চুয়াডাঙ্গায় হত্যার উদ্দেশ্যে সাংবাদিক সোহেল রানা ডালিমের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৬ আগস্ট) রাত সোয়া ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের ইমারজেন্সি সড়কে অবস্থিত আব্দুল্লাহ সিটি শপিং কমপ্লেক্সের সামনে প্রথম দফা ও চুয়াডাঙ্গা সদর হসাপতালের জরুরি বিভাগে দ্বিতীয় দফা এ হামলার ঘটনা ঘটে। আব্দুল্লাহ সিটি কমপ্লেক্সের সামনে প্রথম দফায় গুরুতর জখম হয়ে ডালিম সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে যান। পরে সেখানে রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ওপর আবারো হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা উপস্থিত হয়ে শক্ত অবস্থান নিলে কঠোর পুলিশি প্রহরায় জরুরি বিভাগে ডালিমের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়। পরে সেখান থেকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রাজু আহমেদ ওরফে কানা রাজুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় কানা রাজুর সহযোগীরা কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
হামলায় গুরুতর আহত সাংবাদিক ডালিম চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সিঅ্যান্ডবিপাড়ার আব্দুল করিমের ছেলে ও দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক এবং ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।
আটক রাজু আহমেদ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক স্কুলবিষয়ক সম্পাদক ও চুয়াডাঙ্গা শহরের ইমারজেন্সি সড়কের বাসিন্দা।
জানা যায়, সোহেল রানা গতকাল সোমবার রাত ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা অ্যাকাডেমি মোড় থেকে মোটরসাইকেলযোগে ইমারজেন্সি সড়ক হয়ে সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রধান কার্যালয়ে আসছিলেন। এমন সময় সামনে থাকা ছাত্রলীগ নেতা রাজুর মোটরসাইকেলটি হঠাৎ ব্রেক কষে। তখন ছাত্রলীগ নেতা রাজুর মোটরসাইকেলের সাথে তার মোটরসাইকেলের আচমকা ধাক্কা লাগে। আর এতেই ক্ষেপে যান রাজু। সাথে সাথেই রাজু ও সহযোগী মোটরসাইকেল চালক ডালিমের মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নিয়ে গালিগালাজ করতে করতে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে সেখানে রাজুর আরো কয়েকজন সহযোগী উপস্থিত হয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাংবাদিক ডালিমকে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। এসময় ডালিম গুরুতর জখম অবস্থায় ইমারজেন্সি রোডে ধরে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একটি ইজিবাইক পেয়ে তা নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন এবং জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেয়া শুরু করেন।
এ সময় তাকে ধাওয়া করতে করতে বিভাগে প্রবেশ করে ছাত্রলীগ নেতা কানা রাজু ও তার সহযোগীরা। সেখানে চিকিৎসাধীন ডালিমের ওপর আবারো হামলা চালায়। পরে জরুরি বিভাগে ডালিমকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে হসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে অবজারভেশনে রাখা হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে সদর থানার ওসি আবু জিহাদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টীম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রাজু আহমেদ ওরফে কানা রাজুকে আটক করলেও সেখান থেকে কৌশলে সটকে পড়ে কানা রাজুর সহযোগীরা। পরে কড়া পুলিশি প্রহরায় সাংবাদিক ডালিমের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় ডালিমকে সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শাকিল আরসালান ও হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. এহসানূল হক তন্ময় বলেন, ‘সাংবাদিক ডালিমের পিঠ, হাত, পেট ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো কোনো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সবগুলো আঘাতকেই মেডিক্যাল ভাষায় সিভিআর (মারাত্মক) ইনজুরি বলে। তার শরীরে দুইশতাধিক সেলায় দেয়া হয়েছে। জরুরি বিভাগ থেকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। অবস্থা অবনতি হলে যে কোনো সময় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হতে পারে।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জানিফ বলেন, ‘সাংবাদিকের ওপর যে হামলা হয়েছে এটা ন্যাক্কারজনক। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেও মানুষ নিরাপদ নয়। হামলাকারীরা ছাত্রলীগের সাথে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রধন সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন বলেন, ‘একজন সাংবাদিকে এমন নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা মেনে নেয়ার মত নয়। আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য আন্দলোনে যাব। যতক্ষণ না দোষীরা আইনের আওতায় আসছে আমরা থেমে থাকবো না।’
চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার আলামিন বলেন, ‘হত্যার উদ্দেশেই এই হামলা করা হয়েছিল। হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও কুপিয়ে জখম করা আসলেই ন্যাক্কারজনক। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’
এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক ডালিমকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ঘাতকদের মূলহোতা ছাত্রলীগের সাবেক স্কুলবিষয়ক সম্পাদক রাজুকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সাথে জড়িত আরো কয়েকটি নাম পাওয়া গেছে। ঘাতকদের আটকের জন্য পুলিশ অভিযান অব্যহত রেখেছে। এ ঘটনায় আহত ডালিমের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
সূত্র: নয়া দিগন্ত