মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠি জেলা পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার ৪ সদস্যদের বিরুদ্ধে কলেজ শিক্ষার্থীকে ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. শামিম খান রায়হান। সে ঝালকাঠি পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ড ব্রাকমোড় সংলগ্ন পুর্ব চাঁদকাঠি এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে বরিশাল পলিটেকনিক কলেজে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে পঞ্চম সেমিষ্টারে অধ্যায়নরত।
অভিযোগ উঠেছে যে, বান্ধবীকে নিয়ে ঘুড়তে গেলে তাদেরকে হেনস্থা করে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন ঝালকাঠি ডিবি পুলিশের চার সদস্য। এদের মধ্যে ৩ জনের নাম শনাক্ত করতে পেরেছে ভুক্তভুগী শিক্ষার্থী। এরা হলেন ঝালকাঠি জেলা পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখায় কর্তব্যরত মো. সালমান, মো. জনি এবং মো. হাসান।
ঘটনা উল্লেখ করে ঐ শিক্ষার্থী পুলিশ হেড কোয়াটার্সে ‘আইজিপি কমপ্লেইন সেল’ বরাবরে লিখিত অভিযোগপত্র পাঠিয়েছে। এছাড়া বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি, ঝালকাঠি পুলিশ সুপার এবং ঝালকাঠি ডিবি’র অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বরাবরে অভিযোগের অনুলিপিও দিয়েছেন।
অভিযোগ পত্রের একটি কপি সংগ্রহ করে দেখাগেছে এতে লেখা রয়েছে ৩০ হাজার টাকা ডিবির ঐ চার সদস্যকে না দিলে তাদের ডুয়েট ছবি (ডিবি’র মেবাইলে তোলা) শিক্ষার্থী রায়হানের বান্ধবীর বাবাকে পঠিয়ে দিবে বলে ভয়ভিতি দেখাচ্ছে তারা।
অভিযোগ পত্রে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শিক্ষার্থী রায়হান লিখেছেন, ‘গত ৭ জুন ২০২৩ ইং তারিখ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি মহিলা কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত তার বান্ধবীকে গাবখান নদীরতীর ইকোপার্কে ঘুড়তে গেলে দু’টি মোটর সাইকেলে চার জন লোক এসে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে গলায় হাত দিয়ে ছবি তুলতে বলেন। এই প্রস্তাবে শিক্ষার্থীরা রাজী না হওয়ায় রায়হানকে চড় থাপ্পর মেরে দু’জনের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এসময় তাদেরকে জোর করে ভিডিও ধারন করাহয়। এরপর চাওয়া হয় ৩০ হাজার টাকা চাঁদা। এজন্য ৩ দিন সময় বেধে দিয়ে কেড়ে নেয়া ফোন দুটি ফেরৎ দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যগ করে পুলিশ।’
অভিযোগ পত্রে উল্লেখ ছাড়াও শিক্ষার্থী রায়হান বলেন, ‘ঘটনার পর ৯ জুন সকালে আমাকে ০১৭২৫৫৪০২০০ নম্বর থেকে কল করে ডিবি পুলিশ সদস্য ‘হাসান’ পরিচয় দিয়ে আমি কোথায় আছি জানতে চায়। আমাকে ব্রাকমোড় মেইন রোডে থাকতে বলা হয়। এরপর আমি বিব্রত বোধ করে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখি। পরদিন ১০ জুন বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিটে ০১৬৫০২৯১৮৫০ নম্বর থেকে কল করে আমার কাছে জানতে চাওয়া হয় আমি আমার বান্ধবীর সাথে কথা বলেছি কিনা (টাকার বিষয়ে) আমি উত্তরে বলেছি টাকা জোগাড় করতে পারিনি আমার বান্ধবী অসুস্থ্য।’
শিক্ষার্থী রায়হান আরো বলেন, ‘এরপর ১৩ জুন বিকেলে আমার সাথে দেখা করতে আসার কথা বলে আমাকে ব্রাকমোর থাকতে বলে। কিন্তু তারা দু’টি বাইকে ৪জন রাত ৮ টার দিকে আসেন। আমাকে ডেকে নেয় ব্রাকমোড় সংলগ্ন ব্রীজের ঢালে। জনি নামের একজন আমাকে বলেন, টাকার কথা ফোনে বলবানা। সব সামনাসামনী বলবা। তখন আমাকে টাকার জন্য চাপ দেয়। না দিতে পারলে আমাদের ভিডিও আমার বান্ধবীর বাবাকে দেখাবে বলে ভয়ভীতি দেখায়। টাকা নাই বলাতে আমাকে আমার বান্ধবীর কাছ থেকে টাকা এনে দিতে বলে আমাকে ২ দিন সময় দেয়। শনিবার ১৬ জুন সন্ধ্যার মধ্যে টাকা দিতে বলে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিটে ০১৬৫০২৯১৮৫০ নম্বর থেকে আমাকে কল করলে আমি সাফ জানিয়েদেই টাকা দিতে পারবোনা, কারন আমি বা আমরা কোনো অনৈতিক কাজ করিনাই। একথা শুনে অপর প্রান্ত থেকে ফোনের লাইন কেটে দেয়। এই নম্বরটি ট্রু কলারে জনি নাম দেখাচ্ছে।’
এ বিষয়ে মো. হাসান এবং মো. জনি নামের অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্যের কাছে মুঠো ফোনে জানতে চাওয়া হলে তারা দু’জনেই ঘটনা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে জানান। ঝালকাঠি জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি, যদি কেউ অভিযোগ করে থাকে তার সাথে কথা বলবো সতত্যা পেলে আমরা বিষয়টি দেখবো।’