শনিবার | ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ রজব, ১৪৪৭ হিজরি | ১২ পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | শীতকাল | রাত ১০:২১

শনিবার | ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ রজব, ১৪৪৭ হিজরি | ১২ পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | শীতকাল | রাত ১০:২১

‘বৈশ্বিকক্ষেত্রে সংকট থাকলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো স্থিতিশীল’

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram
  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৫:১২ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১২:০২ অপরাহ্ণ
  • বিকাল ১৫:৪২ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৭:২২ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৮:৪১ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

রাবি প্রতিনিধি: বিশ্বব্যাপী করোনা অতিমারি শেষ হতে না হতেই শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই দুই অনাকাক্ষিত ও অনভিপ্রোত ঘটনা সংকটের মুখে ফেলেছে বিশ্ব অর্থনীতিকে, প্রায় সকল দেশেই দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি, বেড়েছে আমাদানি ও ভোগ্য পণ্যের দাম। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর কিছুটা প্রভাব বাড়লেও এখনো অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে ।

মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ‘বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাংলাদেশের বাস্তবতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে আলোচকদের বক্তব্যে উঠে এসেছে এসব বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আয়োজিত এই সেমিনারে মূখ্য আলোচক হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

সেমিনার কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে এই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ- উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর (অব.) মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালাম সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন।সেমিনারে অন্যদের মধ্যে রাবির বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা, অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি প্রফেসর মো. আব্দুল ওয়াদুদ, রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, রাবি অর্থনীতি এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সাবেক ব্যাংকার আরিফুল হক কুমার প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।

মুখ্য আলোচক প্রফেসর আতিউর রহমান বলেন, বড় আর নানামুখি সংকটের মধ্যে আছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। অতিমারির কারণে খাদ্যসংকটসহ শিল্প উৎপাদন ও সরবরাহে সংকট ছিল। সাপ্লাই চেইনগুলো ঝুঁকিতে ছিল। অতিমারির প্রকোপ কমে আসায় পুনরুদ্ধার শুরু হতে না হতেই শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার ফলে সাপ্লাই চেইনগুলোতে ব্যাপক ঝুঁকির সৃষ্টির মাধ্যমে খাদ্য ও কৃষি পণ্যসহ সবধরনের পণ্যের মূল্য বেড়েছে। সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছে মানুষ।

তিনি আরো বলেন, বৈশ্বিক এই সংকট মোকাবেলায় গত ১২ মাসে প্রায় সকল দেশের অর্থনীতিতেই নিজস্ব মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে। এর মধ্যে চীনের মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৫ শতাংশ, ভারতে ডলারের বিপরীতে রুপির দাম কমেছে ৬ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের পাউন্ডের দাম কমেছে ১২ শতাংশ, ইউরোর আরো বেশি প্রায় ১৪ শতাংশ। এমন সংকটের দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিরল। এপ্রিল ২০২০ থেকে মার্চ ২০২২ এই সময়কালে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৪ গুণ, সারের দাম বেড়েছে ২২০ শতাংশ, যা তিন গুণেরও বেশি। যেসব খাদ্য পণ্য রাশিয়া ও ইউক্রেনে বেশি উৎপন্ন হয় সেগুলোর দাম বেড়েছে ৮৪ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির চাপ দক্ষিণ এশিয়াতে কিছুটা বেশি। শ্রীলঙ্কা ও ভারতের কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্স ইনফ্লেকশন ২১ শতাংশ এবং ৮ শতাংশ। বাংলাদেশে এ বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে কম। তবুও ৬ শতাংশ পেরিয়ে গেছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৫.৩ শতাংশ এর চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর আরো বলেন, বিশ্বের এই সংকটের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। দেশে পণ্য আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। খাদ্যসহ অনেক নিত্যপণ্য ও রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামালের জন্য বাংলাদেশকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি এখন পর্যন্ত বর্ধিষ্ণু থাকলেও মন্দার কারণে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশেষ করে বিপাকে পড়েছে তুলনামূলক কম আয়ের মানুষরা। একদিকে আমদানি কমানোর চাপ রয়েছে অন্যদিকে পুনরুদ্ধার বেগবান রাখা দরকার।

ড. আতিউর রহমান আরো বলেন, করোনাকালে দেওয়া ব্যাপক প্রণোদনার কারণে ২০২০ সাল থেকেই বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা ছিলো। এর সাথে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক করোনার কারণে চীনে শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকা এবং অন্যান্য কারণে সাপ্লাই চেইন বিঘ্নিত হওয়া, সেবাখাতের তুলনায় পণ্য খাতে বেশি ব্যয় এবং সর্বশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সংকটটি মূলত আমদানিকৃত পণ্যের মূল্যস্ফীতির। বর্তমানে আমাদের মাসিক বাণিজ্য ঘাটতি ২.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যদিও রেমিট্যান্স কিছুটা বাণিজ্য ঘাটতি সামাল দিচ্ছে। তারপরও মাসিক নিট বাণিজ্য ঘাটতি ১.৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

প্রফেসর আতিউর আরো বলেন, অর্থনৈতিক পুণরুদ্ধারের জন্য বাজারে ডলার ছেড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা রাখার পদ্ধতিটি কাজে দিলেও নতুন সংকটের প্রেক্ষাপটে নীতিতে পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় যথেষ্ট সংবেদনশীলতার পরিচয় দিচ্ছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মে মাসের তিন সপ্তাহে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২.৫৫ শতাংশ, যেটা অন্য অধিকাংশ দেশের চেয়ে কম। ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সংগঠন ও ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনকে সাথে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে এগুনো হচ্ছে। তবে, সুযোগসন্ধানীদের তৎপরতা এড়াতে মনিটরিং জোরদার করার প্রতি গুরুত্বারোপ দরকার।
তিনি বলেন, নীতি সুদ হার না রেপো রেট বাড়িয়ে মূল্যস্ফৃতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগঃ প্রয়োজনীয় প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তবে আরো এক ধাপ এগোতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যংকগুলোর উপর প্রদত্ত ঋণের উপর ৯ শতাংশের বেশি সুদ না নেওয়ার যে নির্দেশ রয়েছে, তা উঠিয়ে নিতে হবে। তা নাহলে রেপো রেট বাড়ানোর পুরো সুফল আসবেনা। মনে হবে, মূদ্রানীতি অন হোল্ড রয়েছে।

তিনি বলেন, কেবল মূদ্রানীতি দিয়ে সংকট উত্তরণ হবেনা, সরকারের বাজেটেও যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। টেকসই পুনরুদ্ধারের জন্য বাজেটে সামাজিক খাতগুলোতে বরাদ্দে মনোযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাস্থ্যখাতে বাজেটের ৮ শতাংশ, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বাজেটের ২০ শতাংশ এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

ড. আতিউর রহমান আরো বলেন, কৃষি আমাদের অর্থনীতির রক্ষাকবচ। তাই, কৃষির বিকাশ নিশ্চিত করতে বাজেটে উদ্যোগ রাখতে হবে। কৃষি ভর্তুকি তিনগুণ বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা করতে হবে। কৃষি সংশ্লিষ্ট সরকারি জনবলের দক্ষতা সক্ষমতা বাড়াতে বরাদ্দ রাখতে হবে। কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে ও ব্যক্তিখাতে যারা কৃষি গবেষণা করছেন, তাদের জন্য প্রণোদনা দিতে হবে। আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি বাজারজাতকরণ ও তথ্য আদান-প্রদান বাড়াতে হবে। কৃষি অবকাঠামো ও অনলাইনে কৃষি বাজারজাতকরণ বাড়াতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সরিষা চাষ উৎসাহিত করতে আলাদা প্রণোদনা রাখতে হবে। কৃষিতে নবায়নযোগ্য শক্তি ও জৈব সারের ব্যবহার উৎসাহিত করতে আলাদা প্রকল্প দরকার। কৃষি যান্ত্রিকরণে দেওয়া প্রণোদনাগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। অনানুষ্ঠানিক উদ্যোক্তা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা ভিত্তিক উদ্যোগের জন্য ‘ইনোভেশন ফান্ড’ দরকার।

তিনি বলেন, আয় বুঝে ব্যয় করার সংস্কৃতি চালু করতে হবে। বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গতানুগতিক ধারায় সরকারি ব্যয় না করে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মূল্যস্ফীতির কারণে বিপাকে পড়া মানুষকে সুরক্ষা দিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে, কৃষিখাতে দেওয়া ভর্তুকি আরো বাড়াতে হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ও বিচক্ষণতার সাথে করতে হবে। চাহিদা নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ বাড়ানো উভয় দিকেই নীতি-মনোযোগ সক্রিয় রাখতে হবে।

সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram

Leave a Comment

সর্বশেষ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

উত্তরা ১২ নং সেক্টর ওয়েলফেয়ার সোসাইটির যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে বর্ণাঢ্য ও মর্যাদাপূর্ণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।  সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর পার্কে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সোসাইটির শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে মার্চপাস্ট ও জাতীয় সংগীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা

উত্তরা ১১ নং সেক্টর সোসাইটির উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিনব্যাপী বিজয় দিবস উদযাপন

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর উত্তরা ১১ নং সেক্টর ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির

ডেভেলপারস ফোরাম উত্তরা এর ১৫তম বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠিত

ডেভেলপারস ফোরাম উত্তরা  (ডিএফইউ)-এর ১৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য উদযাপন ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক  অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত

ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল ও শহীদ মডেল কলেজের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা নিলেন প্রায় ২ হাজার মানুষ 

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে উত্তরা তুরাগের কামারপাড়া এলাকার শহীদ মডেল স্কুল এন্ড কলেজের প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নাম ব্যবহার করে পুনরায় প্রভাব বিস্তার — চাকরিচ্যুত মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, সংযুক্ত কলেজসমূহ এবং পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে চাকরিচ্যুত

  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৫:১২ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১২:০২ অপরাহ্ণ
  • বিকাল ১৫:৪২ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৭:২২ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৮:৪১ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ