নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী রাজপাড়া থানার এসআই মকবুল অদম্য সাহস ও কর্মদক্ষতার জন্য বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন পুলিশ বাহিনীতে। ২০১৪ সালে এর স্বীকৃতি সরূপ পেয়েছেন পিপিএম পদক। নগর পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে দুইবার সেরা পুলিশ অফিসার হওয়ার সম্মাননাও রয়েছে তার ঝুলিতে। বেশ কয়েকটি কুখ্যাত মাদক জোন এ থানা এলাকায়। রয়েছে আবাসিক হোটেল কেন্দ্রীক দেহ ব্যবসা ও মাদক সিন্ডিকেট। এছাড়া রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিক কেন্দ্রীক দালালচক্র সক্রিয় এখানে।
এরই মধ্যে অপরাধীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক বনে যান এসআই মকবুল। সাঁড়াশি অভিযানে ভেঙে দিয়েছেন একাধিক অপরাধ সিন্ডিকেট। এতেই টান পড়েছে অপরাধীদের পাতে। রাজপাড়া থানা থেকে তাকে সরাতে একটি কুচক্রীমহল একের পর অভিযোগ দিচ্ছেন পুলিশ সদর দফতরসহ নগর পুলিশ দপ্তরেও। কিন্তু দফায় দফায় বিভাগীয় তদন্তে এসব ভিত্তিহীন অভিযোগের কোনো সত্যত্যা না পাওয়ায় এসআই মকবুল অব্যাহতি পাচ্ছেন।
সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২৭ জুন নগরীর মহিষবাথান এলাকার বাসিন্দা লিটন শেখ এসআই মকবুলের নামে হুমকি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ এনে আরএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। ২৮ জুন একই অভিযোগ দেন পুলিশ প্রধান বরাবর। এর আগে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্র“য়ারি আইজিপি বরাবর ও চলতি বছরের ১৬ মার্চ আরএমপি কমিশনার বরার অভিযোগ দিয়েছেন লিটন। কিন্তু তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা মেলেনি।
তদন্ত সংশিষ্ট পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বন্ধুদের সঙ্গে ব্যবসায়ীক বিরোধে জড়ান লিটন শেখ। এনিয়ে মামলাও করেন তিনি। এরপর থেকে বরাবরেই পুলিশকে তার পক্ষে প্রতিবেদন দিতে চাপ দেন। কিন্তু তাতেও সুবিধা করতে না পেরে কথিত এই অভিযোগ দেন। শেষে নগরীর লক্ষ্মীপুর কেন্দ্রীক অপরাধ সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন করে এসআই মকবুলের বিরুদ্ধে ফের পুরনো অভিযোগটি দেন।
অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেন এসআই মকবুল বলেন, লক্ষ্মীপুর কেন্দ্রীক অপরাধ সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য তার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সুবিধা করতে না পেরে নিস্পত্তি হয়ে যাওয়া ভিত্তিহীন পুরোনো ২০১৯ সালের একটি অভিযোগ সামনে এনেছেন। মকবুল আরো বলেন, আমার কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। যেকোনো সময় সব ধরনের অভিযানে অংশ নিই। কেবল সাহস এবং মনোবল আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছে।
অভিযোগের বিষয়ে একাধিক অভিযোগকারী লিটন শেখ বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আমার যে পিকআপ গাড়ি ছিনতাই হইছিলো সেটা সাত মাস পরে পাইছি। ছিনতাইয়ের ঘটনা দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই মকবুল সহযোগিতা না করে আমার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেন। তাই তার বিরুদ্ধে পুলিশ কতৃর্পক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। এ বিষয়ে এখনো কোনো সত্য—মিথ্যার তথ্য পাইনি।’ সেই তথ্য না পাওয়া এবং ২২ ফেব্র“য়ারি সিএমএম আদালত এলাকায় এসআই মকবুল তাকে হুমকি দিয়েছে বলে এইবার অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
পুলিশে যোগদানের এক মাস ১১ দিনের মাথায় বোমা হামলায় সব স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছিল এসআই মকবুলের। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। কৃত্রিম হাত নিয়ে নেমে পড়েন কাজে। অন্যসব কর্মকর্তার মতো নিয়মিত অভিযানেও অংশ নেন তিনি।
মকবুল হোসেন উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় যোগদানের পর আন্দোলনের নামে বিএনপি—জামায়াত জোটের সহিংসতা দমনে ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ দায়িত্ব পালন করছিলেন। এসময় নগরীর রাণীবাজার এলাকায় শিবিরের ছোঁড়া বোমার আঘাতে ডান হাতের কব্জি ও বাম হাতের কয়েকটি আঙুল হারান এসআই মকবুল। ক্ষতবিক্ষত হয় মুখমণ্ডল, দুই বাহু ও উরু। রামেক হাসপাতাল থেকে ওই দিনই তাকে হেলিকপ্টারে নেওয়া হয় ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। এরপর নেওয়া হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে। সেখান থেকে চিকিৎসা শেষে কর্মস্থলে ফেরেন। তার বাবা আনসার আলী পুলিশের একজন অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার।
রাজশাহী রাজপাড়া থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আগের অভিযোগ গুলোর কোনো সত্যত্যা মেলেনি। এসআই মকবুলকে হয়রানি করার জন্য এসব অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে মনে হয়।