রবিবার | ১২ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯ রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি | ২৭ আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | শরৎকাল | রাত ১১:০৯

রবিবার | ১২ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯ রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি | ২৭ আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | শরৎকাল | রাত ১১:০৯

ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহঃ যার কাছে বাংলা ও বাঙালী চির ঋণী

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram
  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ
  • বিকাল ১৫:৫৯ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৭:৪১ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৮:৫৪ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শোনা যায় এমন একটি ভাষার নাম বাংলা । রক্তের বিনিময়ে কেনা এই বাংলা ভাষা কারো দান কিংবা করুণা নয়।

সর্বপ্রথম বাংলা ভাষার পক্ষে যে মনীষী কথা বলেছিলেন,

সে মহাত্মার নাম ড মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্।

এই বরেণ্য শিক্ষাবিদ সর্বপ্রথম যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবী জানিয়েছিলেন।

এই মনীষীকে বলা হত জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া।

১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বশিরহাট মহকুমার পেয়ারা গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতার নাম মফিজউদ্দিন আহমদ। মাতার নাম হুরুন্নেসা। শহীদুল্লাহ নামটি তাঁর মা পছন্দ করে রেখেছিলেন। আকীকা হয়েছিল ‘মুহম্মদ ইব্রাহিম’ নামে। তাঁর মা মনে করলেন শহীদে কারবালার চাঁদে তাঁর ছেলে গর্ভে এসেছিল। কাজেই তাঁর নাম ‘শহীদুল্লাহ’ হলেই ক্ষণজন্মা হবে। পরবর্তীকালে তাঁর মায়ের ধারণা সত্যি বলে পরিগণিত হয়েছিল।

তিনি ছিলেন একজন সত্যিকার জ্ঞানতাপস, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র। একজন জীবন্ত ড মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্’র চেয়ে মৃত ড মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ অনেক বেশি শক্তিশালী ও প্রভাববিস্তারকারী।

বহু ভাষায় পান্ডিত্য অর্জন করায় এই মহান মনিষীকে বহু ভাষাবিদ বলেও আখ্যায়িত করা হয়।

প্রাচীনকাল থেকে বাংলা ভাষাকে একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। মূলত রবীন্দ্র প্রজন্মে বাংলা ভাষা চর্চাকে পূর্ববাংলার অনেক কবিরা জাতে উঠানোর চেষ্টা করলেও কালক্রমে তার অধঃপতন অনিবার্য হয়ে ওঠে।

ব্রিটিশদের পর পাকিস্তানি প্রেতাত্মা যখন বাঙ্গালীর প্রাণের ভাষা বাংলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পয়তারা চালায় তখনই ড মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ ‘র লেখনি বাংলা, বাঙ্গালী জাতিসত্তায়তায় নতুন প্রাণের সঞ্চার করে।

উল্লেখ্য ব্রিটিশ আমলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দিকে এদেশের সর্ব ভারতীয় ভাষা হওয়ার প্রস্তাব করেন। এবং সাথে সাথে এর বিরোধিতা করেন ড মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্। তিনি সেই সাথে এও উল্লেখ করেন বাংলা ভাষা শুধু এদেশে নয় সমগ্র এশিয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ভাষা হওয়ার যোগ্যতা রাখে।

পাকিস্থান সৃষ্টির পূর্ব মূহুর্তে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিয়াউদ্দিন হিন্দির অনুসরণে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়ার প্রস্তাব করেন। আবার প্রতিবাদ করেন জ্ঞানতাপস ড মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্। তিনি বলেন,

“এটি রাজনৈতিক পরাধীনতার নামান্তর হবে। উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা হলে স্বাধিকার, স্বায়ত্তশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণে সরকারের হস্তক্ষেপ হবে। ”

তিনি আরও বলেন,

“মা, ভাষা ও মাতৃভূমি জগতে সকল মানুষের কাছে পবিত্র। ”

রক্তাক্ত চক্ষুর উপর ড মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্’র এ আপোষহীনতা বাঙালীর ইতিহাসে এক মাইলফলক।

১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটায় ঢাকা কলেজের পার্শ্ববর্তী নুপুর ভিলায় আয়োজিত, “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা ও উর্দু ” শীর্ষক সেমিনারে তিনি সভাপতিত্ব করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জোরালো দাবী জানান।

বাংলা হরফকে আরবি ও উর্দুতে লেখার ষড়যন্ত্র বহুদিনের। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ খুব সূক্ষ্মভাবে এ উদ্যোগকে প্রতিহত করেন। তিনি বলেন,

“এতে পূর্ববাংলায় জ্ঞানচর্চার স্রোত স্থবির হয়ে পড়বে এবং সেই সাথে এদেশের ভিত্তিমূল ধ্বংস হয়ে যাবে। ”

গণতন্ত্রের কথা বললে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতেই এদেশের ভাষা হবে বাংলা। তার কাছে ভাষার ক্ষেত্রে ধর্মীয় গোড়ামির কোন স্থান ছিল না।

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বাঙালী রাষ্ট্রসত্তার যুক্তিনিষ্ঠ বিকাশের লক্ষ্যে এবং বাঙালীর জাতিসত্তার মূলে যে বাংলা ভাষা তার মযার্দা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে একনিষ্ঠ একজন রাজনৈতিক কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ইতিহাসের কোন কোন পর্যায়ে শাসক শ্রেণী যে বিশেষ আদেশ বলে জনগণের ভাষার বদলে অভিজাত শ্রেণীর ভাষা জোর করে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন, সেই চেষ্টা প্রতিহত করার দ্রোহী বুদ্ধিদীপ্ত প্রত্যয়ে যারা এগিয়ে আসেন ড. শহীদুল্লাহ্ তাঁদের মধ্যে একজন। বলতে গেলে অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে ভাষা আন্দোলনে দ্রোহী বুদ্ধিজীবীর ভূমিকাই পালন করেছেন তিনি।

২১ শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২,

তিনি হয়ত মিছিলে অংশগ্রহণ করেন নি, কিন্ত আগাগোড়া এই মহাত্মা ভাষা আন্দোলনেরর পথিকৃৎ। তিনি রফিক, শফিক, জব্বার প্রমুখের উপর ক্ষমতাসীনদের এ বর্বর হামলার প্রতিবাদ জানান এবং হতাহতদের সাথে সাথে ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রফেসর আয়ারের সাথে দেখতে যান।

১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক গঠিত বাংলা একাডেমির পঞ্জিকার তারিখ বিন্যাস কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন।

বাংলা সন যেহেতু হিজরি সালের পিছন পিছন এগিয়ে যায়, তাই চন্দ্র ও সৌর বছরের মাঝে সময়ের একটা পার্থক্য থেকেই যায়। এই সমস্যা নিরসনের জন্য ১৯৬৬ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী বাংলা একাডেমীর তত্ত্বাবধায়নে ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র নেতৃত্বে বাংলা সনে একটু পরিবর্তন আনা হয়। তাঁর নেতৃত্বে বাংলা পঞ্জিকা একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত রূপ পায়।

পরিবর্তন অনুযায়ী বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মাস কে ৩১ দিন এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ৩০ দিনের হিসাবে গননা করা শুরু হয়। এছাড়া চার বছর পর পর ফাল্গুন মাসকে এক দিন বাড়িয়ে ধরা হয় শুধুমাত্র লিপ-ইয়ারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য।

বহু ভাষাবিদ, পণ্ডিত ও প্রাচ্যের অন্যতম সেরা ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান। জাতিসত্তা সম্পর্কে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র স্মরণীয় উক্তি- ‘আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙ্গালি।’

১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পাশে সমাহিত করা হয়। ভাষাক্ষেত্রে তার অমর অবদানকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ঐবছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ‘ঢাকা হলের’ নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘শহীদুল্লাহ হল’। ১৯৮০ সালে তাকে মরণোত্তর বাংলাদেশের স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়।

তিনি মোট ২১টি ভাষা জানতেন, তারমধ্যে রয়েছে- ইংরেজি, ফার্সি, সংস্কৃত, জার্মান, আরবি, উর্দু, হিব্রু, গ্রিক, ল্যাটিন, পান্জাবি, গুজরাটি, মারাঠি, তামিল, সিংহল ইত্যাদি।

ড মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ বাংলা ভাষার নিভৃতচারী গবেষকদের একজন। তিনি চির অম্লান থাকুন সকল বাঙালী ও বাংলাভাষীদের মণিকোঠায়।

তথ্যসূত্রঃ

বদরুদ্দীন ওমর

বাংলা ভাষার আধুনিকায়নের ইতিহাস

বাংলা ও ড মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্, বাংলা একাডেমি

লেখক: ফাইজুল ইসলাম (আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)

 

এন.এইচ/

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram

Leave a Comment

সর্বশেষ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

চট্টগ্রামে ঝটিকা মিছিলের নেপথ্যে কুতুবদিয়ার সিকদার পরিবার—রাহাত সিকদারের নাম ঘুরছে আলোচনায়

জামাল উদ্দিন,কতুবদিয়া(চট্টগ্রাম) – ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম—বড় শহরের ব্যস্ত সড়কে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক ঝটিকা ও মশাল মিছিল করে আলোচনায় এসেছে ছাত্রলীগের নামধারী একটি অংশ। তবে কার নির্দেশে, কার অর্থায়নে এই কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে, তা এখনও প্রশাসনের কাছে অজানা। অভিযোগের তীর ঘুরে

নারী শিক্ষিত ও অভিজ্ঞ হলে সমাজ উন্নয়নের উচ্চ শিখরে উঠবে –অভিনেত্রী দিলারা জামান

১৩ সেপ্টেম্বর’২৫ শনিবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরার লা বাম্বা রেস্টুরেন্ট অডিটোরিয়ামে নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন “নয়লি গ্রুপ”

ধরাছোঁয়ার বাহিরে কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মুন্না,কর্মতৎপর নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রমে”

বিশেষ প্রতিনিধি,চট্টগ্রাম -বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের

দেশের বর্তমান স্বাস্থ্যখাত মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে- আফাজ উদ্দিন

১ সেপ্টেম্বর’২৫ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর উত্তরা ১৪ নং সেক্টরে দোয়া

হালিশহরে তানযীমুল উম্মাহ গার্লস মাদরাসায় বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: তানযীমুল উম্মাহ গার্লস মাদরাসা, হালিশহর শাখার উদ্যোগে স্নিগ্ধ ও মনোরম পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে

  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ
  • বিকাল ১৫:৫৯ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৭:৪১ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৮:৫৪ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ