গীবত এমন একটি গুনাহ যা বর্তমানে একটি মহামারি আকার ধারণ করেছে বর্তমানে ছোট-বড়, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, পীর-মুরশিদ, ছাত্র-ওস্তাদ, আলেম-আবেদ কেউ এ গুনাহ থেকে বেচে থাকতে পারে না। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় পক্ষে বিপক্ষে বলতে গিয়ে গীবত করে ফেলে,কেউ আবার গীবতের পরিণতি সম্পর্কে জানা থাকা সত্ত্বেও গীবত করে, আবার কেউ বলতেই পরবেনা এটা যে গীবত হচ্ছে। কারো আবার গীবতের সংজ্ঞা,অপরাধ ও পরিণতি সম্পর্কে জানা নেই। কেউ আবার সাওয়াবের নিয়তে গীবত করে বসে, মনে করে এটা উনার দায়িত্ব!
গীবতের পরিচয়- ব্যক্তির সামনে যে কথা বলতে ভয় হয় অথবা সামনে বললে ব্যক্তি মনে কষ্ট পাবে এমন কথা তার অগোচরে বলাই গীবত।
গীবতের প্রকার
গীবত প্রথমত দু প্রকার। ১.জিহ্বা দ্বারা গীবত= কারো দোষ ত্রুটি মুখে আলোচনা করলে জিহ্বা দ্বারা গীবত করা হয়। যেমন আপনি বললেন অমুক ব্যক্তি কালো,খাটো বা লম্বা,বাচাল ইত্যাদি। ২.অঙ্গভঙ্গি দ্বারা গীবত। যেমন, কেউ খাটো,মাজুর,কালো টেরা এ দোষগুলো অঙ্গভঙ্গি দিয়ে কাউকে বুঝানো অঙ্গভঙ্গির গীবত।
আরো এক প্রকারের গীবত আছে তা হলো আন্তরিক গীবত যেমন, মনে মনে কাউকে গালি দেয়া,পরনিন্দা করা,হিংসা করা, খারাপ ধারণা করা। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন মুসলমানদের জান-মাল ও তার প্রতি কুধারনা করা হারাম।
গীবতের গুনাহ
গীবতকারী ও শ্রবণকারী উভয়ই গুনাহগার এটা হলো সুদের গুনাহর মতো যে গীবত করে ও যে শুনে উভয়ের গুনাহ হয় গীবত করাও হারাম গীবত শুনাও হারাম। শ্রবণকারী ব্যক্তি যদি অন্তরে গীবত সম্পর্কে ঘৃণা পোষণ করে এবং গীবতকারীকে বাধা প্রদান করে তবে তার কোন অপরাধ নেই।
গীবতের হুকুম
সর্বাবস্থায় গীবত করা হারাম সেটা যে নিয়তেই করা হোক। তবে জালেমের গীবত করা জায়েজ।
গীবতের পরিণতি
গীবতকারী ব্যক্তি গীবত করার কারণে তার নেক ঐ ব্যক্তির আমলনামায় চলে যায় এরকম একসময় গীবতকারীর আমলের পাল্লা হালকা এবং গুনার পাল্লা ভারী হয়ে যায় ফলে সে জাহান্নামের আসামী হয়ে যায়। আর যে শুনেও বাধা প্রদান করলো না অন্তরেও ঘৃণা করলো না তার পরিণতিও জাহান্নাম।
কার গীবত হয় আর কার হয় না
আপনি যার কাছে বলেন সে ব্যক্তি চিনে এরকম যে কারো সমালোচনা করলে গীবত হয়। নাম না নিয়ে বললে যদি শ্রবণকারী ব্যক্তি আকার ইঙ্গিতে চিনতে পারে তাও গীবত হয়ে যাবে। তবে আপনি যদি নাম না নেয়া হয় এবং আকার ইঙ্গিতেও চিনতে পারে না এমন ব্যক্তির আলোচনা গীবত হবে না।
গীবত থেকে বাচার উপায়
গীবত করার ইচ্ছে মানুষের অন্তরে ভীষণ পীড়া সযত্নে এর প্রতিষেধক ব্যবহার করা জরুরী। নিচে ৪ টি উপায় বর্ণনা করা হলো- ১.কাউকে গীবত করতে দেখলে তাকে স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করা। ২.অন্তরে প্রচুর পরিমানে গীবত ও গীবতকারীর প্রতি ঘৃণা রাখা। ৩.গীবত সম্পর্কিত কোরআনের আয়াত ও হাদীস ভালোভাবে অধ্যায়ন করে আমল করা। ৪. নিজে গীবত না করা।
গীবত সম্পর্কে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি গীবত করলো সে যেন তার মৃত ভাইয়ের গোস্ত ভক্ষণ করলো। একবার হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত ওমর( রা.) হাটতে হাটতে এক ব্যক্তির গীবত করলেন হাটা শেষে রুটি ভক্ষণ করার জন্য রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গোস্ত চাইলে তিনি বলেন তোমরা তো কিছুক্ষণ আগে পচা ও দূর্গন্ধ যুক্ত গোস্ত ভক্ষণ করেছো।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে গীবতের মারাত্মক রোগ থেকে বেচে থাকার তাওফিক দান করুক।
মুহাম্মাদ বেলাল হোসাইন
শিক্ষার্থী, নোয়াখালী ইসলামীয়া কামিল মাদরাসা
এন.এইচ/