মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধিঃ অবৈধ সীমান্ত পারাপারের নিরাপদ রুট হিসাবে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তকে বেছে নিয়েছে মানব চোরাচালানকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা। সীমান্ত রক্ষাকারী ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ ধূর পাচারের নামে অন্যতম ও নিরাপদ সীমান্ত হিসাবে এই সীমান্তকে বেছে নিয়েছে তারা। যার কারণে সারা বাংলাদেশ থেকে নারী পুরুষ এই সীমান্ত দিয়ে পারাপার হয়।
প্রতিদিন একাধিক নারী-পুরুষ এই সীমান্ত দিয়ে পারাপার হচ্ছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়,মহেশপুর উপজেলায় বড় ধরণের একটি মানব চোরাচালানের সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। তারাই নিয়ন্ত্রন করছেন মহেশপুর সীমান্ত।
এদের মধ্যে বেনাপোলের মেহেদী ওরফে মিঠু(৪০), লিটন(৩৫), রাজু(৪০)পুটখালি বেনাপোল,মুক্তার(৩৫),জলুলী গ্রামের বাবুল (৪০),মিঠু(৪০),ইসমাইল(৩০),সাদ্দাম(৩৫), বশির উদ্দিন(৩৫) (৩৫),সামুদ (৩০),ওকিমেল (৪০),মুন্তা (৩৫),আলীম(৩০),হাপী মৃদ্ধে(৩০),মাসুদ(৩০),পাথরা গ্রামের ছালাম(৩৫),বাশার(৩০),পাতিবিলা গ্রামের ইমরান(২৩),রিংকু(২২),সামন্তা ডালভাঙ্গার ইন্তা(৪০), বাগদিরআইটের জাহাঙ্গীর(৩৫), টিটো(৩০), লিটন(৩০), হাদি(৩৫)বাঘাডাঙ্গা সহ শতাধিক ব্যক্তির সংঘ্যবদ্ধ একটি অবৈধ্য মানব চোরাচালান সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঝে মধ্যে ধূরসহ দালালরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আটক হলেও তারা আইনের ফাঁক-ফোঁকড় দিয়ে বেরিয়ে এসে একই কাজে লিপ্ত হয়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ধূর পাচারের এক লাইনম্যান জানায়,এই ব্যবসায় রয়েছে বড় ধরণের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সে কারনে সারাদেশ থেকে আসা নারী পুরুষেরা প্রথমে বেনাপোল লাইন ম্যানরা আমাদের(মহেশপুরের লাইনম্যান) লোকদের সাথে যোগাযোগ করে।
তারা আবার মহেশপুরে যোগাযোগ করে বেনাপোল থেকে যশোরের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আমাদের নাম্বার ও ঠিকানা দিয়ে দেয়। আমরা যশোর অথবা কালিগঞ্জ থেকে রিসিভ করে সিএনজিতে মহেশপুর সীমান্তে নিয়ে আসি। পরে সুবিধা মত সময়ে যে কোন সীমান্ত দিয়ে পার করে দেই। তারা আরও বলেন,জোন হাজিরা হিসাবে ভাড়া-খাওয়া বাদ দিয়ে প্রতিদিন তারা পান ৫০০-৭০০ টাকা।
আর বেনাপোল থেকে সীমান্ত পার হওয়ার আগ পর্যন্ত মাথা পিছু নারী-পুরুষদেরকে গুনতে হয় ১৫-২০ হাজার টাকা। মানবপাচার নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থার প্রতিনিধি আব্দুর রহমান জানান, এই সীমান্তে দালালরা সক্রিয় এবং লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় মানব চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। সরকারি সংস্থাগুলো একযোগে কাজ করলে অনেকটা সফলতা আসবে বলে মনে করি। তিনি আরো বলেন, এই সীমান্তে পাচার হওয়ার সময় নারীরা দালালদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয় যা বন্ধ হওয়া জরুরী। ইতিমধ্যে মহেশপুর থানায় মানবপাচার আইনে একাধিক মামলা হয়েছে। ৫৮বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল শাহীন আজাদ এ বিষয়ে বলেন, সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি অবৈধ পারাপার রুখতে সবসময় টহল জোরদার রেখেছে। দালাল চক্র আটক হলেও আদালত থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় একই কাজ করছে। এই চক্রকে দমন করতে বিজিবি সর্বদা সক্রিয় রয়েছে।
তবে মানব চোরালান যা হয়ে থাকে আটক তার সীমিত। এ বিষয়ে মহেশপুর থানার ওসি সেলিম মিয়া জানান, ধূর পাচারকারী দালাল চক্রকে রুখতে পুলিশ বদ্ধ পরিকর। বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন-২০১৩ এর ৩৪ ধারায় পাচারকারী সহায়তাকারী(দালাল) চক্রের বিরুদ্ধে মামলা রঞ্জু করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৬মাসে অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের সময় বিজিবি’র হাতে ২৫০ জন আটক হয়। এরমধ্যে নারী ৯১জন, পুরুষ ৯৩জন, শিশু ৬৩ জন। এছাড়া মানব চোরাচালানে সহায়তাকারী দালাল চক্রের সদস্য রয়েছে ৩ জন।