ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাটে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে যেসব দৃশ্যকল্প দেখা দিতে পারে, তার উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। তার সার-সংক্ষেপ নিচে তুলে ধরা হলো :
এক :
সম্পূর্ণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি জিতবে। এর কারণ আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর অধিকাংশ ভোটার আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতার অহংকারী ও দুর্নীতিবাজ চেহারা দেখে ক্লান্ত। তারা এখন পরিবর্তন চায়। সুতরাং তাদের সামনে একমাত্র বিকল্প বিএনপি। তবে নিরপেক্ষা সরকার ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে যে কোনো নির্বাচন বিএনপি বয়কট করবে। কারণ বিএনপি কোনোভাবেই সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না এবং আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সুতরাং আওয়ামীলীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনাও নেই, বিএনপির জয় লাভ করার সম্ভাবনাও নেই।
দুই :
১৯৯৬ সালের মতো আরো একটি আপস-সমঝোতা হতে পারে। সব দলের মতামতের ভিত্তিতে কোনো নিরপেক্ষ সরকারের ফর্মুলা তৈরি হতে পারে। যার অধীনে সকল দল নির্বাচনে অংশ নিবে। তবে এর সম্ভাবনা ১০ এর মধ্যে ১ ধরতে পারি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দৃশ্যকল্প ঘটার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ বর্তমান পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের জন্য এমন কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে সক্ষম হয়নি, যার ফলে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হবে। সুতরাং সমঝোতার জন্য আওয়ামী লীগের আলোচনায় বসার আগ্রহ একেবারেই শূন্য।
তিন :
আওয়ামীলীগ বিএনপির চেয়ে বেশি ভয় করছে অর্থনৈতিক দুর্দশাকে। শাসকদের দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হলো অর্থনৈতিক মন্দা। অর্থনৈতিক দূর্দশার কারণে জনগণ রাস্তায় নেমে আসতে পারে। বাংলাদেশে এমন একটি গুরুতর অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যার ফলে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে আরেক মেয়াদে ক্ষমতায় দেখতে চাইছে না। তারা রাস্তায় নেমে আসতে পারে। এটা সরকারের জন্য এক বিরাট ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশ্বজুড়ে দীর্ঘ সময় ধরে দেশ শাসন করা সরকারগুলো মধ্যবিত্ত বিক্ষোভকারীদের কাছে হঠাৎ করে হেরে যাওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে। তবে এই দৃশ্যের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
চার :
আওয়ামীলীগ তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার দিবে না এবং সংবিধানের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী যথাসময়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবে। বিএনপি সেই নির্বাচন বয়কট করবে। শত প্রতিবাদ বিক্ষোভ হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতাসীনরাই সেই নির্বাচনে জয়ী হবে। এর সম্ভাবনা ১০ এর মধ্যে ৭। এর প্রথম কারণ হলো—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন দক্ষ রাজনৈতিক খেলোয়াড়। সকল বাহিনী ও প্রশাসন তার নিয়ন্ত্রণে। দ্বিতীয় কারণ হলো— সরকার পরিবর্তন হলে ক্ষমতাসীন দল ও জোটের অনেককেই দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। সে পরিস্থিতি ঠেকাতে তাদের জেতার কোনো বিকল্প নেই। তৃতীয় কারণ হলো—বিদেশে আওয়ামী লীগের একাধিক শক্তিশালী বন্ধু রয়েছে। যারা নির্বাচনে তাদেরকে সর্বত সহায়তা করবে।
বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়াই এই নির্বাচন হলে প্রায় বিনা ভোটে আওয়ামী লীগ আরও পাঁচ বছর দেশ শাসন করবে।
সুতরাং বাংলাদেশের জনগণ আরো একটি ‘পরিকল্পিত’ নির্বাচন দেখার অপেক্ষায়।
মূল লেখা :
আরিল্ড এঙ্গেলসেন রুড
অধ্যাপক, সাউথ এশিয়া স্টাডিজ বিভাগ
অসলো ইউনিভার্সিটি, নরওয়ে।
সারসংক্ষেপ :
ডক্টর শহীদুল ইসলাম ফারুকী
এমপি পদপ্রার্থী, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা)
ফ্যাকাল্টি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ