“একজন মানুষ হিসেবে গোটা মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি, একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি ও অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে। অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান।”
বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট গঠন, আটান্নর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ছেষট্টির ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ এ দেশের সাধারণ মানুষের আশা-আকাংখা পূরণের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের সামনে থেকে জাতিকে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু।
রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে সাধারণ সংগ্রাম করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠাই ছিল তার স্বপ্ন। আমাদের দায়িত্ব বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়া। তা হলেই আমরা চিরঞ্জীব এ মহান নেতার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে তার সুযোগ্যকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
১৯৭১ সালের সাতই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেন। ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তাঁর ডাকে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা বাংলা। ২৫ মার্চ গভীর রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তাঁর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারের রাষ্ট্রপতি হন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের পনেরোই আগস্ট মধ্যরাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। ওই সময় দেশের বাইরে থাকায় কেবল তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান।
শেখ মুজিব মানেই বাঙালির মৃত্যুঞ্জয়ী চেতনা। শেখ মুজিব মানেই সাম্য-অধিকার-গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। শেখ মুজিব মানেই দেশের জনগণের প্রতি মানুষের প্রতি ভালোবাসা। শেখ মুজিব মানেই নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা। শেখ মুজিব মানেই বাঙালির দিশা-আলোর দিশারী। শেখ মুজিব মানেই তো বাংলাদেশ, স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।
দেশের লাখো কোটি শ্রমিক, কৃষক, গরিব মানুষ বঙ্গবন্ধুর জন্য আজো নীরবে নিভৃতে কাঁদেন। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, বঙ্গবন্ধুর প্রতি সাধারণ বাঙালির ভালোবাসা কতটা শক্তিশালী। কোনো মানুষই চিরকাল বেঁচে থাকবে না। তবে সমগ্র বাঙালির মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চিরদিনই বেঁচে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অন্যতম বিষয় হল অসাম্প্রদায়িকতা ও উন্নয়ন; কৃষক-শ্রমিকসহ সবাই মিলে একটি সমতাভিত্তিক সোনার বাংলা গড়ে তোলা।
সোনার বাংলা বিনির্মানে তার যোগ্য কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন।যার কারণে বাংলাদেশ আজ রোলমডেল বিশ্বের বুকে। মহান বিজয় দিবসে পিতা মুজিবকে স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধা,ভালবাসা ও বাঙালীর হৃদয়বোধের গভীর মমত্বে।
ইন্দ্রাণী সেনের ভাষায় বলতে হয়,
“তুমি কেমন করে গান কর হে গুণী
আমি অবাক হয়ে শুনি, কেবল শুনি
তুমি কেমন করে গান কর হে গুণী
আমি অবাক হয়ে শুনি, কেবল শুনি
তুমি কেমন করে গান কর হে গুণী।”
পিতা মুজিব আমাদেরকে যা দিয়ে গিছেন তা আজন্ম এদেশের মানুষ মনে রাখবে।
আপনি থাকবেন তেপান্তর ছুঁয়ে চলা নির্নিমেষ মেঘের আবরণে,আপনি থাকবেন নবান্নের কৃষকের আনন্দময় হাসিতে, আপনি থাকবেন কিশোরের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরে,পিতা মুজিব আপনি থাকবেন শোষিতের নোনাচোখের জ্বলন্ত বারুদে, আপনি থাকবেন সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর অকৃত্রিম হাসিতে।
সৈয়দ শামসুল হকের ভাষায় বলতেই হয়,
“এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান ?
যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;
তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-
চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি।”
লেখক: ফাইজুল ইসলাম, আইন বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।