সিরিয়া এবং তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। তুরস্কে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে যে সিরিয়ায় এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
দুই দেশেরই উদ্ধারকারী দলগুলো এখন বিস্তীর্ণ এলাকায় উদ্ধার কাজ গুটিয়ে আনছে। কারণ জীবিত কাউকে উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে।
জাতিসঙ্ঘ বলছে যে, গত সপ্তাহের মারাত্মক ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হওয়ার পর দেশটিতে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে আরও দুটি সীমান্ত পারাপার খুলতে রাজি হয়েছে সিরিয়ার সরকার।
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ‘একটি বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। আমরা এখন পর্যন্ত একটি সীমান্ত পারাপার ব্যবহার করছি।’
অনেক সিরিয় নাগরিক তাদের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে সহায়তা না পৌঁছানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হওয়ার জন্য দেশটির ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সাহায্য গোষ্ঠীগুলো বলছে, আসাদ সরকারের অব্যবস্থাপনা এবং দেশের সব এলাকায় উদ্ধার কাজে সংযুক্ত না হওয়াটাই মূল প্রতিবন্ধকতা।
সোমবার দামেস্কে প্রেসিডেন্ট আসাদের সাথে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর জাতিসঙ্ঘ নতুন দুটি সীমান্ত পারাপার খুলে দেয়ার এই ঘোষণা দিয়েছে।
এগুলো হচ্ছে তুরস্কের সীমান্তের সাথে থাকা বাব আল-সালাম এবং আল রাই সীমান্ত পারাপার।
এতে বলা হয়েছে, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় সীমান্ত পারাপার প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য খোলা থাকবে।
বিবিসি রেডিও ফোরের ওয়ার্ল্ড টুনাইট প্রোগ্রামকে গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেছেন, ‘খুব শিগগিরই আমরা অন্য দুটি পারাপার ব্যবহার করব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এটি ব্যবহার করতে হবে ততক্ষণ পর্যন্ত চুক্তিটি স্থায়ী হবে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি ব্যবহার করা শুরু করব এবং আমি এটি ছাড়া আর কোনো কিছুই ভাবতে চাই না।’
দুজারিক আরো বলেন, ‘আমি শুধু অনুমান করতে চাই যে, মানুষ এই সংঘর্ষে যে পক্ষকেই সমর্থন করুক না কেন এখন তারা রাজনীতিকে সরিয়ে রাখবে।’
তবে কবে নাগাদ দুটি সীমান্ত পারাপার চালু হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
তবে দুজারিক সিরিয়ার পারাপারগুলো খোলার অনুমতির জন্য বিলম্ব করার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারি যে জাতিসঙ্ঘেন সাথে অধিভুক্ত নয় এমন অন্যান্য সাহায্য সংস্থাগুলো এই সীমান্ত ক্রসিংগুলো আগে থেকেই ব্যবহার করছে। আমাদের নির্দিষ্ট পরিধির মধ্যে কাজ করতে হয়, এটি জাতিসঙ্ঘের বৈশিষ্ট্য।’
প্রেসিডেন্ট আসাদ এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।
ভূমিকম্পের পর প্রথম কয়েক দিনে সিরিয়ার সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কিছু ত্রাণ সরবরাহ পৌঁছেছিল।
মূলত রাশিয়া, ইরান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো বন্ধু রাষ্ট্রগুলো থেকে এসব সহায়তা আসে।
কিন্তু সিরিয়ার বিধ্বস্ত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো কার্যত বিচ্ছিন্ন থেকে গেছে।
এর কারণ এই অংশগুলোতে আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্য শুধুমাত্র তুরস্ক হয়ে যাওয়া একটি সীমান্ত পারাপার ব্যবহার করে পৌঁছাতে পারে। অথবা সিরিয়ার সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর মধ্য দিয়ে সেগুলোকে পৌঁছাতে পারে।
সূত্র : বিবিসি