কলেজ ছাত্রী রিফাতের মৃত্যু কি করোনা’য় নাকি হত্যা? দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস পর উদ্ঘাটিত হলো মৃত্যুর আসল রহস্য। করোনায় নয়, হাতুরে ক্লিনিকে নার্সের হাতে মৃত্যু হয়েছিল কলেজ ছাত্রী রিফাত সুলতানা। মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে ছড়ানো হয়েছিল করোনার গুজব।
গতকাল বুধবার (১১ নভেম্বর) সিটি হেলথ ক্লিনিকের ওই হাতুরে নার্স, পরিচালকসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে একজন ইতোমধ্যেই সিটি হেলথ ক্লিনিকে অবৈধভাবে গর্ভপাত করানোর সময় কলেজ ছাত্রী রিফাত সুলতানার মৃত্যু হয়েছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় গ্রেফতারকৃতরা হলো- হাসপাতালের পরিচালক মো. হারুনর রশিদ (৬০), কথিত নার্স অলকা পাল (৩২), আয়া গীতা দাস (৪৫) ও নার্স সাবিনা ইয়াসমিন চম্পা (৪৩)। একই সাথে আদালতের নির্দেশে সিটি হেলথ্ ক্লিনিকটি বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
চট্টগ্রাম মেট্রোলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মেহেদী হাসান বলেন, ঘটনার পর নিহত কলেজ ছাত্রীর পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে তদন্তে আমরা জানতে পারি গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে ওই কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। গত ১৫ মে কলেজছাত্রী রিফাতের অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করে আসামিরা। এ সময় হাতুড়ে নার্সের সাহায্যে রিফাতের গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু হাসপাতালের পরিচালক ও সংশ্লিষ্টরা ঘটনা ধামাচাপা দিতে নিহতের পরিবারকে করোনায় রিফাতের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আমরা দেখেছি এই ধরনের সেবা যে ধরনের চিকিৎসক দিয়ে করানো প্রয়োজন, এই ক্লিনিকে সেই ধরনের কোনও চিকিৎসক বা নার্স সেখানে ছিল না। কোনও ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই এমন দুইজন নার্স ও একজন আয়া গর্ভপাত করানোর কাজটি করেছেন। যেই কারণে অপচিকিৎসার কারণেই মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে।
আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাতে তিনি বলেন, ‘এই অপচিকিৎসা করানোর সময় কথিত নার্সরা যখন বার বার ডাক্তার ডাকার অনুরোধ করলেও তিনি সেটিও করেননি। বিষয়টি অবহেলার নয়, তাই সবমিলিয়ে এটিকে আমাদের কাছে হত্যাকাণ্ড বলে বিবেচিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় নিহতে কথিত বন্ধু জিসানসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন ঘটনার পর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও কথিত নার্স অলকা পাল।’ নিহতের বাবা ঠিকাদার খোকন মিয়াজি জানান, নিহত রিফাত সুলতানা ও তার ছোট বোন রিয়াদ সুলতানা নগরের চাঁন্দগাও আবাসিকে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো। ওই সময় করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দুজনেই রাঙ্গুনিয়ায় গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলো। ১৩ মে রিফাত সুলতানা নিজের কম্পিউটার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য শহরে আসে। ১৫ তারিখ তিনি রিফাতের মৃত্যু সংবাদ পান।