টেক্সাসের কোলিভিল শহরের সিনাগগে হামলা হয়েছে। প্রায় ১০ ঘণ্টা দমবন্ধ উৎকণ্ঠায় কাটিয়েছিলেন সিনাগগে থাকা চারজন মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের এই অঙ্গরাজ্যের ওই উপাসনালয় থেকে অবশেষে মুক্ত করা হয়েছে তাদের। নিরাপত্তা বাহিনীর বিশেষ অভিযানের মধ্য দিয়ে অবসান হলো তাদের জিম্মি সংকটের। নিহত হয়েছে বন্দুকধারী। কিন্তু বিভিন্ন মিডিয়ায় ইতোমধ্যে প্রচার হয়ে গেছে জিম্মিকারী ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে বন্দি পাকিস্তানি নাগরিক আফিয়া সিদ্দিকীর ভাই।
কথা রটেছে, বোনকে মুক্তির দাবিতেই এই চারজনকে জিম্মি করেছিলেন হামলাকারী। জিম্মিদের উদ্ধার অভিযানে হামলাকারীর পরিচয় নিশ্চিত হলেও তা প্রকাশ করতে নারাজ এফবিআই। আর এ কারণেই সন্দেহ দানা বেঁধেছে, আসলেই কি লোকটি আফিয়া সিদ্দিকীর ভাই? আলজাজিরা, এপি, এনবিসি নিউজ।
শনিবার মার্কিন সাংবাদিকরা জানান, তারা ঘটনাস্থলে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। এর কিছুক্ষণ পর টুইট বার্তায় টেক্সাস গভর্নর গ্রেগ জানিয়েছেন, সংকটের অবসান ঘটেছে। সব জিম্মি জীবিত এবং অক্ষত রয়েছেন।
দীর্ঘ জিম্মি সংকট বিষয়ে টেক্সাসের কোলিভিল শহরের পুলিশ প্রধান মিশেল মিলারও নিশ্চিত করেছেন, বন্দুকধারী মারা গেছেন। কিন্তু তার মৃত্যু কীভাবে হল, আত্মহত্যায় নাকি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে, তা নিশ্চিত করেননি তিনি। আন্তর্জাতিক সংবামাধ্যমগুলো জানিয়েছে, জিম্মিকারীর বোন পাকিস্তানের নাগরিক আফিয়া সিদ্দিকী একজন বিজ্ঞানী।
তার মুক্তির দাবিতে উপাসনালয়ে জিম্মি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন তিনি। আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর হামলায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ২০১০ সালে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। বর্তমানে টেক্সাসের একটি কারাগারে সাজা ভোগ করছেন আফিয়া। ওই বন্দুকধারী আফিয়া সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন বলেও শোনা যায়। এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গ যখন আফিয়া:
গত ১২ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে কারাভোগ করছেন পাকিস্তানি বিজ্ঞানী আফিয়া সিদ্দিকী। আল কায়েদার অপারেটিভ হিসেবে সন্ত্রাসের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় তাকে। ম্যানহাটানের এক আদালতে ২০১০ সালে আফিয়া সিদ্দিকীকে অভিযুক্ত করে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়, তিনি চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা কর্মকর্তাদের গুলি করা হোক। এ অভিযোগে অভিযুক্ত করার দু’বছর আগে তাকে আটক করা হয়েছিল আফগানিস্তান থেকে।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, আফিয়া সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা গুরুতর। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এ অভিযোগ মারাত্মক। কিন্তু তার সমর্থকরা ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর আফিয়া সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বিচারব্যবস্থা অতি উৎসাহী হয়ে কাজ করেছে বলে মনে করেন।
আফিয়া সিদ্দিকীর পক্ষে তার এক ভাইয়ের নিয়োগ করা আইনজীবী হিসেবে লড়াই করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেয়ার-হাউসটন বোর্ড চেয়ার জন ফ্লয়েড। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ঘটনার জন্য আমার মক্কেলকে দায়ী করা হয়েছে, তার জন্য আফিয়া মোটেও দায়ী নন। ড. আফিয়া, তার পরিবার এবং ন্যায়বিচারের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচারণায় সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আমরা টেক্সাসের কোলিভিলেতে কংগ্রেগেশন বেথ ইসরায়েলের জিম্মি দশার তীব্র নিন্দা জানাই। বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ড. আফিয়ার জন্য আমরা যারা ন্যায়বিচার চাই, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের অবমাননা করা হয়েছে।
কে এই আফিয়া:
আফিয়া সিদ্দিকী পাকিস্তানি একজন স্নায়ুবিজ্ঞানী। পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত প্রতিষ্ঠান ব্রান্ডিস ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার কয়েক বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের মনোযোগ যায় তার দিকে। ২০০৪ সালের মে মাসে এফবিআই এবং বিচার বিভাগ তাকে আল কায়েদার একজন অপারেটিভ এবং মদদদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করে।
২০১০ সালে ড. আফিয়া সিদ্দিকীকে শাস্তি দেওয়ায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানান পাকিস্তানি কর্মকর্তারা। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি ড. আফিয়া সিদ্দিকীকে ‘ডটার অব দ্য নেশন’ আখ্যায়িত করে তাকে মুক্ত করার প্রত্যয় ঘোষণা করেন। যদিও শেষ পর্যন্ত আফিয়াকে মুক্ত করার তাদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়।
২০০৮ সালে তাকে আফগান কর্তৃপক্ষ আটক করে। মার্কিন কর্মকর্তারা ড. আফিয়ার সঙ্গে নিজের হাতে লেখা ‘ডার্টি বম্ব’ বা ভয়াবহ ক্ষতিকর বোমা তৈরি নিয়ে চিরকুটও পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানের নাম উলেখ ছিল ওই নোটে।






