ডেস্ক রিপোর্টঃ বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৮-৯ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয় আর সংগৃহীত হয় ৬-৬ দশমিক ৫ লাখ ব্যাগ রক্ত। বছরে প্রায় তিন লাখ ব্যাগ রক্তের ঘাটতি থাকে। সংগৃহীত রক্তের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের থেকে।
হিমোগ্লোবিনের অভাব অথবা থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণে অনেক মানুষ রক্তশুন্যতায় ভোগে। তখন তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হয় অন্যের রক্ত। এই রক্ত যেহেতু ক্রয় করা যায়না, সেহেতু আপনার আমার রক্তদানের উপরই নির্ভর করে তাদের বেঁচে থাকতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে বা ক্লিনিকে বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসায় প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এখনও বাংলাদেশে রক্তের অভাবে অনেক রোগী মারা যায়। তবে আশার কথা এখন তরুনরা ও সচেতন অনেকেই রক্তদান করতে এগিয়ে আসছে।
রক্তদানের বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী যেকোন সুস্থ মানুষ যাদের ওজন ৪৫ কেজির বেশি তারা প্রতি চার মাস পর পর রক্তদান করতে পারেন। রক্তদান না করলেও চার মাস পর পর মানবদেহে নতুন রক্ত তৈরি হয় এবং আগের রক্তকনিকাগুলো এমনিতেই মারা যায়। রক্তদান করলে শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কনিকা তৈরির জন্য শক্তি পায়। রক্তদানে শরীরে লোহিত কনিকাগুলোর কর্মচাঞ্চল্য বেড়ে যায়।
নিয়মিত রক্তদানে রক্তের কোলেষ্টেরলের উপস্থিতি কমাতেও সাহায্য করে। স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে মানুষ বিনামূল্যে জানতে পারে নিজের শরীরে হেপাটাইটিসি-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া এবং এইচআইভি (এইডস) এর মতো জটিল কোনো রোগ রয়েছে কিনা। সবচেয়ে বড় কথা হলো, রক্তদানের মাধ্যমে একজন মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচানোর মতো কাজে শরিক হতে পেরে নিজের মানসিক তৃপ্তি মেলে। বর্তমানে প্রচার প্রচারণা ও সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে আমাদের রক্ত দাতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। নিমতলীর দূর্ঘটনা অথবা সাভার ট্রাজেডির সময়ও আমরা দেখেছি মানুষ লাইন ধরে রক্তদান করছে। এতে রক্ষা পেয়েছে অসংখ্য মানুষের প্রাণ।
আমাদের দেশে এখন প্রায় ১৪ লাখ মানুষ অন্ধত্ব বরণ করে আছে এবং বছরে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ কর্নিয়াজনিত দৃষ্টি সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশে কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব দূর করতে আগামী ১০ বছরে প্রতি বছরে ৩৬ হাজার কর্নিয়া সংগ্রহ করা প্রয়োজন, যা মৃতের মাত্র ২ শতাংশ।
মরণোত্তর চক্ষুদান হলো মৃত্যুর পর কর্নিয়া দান করার জন্য জীবিত অবস্থায় অঙ্গীকার করা। মৃতের চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করে অন্যজনের চোখে লাগানোর ইচ্ছা ও সম্মতিই ‘মরণোত্তর চক্ষুদান’ নামে পরিচিত।
আর.আই/