিত উলামায়ে কেরাম ও মাদরাসার বিরুদ্ধে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। দেশ বিরোধী ঘাদানিকদের শ্বেতপত্র তৈরীতে ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নচেৎ তাদের দোষররা এ জাতীয় ঘৃণিত কাজ করার আবারও দুঃসাহস দেখাবে।
উত্তরবঙ্গের প্রবীন আলেমে দ্বীন আল্লামা আব্দুল হক আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বোধ-বিশ্বাসকে সামনে রেখে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ১৫টি দাবি উপস্থাপন করেন।
১। যেকোন মূল্যে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করতে হবে। বাজার কারসাজীর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
২। দেশে মদ ও সকল ধরণের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩। শিক্ষার সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। পূর্ণ ও আবশ্যিক বিষয় হিসেবে গণ্য করতে হবে।
৪। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম শিশুদের জন্য নামাজ শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৫। শিক্ষা সিলেবাস থেকে চরম নাস্তিক্যবাদী সকল ধর্ম বিরোধী, অবৈজ্ঞানিক ও বস্তাপঁচা ডারউইনের থিউরী বাদ দিতে হবে।
৬। কারান্তরিন সকল মজলুম আলেম এবং রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।
৭। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে।
৮। সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচন কালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
৯। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পূর্ব পর্যন্ত সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্রবাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে।
১০। নির্বাচনে সকল দলের জন্যে সমান সুযোগ তৈরী করতে হবে। রেডিও, টিভিসহ সকল সরকারী বেসরকারী গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সকল ধরনের হয়রানী বন্ধ করতে হবে।
১১। দুর্নীতিবাজদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
১২। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে।
১৩। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির (চ.জ) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।
১৪। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
১৫। সকল রাজনৈতিক দলের জন্যে সভা-সমাবেশসহ সাংবিধানিক স্বীকৃত সকল রাজনৈতিক কর্মসূচী ও বাকস্বাধীনতা উন্মুক্ত করতে হবে।
বিভাগীয় সম্মেলনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, সরকারের দায়িত্বশীলরা স্বীকার করে সর্বত্র দুর্নীতি বিরাজমান। কাজেই আওয়ামীলীগ বা বিএনপি দিয়ে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে হাতপাখাকে বিজয়ী করতে দেশপ্রেমিক একযোগে সকলকে কাজ করতে হবে।
দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজ সংকটাপন্ন, জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা এবং তাবেদার শক্তি দেশের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্যে সমাজ ঐক্যদ্ধ হতে হবে। দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষা ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তীব্র গণজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা আব্দুল হক আজাদ বলেন, দেশের বড় সমস্যা হল দুর্নীতি ও প্রতিহিংসার রাজনীতি। দুর্নীতি ও প্রতিহিংসার রাজনীতি মুক্ত করতে ইসলামী অনুশাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নাই। কাজেই দেশ ও জাতির স্বার্থে আমাদের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গঠনে ভূমিকা পালন করতে হবে।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, সহ প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক হাফেজ সিদ্দিকুর রহমান, ইসলামী যুব আন্দোলনের সেক্রেটারী জেনারেল আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সেক্রেটারী জেনারেল শেখ মুহাম্মদ আল আমীন, বগুড়া জেলা সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সিরাজগঞ্জ জেলা সভাপতি মুফতী মুহিবুল্লাহ, পাবনা পশ্চিম জেলা সভাপতি অধ্যাপক আরিফ বিল্লাহ, রাজশাহী জেলা সভাপতি মাওলানা হুসাইন আহমদ, নাটোর জেলা সহ-সভাপতি হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, নওগাঁ জেলা সভাপতি মাস্টার আশরাফুল ইসলাম, পাবনা পূর্ব জেলা সভাপতি মাওলানা সুলাইমান, জয়পুরহাট জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সভাপতি মাওলানা আলী আহমদ, বগুড়া জেলা সেক্রেটারী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, সাবেক এমপি হুমায়ুন কবির চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।





