মিশরের গিজা শহরের আবু সেফিন গির্জায় আগুন লেগেছিল গত রোববার। অগ্নিকাণ্ডে যখন সবাই বাঁচার জন্য ব্যতিব্যস্ত, তখন জ্বলন্ত ওই গির্জার ভেতর থেকে পাঁচ শিশুকে উদ্ধার করে হিরো উপাধি পেয়ে গেছেন এক মিশরীয় মুসলিম তরুণ। ওই ঘটনায় ৪১ জন নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়েছিলেন। খবর আরব নিউজ।
মুহাম্মদ ইয়াহিয়া নামের ওই তরুণ বলেন, আমার বাসা ওই গির্জার পাশেই। আগুন দেখে আমি গির্জার দিকে ছুটে যাই। গির্জার ভেতর থেকে ভয়ার্ত মানুষের চিৎকার শুনতে পাই।
তারপর দ্বিতীয় আর কোনো চিন্তা না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দ্রুত গির্জায় প্রবেশ করি। সে সময় আমি প্রচুর আগুন ও ধোঁয়ার মুখে পড়ি। পরিস্থিতি দৃষ্টিশক্তিকে যেমন কমিয়ে দিচ্ছিল, তেমনি শ্বাস-প্রশ্বাসেও বাঁধা দিচ্ছিল।
ইয়াহিয়া তার টি-শার্ট খুলে ফেলেন এবং পানিতে ভিজিয়ে নেন। শ্বাস-প্রশ্বাসের সুবিধার জন্য সেটা নাকের ওপর বেঁধে নেন। এরপর তিনি একে একে পাঁচজন শিশুকে উদ্ধার করেন।
পরে একজন বৃদ্ধকে পিঠে করে নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পানি নেভানোর জন্য গির্জাতে এত পরিমাণ পানি ব্যবহার করা হয়েছিল যে, দরজার সামনে কাদা হয়ে যায়।
সেখান দিয়ে পার হওয়ার সময় পা পিছলে উভয়েই মাটিতে পড়ে যান। ইয়াহিয়ার আঘাত ছিল গুরুতর। পরে চিকিৎসক জানান, তার পা ভেঙে গেছে। তিনি এখন চিকিৎসাধীন।
গির্জা থেকে শিশুদের উদ্ধারের খবর পেয়ে সবাই তার প্রশংসা করতে থাকে। এমনকি গির্জার পুরোহিতরা হাসপাতালে ইয়াহিয়াকে দেখতে আসেন এবং সাহসিকতার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান।
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার ব্যাপারে গণমাধ্যমে বলা হয়, গির্জাটিতে ৫০০ মানুষ প্রার্থনার জন্য আসে। এক পর্যায়ে সেখানে ব্যবহৃত জেনারেটর থেকে বৈদ্যুতিক আগুন ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন এ সময় দ্রুত বের হতে চাইলে পদপিষ্ট হয়ে ৪১ জন মারা যান।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে দেশটি।