মোকলেছুর রহমান, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:
হাতের আঙুলের অস্ত্রোপচার করার সময় কুড়িগ্রামের শিশু মারুফা জাহান মাইশার (৫) মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্তকাজ শুরু করেছে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) আবেদনের প্রেক্ষিতে মরদেহ কবর থেকে তোলার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
তদন্ত কর্মকর্তা ও ঢাকার রূপনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নয়ন দাস এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নয়ন দাস জানান, আদালতের আদেশের কপি পাওয়ার পর ময়না তদন্তের স্বার্থে কবর থেকে মাইশার মরদেহ তোলার জন্য তিনি কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে আবেদন করবেন তিনি।
সম্মতি দিলে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সোমবারই মাইশার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে মর্গে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে মাইশার মরদেহের ময়না তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘মাইশার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়না তদন্ত প্রয়োজন।
তবে আমরা অন্যান্য দিকও তদন্তের আওতায় রেখেছি। মাইশার মৃত্যুর পেছনে চিকিৎসকদের অবহেলা ছিল কি না, তা-ও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
যে হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল, সেটি অস্ত্রোপচারের জন্য উপযুক্ত ছিল কি না, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের কার কতটুকু দায় ছিল, তা-ও বিবেচনায় নিয়ে সঠিকভাবে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান এই তদন্ত কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, শিশু মাইশার বাড়ি কুড়িগ্রাম সদরের পৌর এলাকার ভেলাকোপা ব্যাপারী পাড়া গ্রামে।
সাড়ে চার বছর আগে মাত্র ৯ মাস বয়সে চুলার আগুনে মাইশার ডান হাতের আঙুল পুড়ে কুঁকড়ে যায়।
গত ৩০ নভেম্বর ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে মাইশার আগুনে পোড়া হাতের আঙুলের অস্ত্রোপচার করার সময় শিশুটির মৃত্যু হয়।
পরে সেদিনই শিশুটির মরদেহ নিয়ে কুড়িগ্রামে ফিরে আসেন তার বাবা-মা।
দাফনের আগে শিশু মাইশার গোসল করানো নারীরা দেখতে পান, মাইশার নাভির নিচে পেটজুড়ে কেটে সেলাই করা।
এ ঘটনা প্রকাশ হলে এলাকায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়। শিশুটির পরিবারের দাবি, হাতের অস্ত্রোপচার করার সময় তাদের মেয়ের পেট কেন কাটা হয়েছে, তা তারা জানেন না।
এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানায় শিশুটির পরিবার ও এলাকাবাসী।
পরে এ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতর আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়। হাসপাতালটি নিবন্ধন ছাড়াই চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিল বলেও জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
পরে ৫ ডিসেম্বর মাইশার বাবা মোজাফফর হোসেন বাদী হয়ে অস্ত্রোপচার আয়োজনকারী চিকিৎসক ডা. আহসান হাবীব, অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক ডা. শরিফুল ইসলাম ও এনেসথেশিয়ার চিকিৎসক ডা. রনির নাম উল্লেখ করে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিরপুরের রূপনগর থানায় মামলা করেন।
তবে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. আহসান হাবীব দাবি করেন, তিনি অপারেশন করেননি। রূপনগরের আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
মাইশার মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা। তার হাতের কাটা অংশে চামড়া জোড়া দিতেই পেটের নিচের অংশ থেকে চামড়া কেটে নিয়ে সেলাই করা হয়েছিল। এখানে অন্য কোনও কারণ নেই। অ্যানেসথেশিয়ার কারণে মাইশার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
আর.আই/