“সেই ধন্য নরকুলে,
লোকে যারে নাহি ভুলে। ”
শ্রী মধুসূদন এর এই কথাটি আজকে সবচেয়ে বেশি ভাবায় বাঙালীকে। বাংলার হাজার বছরের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য যে ত্যাগ তিনি করেছেন তার ফলশ্রুতিতে মানুষ তাকে আজীবন মনে রাখবে।
মুজিব একটি ছন্নছাড়া জাতিকে স্বাধীনত এনে দিয়েছিলেন। রেসকোর্স, কলরেডী ও জনতার সংমিশ্রণে প্রিয় মুজিব অসাধ্য সাধন করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
তিনি ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকেটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেম্বলীর সদস্য নির্বাচিত হন।
রাজনীতির মাঠে বার বার পরীক্ষা দেয়া মুজিব জেলখানাকে আপন করে নিয়েছিলেন প্রায় ৪৬৮৫ দিন। মুজিব শুধু আমাদের নয় সারা পৃথিবীর সকল নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধি।
মুজিবকে বলা হয় রাজনীতির কবি, ছন্দবদ্ধ সংগ্রামে ত্যাগকে জীবনের পাথেয় করেছিলেন পিতা মুজিব।
১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চের সূর্য বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছিল,করেছিল বিশ্বের বুকে অবাক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি। মুজিব বিশ্বের বিস্ময়, সারা পৃথিবীর অহংকার। মুজিব কবিতার পাতার মত ছন্দবদ্ধ করে বাংলাদেশকে সাজিয়েছিলেন,ভেবেছিলেন এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বেন।
রেসকোর্স থেকে টেকনাফ, টেকনাফ থেকে রুপসা,রুপসা থেকে পাথুরিয়া শেখ মুজিব বাঙালী সংস্কৃতির পর্যটক। তিনি ঐতিহ্যকে ধারণ করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, “বাবারা দেশটা সকলের। ঘুষের টাকা কবরে নিতে পারবা না, এদেশ শ্রমজীবীদের ঘামের মাধ্যমে এ পর্যায়ে এসেছে। ”
নির্মলেন্দু গুণ বলেন,
“রেসকোর্স থেকে হেঁটে যেতে যেতে,
একগুঁচ্ছ পলাশ আমাকে বলে-
আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।”
তিনি বলেছেন,
“পৃথিবী আজ দুই ভাগে বিভক্ত,
শাসক আর শোষিত, আমি শোষিতের পক্ষে। ”
মিরনওয়ালী কারাগারে থাকার সময় এক জওয়ান মুজিবের গতিবিধি লক্ষ করে বলেন,”এই মানুষটি বাংলাদেশের কথা যে কয়বার জিজ্ঞেস করে, পরিবারের মানুষের প্রতিও এত বার খোঁজ নেয় না৷”
মুজিবের মত বাংলাকে ধারণ কেউ করতে পারেন নি। টিক্কা খান এ পর্যন্ত বলেছিলেন, “We Can’t diminish Him,a large number of people own Muzib at a time.”
এই সেই মুজিব, রক্তচক্ষু করে সেদিন বলেছিলেন,
“রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব।”
জীবনের চেয়ে যখন আত্নপরিচয়কে ভালবাসে তখন মানুষ এই কথা বলে।
একজন দক্ষ নেতা হিশেবে বিরোধীদের বলেছিলেন,
“তোমরা আমার ভাই,তোমরা ব্যারাকে থাকো।”
একজন জাত সেনাপতি কোনদিন যুদ্ধ চায় না। তিনিও সেটা চেয়েছিলেন , কিন্ত বর্বর পাকিস্তান শেখ মুজিবকে বুঝতে চায় নি।
ববর্তমান পৃথিবীর দুইটা ব্যর্থ রাষ্ট্র, সোমালিয়া ও পাকিস্তান। শেখ মুজিব ক্ষমতার জন্য লড়াই করে নি,তিনি যদি লড়াই করতেন তার চেতে যোগ্য নেতা কেউ ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিনের সিংহাসন উড়িয়ে দেয়ার জন্য মুজিব একাই একশো ছিলেন। কিন্ত তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ নন।
মুজিব জাত নেতা। সোহরাওয়ার্দী থেকে জিন্নাহ,ইস্কান্দার মির্জা,আইয়ুব খান সবাই এক বাক্যে স্বীকার করতো। তার দক্ষতায় পেশোয়ার,করাচিতেও মুজিব ছিল অনন্য জনপ্রিয়
কিন্ত বাঙালী মুজিবকে চিনেনি। দ্যা সান পত্রিকা শেখ মুজিবের মৃত্যুদিনে লিখেছিল, “The professor of Politics:End of an Era ”
তর্জনীর আহ্বানে তিনি একটি জাতিকে একত্রিত করেছিলেন, শেখ মুজিবই জামাত দোসরদের সাধারণ ক্ষমা করেছিলেন। এদেশের মুক্তির সনদ ৬ দফা এই মুজিবের দেয়া। মুজিব ঝড়ে পরা কোন পাতা নয়,তিনি আগুন থেকে জন্ম নেয়া ফিনিক্স পাখি।
প্রত্যেক সুন্দরের শুরুটা পবিত্র হয়। আজ শেখ মুজিবের ১০২ তম জন্মবার্ষিকী। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন।
আসুন মুজিবকে ধারণ করি।
“ফাঁসির মঞ্চে যাবার সময়ও আমি বলে যাব আমি বাঙালী, আমি মুসলমান, আমার ভাষা বাংলা,আমার দেশ বাংলাদেশ। ”
©ফাইজুল ইসলাম