সৈয়ব আহমেদ সিয়াম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়:
মঙ্গলবার (১২ মার্চ ২০২৪) সন্ধ্যা ৬ টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শহিদ মিনার চত্বরে শাবিপ্রবি ও নোবিপ্রবিতে ইফতার পার্টিতে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে গণ ইফতার কর্মসূচি আয়োজিত হয়।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচির আহবায়ক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নিয়ামত উল্লাহ ফারাবী বলেন, “ইফতারকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো। রবিবার অক্সোফোর্ড ইউনিভার্সিটি তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে পোস্ট দিয়েছে। সেখানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইফতার পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। এবছর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টি করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ইফতার আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য। ইফতার মাহফিল আমাদের সম্প্রীতির বন্ধন শেখায়। সাস্ট এবং নোবিপ্রবির উচিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া। সারাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ইফতার অনুষ্ঠান পালনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ গণ ইফতার কর্মসূচির আয়োজন করেছি।”
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মঈন উদ্দিন চিশতী বলেন, “ত্যাগ ও সংযমের অমিয় বার্তা নিয়ে এলো মুসলিমজাহানের আত্মশুদ্ধির মাস পবিত্র মাহে রমজান। দিনব্যাপী পানাহার ও পাপাচারমুক্ত থাকার মাধ্যমে মহান রবের সন্তুষ্টি, নৈকট্য লাভ এবং পারস্পরিক ভাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার অন্যতম অনুষঙ্গ পবিত্র মাহে রমজান। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায় রমজানে ইফতারকে কেন্দ্র করে তৈরী হয় সামাজিক উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, সিনিয়র-জুনিয়রের দূরত্ব ভুলে আনন্দঘন পরিবেশে আয়োজিত হয় ইফতার পার্টি। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, আঞ্চলিক সংগঠন প্রায় প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা স্থানে ইফতার কার্যক্রমের আয়োজন করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ইফতার কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টি আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আমি এহেন সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধীতা ও ধিক্কার জ্ঞাপন করছি। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আমাদের এই গণ-ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।”
গণ-ইফতারে অংশগ্রহণকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইসতিয়াক হোসেন মজুমদার বলেন “বাংলাদেশ ৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশ, যেখানকার অধিবাসী মুসলিমদের করের টাকায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনসহ যাবতীয় প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহ হয়। অথচ কতিপয় দ্বি-চারী চরিত্রের অধিকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিবর্গ ঘটা করে পাশ্চাত্য বিভিন্ন সংস্কৃতির অনুষ্ঠান পালনে সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং প্রণোদনার ব্যস্তবায়ন করতে পারলেও মুসলিমদের পবিত্র মাস রমাদানে ইফতার পার্টি করার ক্ষেত্রে তারা বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। যা তাদের নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অসাম্প্রদায়িকতার বুলি আওড়ানো এই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাই হয়ে উঠেন ইসলাম এবং মুসলিমদের সাথে সাম্প্রদায়িক। আমি শাবিপ্রবি ও নোবিপ্রবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তাদের গৃহীত সিদ্ধান্ত হতে ফিরে আসার জন্য জোর দাবি জানাই।”
গণ ইফতার আয়োজনে ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ এবং ক্যাম্পাস ও দেশের সার্বিক সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করা হয়েছে।