ক্যাম্পাস প্রতিনিধি, রবিউল ইসলাম রেজা: কলেজ বাস চালু, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে মুক্তি ও হল সংস্কার সহ ১০ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবি নজরুল সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আজ (১৬ মে) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১.৩০টা পর্যন্ত কলেজের মূল ফটকে বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় উত্তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে হল চাই, বাস চাই, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কার চাই, শ্রেণীকক্ষ সংকট নিরসন চাই সহ নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরান ঢাকা। এছাড়াও বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে রাস্তার যানচলাচল আটকে রাখে শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবিগুলো হলো: ১. বন্ধ হওয়া দুটি বাস পুনরায় চালু করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নূন্যতম পাঁচটি বাস দিতে হবে। ২. ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শিগগির সংস্কার করতে হবে অন্যথায় ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। ৩. শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য আবাসন সুবিধা (হল) নিশ্চিত করতে হবে। ৪. শ্রেণীকক্ষ সংকট নিরসন করতে হবে। ৫. কলেজের শৌচাগার গুলো ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। ৬. শ্রেণীকক্ষে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম করতে হবে। ৭. শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কলেজ প্রশাসন ও শিক্ষকদের সুন্দর আচারণ করতে হবে। আন্দোলন করলে শিক্ষার্থীর ক্লাস পরীক্ষায় দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া বন্ধ করতে হবে। ৯. কলেজের মাঠ ব্যবহারের উপযোগী করতে হবে। ১০. চিকিৎসা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত মেডিসিন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস জীম বলেন, কলেজ প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে যাওয়ার পর তারা আমাদের গুরুত্ব দেয়নি। তারা আমাদের সঙ্গে উল্টো খারাপ আচরণ করেছেন। আমাদের কলেজে শুধু নেই আর নেই। পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ নেই, বাস নেই পড়াশোনার পরিবেশ নেই, মেডিকেল সেন্টারে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। এই কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আমার এসকল সমস্যা দেখে আসছি। প্রথম প্রথম কলেজ প্রশাসন আশ্বাস দিলেও আদতে তার কোনো সমাধান হয়নি।
আতিক হাসান নামের আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, টানা দুই ঘণ্টা আন্দোলন করার পরেও আমাদের কথা শুনতে কলেজ প্রশাসন আসেনি। এর আগেও আমরা আমাদের দাবি নিয়ে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়েছি। তারা আমাদের সঙ্গে কুকুরের মতো আচরণ করেছে। তাই আজকে আন্দোলনের অন্যতম একটা দাবি আমাদের কথা শুনতে হবে, আমাদের দাবি মানতে হবে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করতে হবে।
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, এখানে ভর্তি হওয়ার পর থেকে শুনতেছি সমস্যার সমাধান হবে হবে কিন্তু আর হলো না। যে অভিভাবক শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা না শুনে উল্টো টিসি দেওয়ার হুমকি দেয় এমন অভিভাবক আমরা চাই না। তিন ঘণ্টা ধরে আমরা আন্দোলন করছি অথচ কেউ আমাদের এখনো এই আশ্বাস দেয়নি যে এতোদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে। আমরা আজ রাজপথে নেমেছি। আবারও নামবো। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। এটা আমাদের অধিকার। শিক্ষার্থীরা জানে কিভাবে অধিকার আদায় করতে হয়।
এসময় শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সভাপতি এম ওয়াসিম রানা বলেন, শিক্ষার্থীদের সকল দাবি যৌক্তিক। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল এবং থাকবে। শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক দাবি পূরণ ও বাস্তবায়নের জন্য আমরা কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবো।
কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাওলাদার বলেন, ছাত্রলীগের প্রধান কাজই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো। শিক্ষার্থীরা যেসকল দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে এই কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে সেসকল দাবি আমারও। ছাত্রলীগ সবসময় শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যায় পাশে ছিল এখনও আছে। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হওয়া পর্যন্ত কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এই ছাত্রনেতা।
এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামানোর জন্য সড়কে আসেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. খালেদা নাসরীন। শিক্ষার্থীদের উদ্দ্যেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা সড়কে ঝামেলা না করে কলেজের ভিতরে আসো। তোমাদের দাবিগুলো আমরা শুনবো এবং কিভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করবো।
এ বিষয়ে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি মুঠোফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান এবং সরাসরি দেখা করার কথা জানিয়েছেন।