টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, জেলা বাস-কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব ও টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনিরের বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছে এক কিশোরী। এই মামলায় তার স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (৫ এপ্রিল) রাত ২টার দিকে ওই কিশোরী টাঙ্গাইল সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলাটি করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভুক্তভোগী ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, তার বাবা ও মা মারা যাওয়ার পর থেকে তার ভাইয়ের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে জমি সংক্রান্ত বিষয়টি সমাধান করতে সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের কাছে সহযোগিতা চায়। বড় মনির তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তাকে বাসায় ডেকে নেয়। পরে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রস্তাব দেয়। কিন্তু রাজি না হওয়ায় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে এবং মোবাইলে ছবি তুলে রাখে। পরে ছবি দেখিয়ে বারবার ওই ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। পরে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দেয় অভিযুক্ত।
কিন্তু সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনির ওই কিশোরীকে তার শ্বশুরবাড়ি শহরের আদালতপাড়ায় তুলে নিয়ে যায়। সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু এবারও রাজি না হওয়ায় ওই বাসায় এক কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে সেখানে আবার ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর অভিযুক্তের স্ত্রী নিগার আফতাব তাকে মারধর করেন। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ে ভুক্তভোগী। পরে রাত ৩টার দিকে বাসায় পৌঁছে দেয় তাকে। এরপর থেকে তাকে নানা হুমকি দেওয়া হতো। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার জন্য মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করেছে। মামলার পর বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে তার মেডিক্যাল পরীক্ষা শেষে জবানবন্দির জন্য আদালতে কোর্টে পাঠানো হয়েছে।
ওই কিশোরীর অভিযোগ, বুধবার দুপুর ২টার দিকে ওই কিশোরী থানায় মামলা করতে গেলে বড় মনির প্রভাবশালী হওয়ায় দফায় দফায় বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রস্তাব দেয়। পুলিশও মামলা নিতে গড়িমসি করে। একপর্যায়ে রাত ২টার দিকে পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে। ওই কিশোরী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে দাবি করেছে।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে মেয়েটিকে ধর্ষণের কোনও আলামত পাওয়া যায়নি। তবে সোয়াপ টেস্ট পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। তবে সে অন্তঃসত্ত্বা বলে প্রাথমিক নিশ্চিত হওয়া গেছে।
টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া জানান, গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের বিরুদ্ধে থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এস.আই/