শনিবার | ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | ৬ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | শীতকাল | সন্ধ্যা ৭:০২

শনিবার | ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | ৬ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | শীতকাল | সন্ধ্যা ৭:০২

মৌলানা আজাদঃ অসাম্প্রদায়িক ভারতের শ্বেত গোলাপ

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram
  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৫:১১ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ
  • বিকাল ১৫:৪০ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৭:১৯ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৮:৩৮ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

মাওলানা আবুল কালাম আজাদ উপমহাদেশের খ্যাতিমান এবং শীর্ষস্থানীয় নেতৃবর্গের অন্যতম। ব্রিটিশ দুঃশাসনের কবল থেকে এই উপমহাদেশের নির্যাতিত নিপীড়িত মানবতাকে মুক্ত করতে স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর অবদান ঐতিহাসিকগণ ইতিহাসের সোনালী হরফে অঙ্কিত করে রেখেছেন। তাঁর রীতি নীতি নিয়ে মতবিরোধ করার মত বহু পণ্ডিতের আবির্ভাব ঘটলে আল্লাহ প্রদত্ত তাঁর যোগ্যতার স্বীকৃতি দিতে অমুসলিমরাও বাধ্য হয়েছে। অমুসলিমরাও অবনত শিরে মেনে নিত আজাদের দেওয়া যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য মতামত।

আল হেলাল’ নামে সর্বপ্রথম তিনি উর্দূ ভাষায় একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই পত্রিকার মাধ্যমেই তিনি মূলত রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। এটি শুধু একটি পত্রিকায় ছিল না, ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। কালক্রমে এই পত্রিকা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এই পত্রিকায় তিনি বলকান ও অন্যান্য এলাকায় সংগঠিত মুসলিম নিধনের হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলি জাতির সামনে তুলে ধরেন তখন পাঠক মাত্রেই ক্রোধে ফেটে পড়ে এবং অগ্নিশর্মা হয়ে উঠে। এই পত্রিকার মাধ্যমে সারা দেশ ইংরেজদের প্রতি ঘৃণা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ফলে শাসক গোষ্ঠীর শত্রুতে পরিণত হতে থাকে

আল হেলাল’ সম্পর্কে শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী (রহঃ) বলেন,

“আবুল কালাম আজাদ নামে আমাদের এক যুবক আছে। যার কলমের ক্ষুরধার লেখনী স্বাধীনতা আন্দোলনের এক নব জাগরণ সৃষ্টি করেছে। এটা এমন এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা অনেক বড় বড় রাজনৈতিক দল বা সামাজিক সংগঠনের পক্ষেও সম্ভব হয়নি।”

মৌলানা আজাদ ছিলেন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের প্রতি সদ্য স্বাধীন ভারতের অঙ্গীকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্রতীক। এইভাবে তিনি মুসলিম ভারতের জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রত্যাখ্যানকে মূর্ত করে তোলেন। কিন্তু তিনি জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে তার সমস্ত কংগ্রেস সহকর্মীদের স্পষ্ট ও সৎ সমর্থনের সাথে সেই ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন, বিশেষ করে যখন সাধারণ মুসলমানদের দ্বারা প্রকাশ করা অব্যাহত সন্দেহ এবং নিরাপত্তা বোধের কথা আসে।

নেহেরুর ‘Tryst with Destiny’ বক্তৃতার প্রতিধ্বনি হিসেবে জামা মসজিদের পাদদেশে তার আলোড়ন সৃষ্টিকারী কথাগুলো স্মরণ করে। যে নেহেরু এবং কংগ্রেস তাকে একটি তরুণ জাতির আস্থায় বিনিয়োগ করতে বেছে নিয়েছিল এবং তাকে শিক্ষামন্ত্রী করে ভবিষ্যত প্রজন্মের মন গঠনের জন্য তাকে অর্পণ করেছিল তা সেই দৃষ্টিভঙ্গির উপর জোর দেয় যে নতুন ভারতের জন্ম হয়েছিল।

তিনি খিলাফত আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি ১৯১৯ সালের রাওলাট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি অহিংস সত্যাগ্রহ সম্পর্কে মহাত্মা গান্ধীর মতামতকে সমর্থন করেছিলেন এবং আইন অমান্য আন্দোলনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তিনি স্বরাজ ও স্বদেশী আন্দোলনেরও প্রচার করেন।

১৯২৩ সালে, তিনি ৩৫ বছর বয়সে কংগ্রেস পার্টির সর্বকনিষ্ঠ সভাপতি হন।

তিনি দলের একজন সক্রিয় নেতা ছিলেন এবং সরকার কর্তৃক বহুবার কারাবরণ করেন।

সভাপতি নির্বাচিত হবার পর কংগ্রেস পার্টির সর্বকনিষ্ঠ সভাপতি হিসাবে, আজাদ তিনি এমন কথা বলেছিলেন যে “দেশবিরোধী” হিসাবে আখ্যায়িত হওয়ার ভয়ে কেউ আজ উচ্চারণ করার সাহস করবে না।

সে বলেছিল: “যদি স্বর্গ থেকে এবং কুতুব মিনারের উচ্চতা থেকে একজন দেবদূত নেমে আসে যে ঘোষণা করে যে কংগ্রেস যদি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের নীতি ত্যাগ করে, স্বরাজ ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেওয়া হবে, আমি সেই স্বরাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব। দাবীকৃত খরচের জন্য এটি পরিহার করা স্বরাজকে বিলম্বিত করতে পারে এবং স্বল্প সময়ের জন্য ভারতের ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু স্বাধীনতার মূল্য হিসাবে আমাদের ঐক্য ত্যাগ করা সমগ্র মানবতার জন্য মারাত্মক হবে।”

যদিও আজাদের হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের মিশন শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। তিনি কলকাতায় তার শৃঙ্খলাবাদী পিতা মাওলানা খাইরুদ্দিনের কঠোর নজরে বড় হয়েছিলেন, যিনি হাজার হাজার মুরিদের সাথে একজন বিখ্যাত সুফি পীর ছিলেন কিন্তু তার পিতার পেশা অনুসরণ করেননি।

আজাদ দেশের বৈচিত্র্যময় বাসিন্দাদের সাথে দেশের ঐক্যে বিশ্বাস করতেন। তিনি বলেন, “আমি একজন ভারতীয় হিসেবে গর্বিত। আমি সেই অবিভাজ্য ঐক্যের অংশ যা ভারতীয় জাতীয়তা। আমি এই মহৎ ভবনের জন্য অপরিহার্য এবং আমাকে ছাড়া এই অপূর্ব স্থাপনা অসম্পূর্ণ। আমি একটি অপরিহার্য উপাদান, যা ভারত গড়তে গিয়েছি। আমি কখনই এই দাবিকে আত্মসমর্পণ করতে পারব না।”

তিনি ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও অংশ নিয়েছিলেন যার জন্য তিনি, কংগ্রেসের অন্যান্য নেতাদের সাথে গ্রেফতার হয়েছিলেন।

এম এ জিন্নাহ আজাদের বিদ্বেষী ছিলেন এবং তাকে ‘কংগ্রেস শো বয়’ হিসেবে উল্লেখ করতেন।

তিনি পৃথক সাম্প্রদায়িক নির্বাচনের বিরুদ্ধে ছিলেন এবং বলেছিলেন যে ইসলামেরও ‘ভারতের মাটিতে দাবি’ রয়েছে।

অখন্ড ভারতের একজন কট্টর প্রবক্তা, তিনি বিশ্বাস করতেন যে বিভাজন দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, “বিভাগের রাজনীতিই দুই দেশের মধ্যে বাধা হিসেবে কাজ করবে। পাকিস্তানের পক্ষে ভারতের সমস্ত মুসলমানকে স্থান দেওয়া সম্ভব হবে না, এটি তার আঞ্চলিক ক্ষমতার বাইরে কাজ। অন্যদিকে, হিন্দুদের পক্ষে বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানে থাকা সম্ভব হবে না। তাদের বের করে দেওয়া হবে অথবা নিজেরাই চলে যাবে।”

আজাদ নেহেরু সরকারের অধীনে শিক্ষামন্ত্রী নিযুক্ত হন। শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে তাঁর কার্যকালের অধীনে, বিশ্ববিদ্যালয় অনুদান কমিশন এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

জাতীয় অখণ্ডতার এই চ্যাম্পিয়ন ১৯৫৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি স্ট্রোকের কারণে মারা যান।

মৌলানা আজাদের জন্মবার্ষিকী ভারতে জাতীয় শিক্ষা দিবস হিসেবে পালিত হয়।১৯৯২ সালে তাকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়া হয়।

লেখা: ফাইজুল ইসলাম ফাহিম ( শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram

Leave a Comment

সর্বশেষ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

গণহত্যাকারীদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোন অধিকার নাই;ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ

২৪ এর অভ্যুত্থানে গণহত্যার রক্ত যাদের হাতে লেগে আছে, যারা দীর্ঘ স্বৈরশাসনে বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। এইদেশে কোন নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার তাদের নাই‌। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের চেতনা বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। অনতিবিলম্বে গণবিরোধী বক্তব্যের জন্য দেশবাসীর কাছে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।

নীতিবান ও আদর্শবান ব্যক্তিকে ক্ষমতায় না এনে বারবার আন্দোলন করে ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না;মুফতী ফয়জুল করিম

এম শাহরিয়ার তাজ,রিপোর্টার: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে

প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি না করা ফ্যাসিবাদের অনুসরণ- জাতীয় শিক্ষক ফোরাম

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ের সম্পাদক ও জাতীয় শিক্ষক ফোরাম এর কেন্দ্রীয়

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি না করা ফ্যাসিবাদের অনুসরণ -জাতীয় শিক্ষক ফোরাম

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ের সম্পাদক ও জাতীয় শিক্ষক ফোরাম এর কেন্দ্রীয়

  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৫:১১ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ
  • বিকাল ১৫:৪০ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৭:১৯ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৮:৩৮ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ