মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক (১৯ মে ১৮৮১-১০ নভেম্বর ১৯৩৮) উসমানীয় সামরিক কর্মকর্তা, বিপ্লবী রাজনীতিক, লেখক এবং তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি আধুনিক তুর্কি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা। তাকে আধুনিক তুরস্কের জনকও বলা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আতাতুর্ক একজন সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন। সে সময় উসমানীয় সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পর তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি তুর্কি জাতীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। আঙ্কারায় একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে তিনি মিত্রশক্তির বাহিনীকে পরাজিত করেন। তার সামরিক অভিযানের ফলে তুরস্ক স্বাধীনতা লাভ করে। আতাতুর্ক এর পর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেন।
তুরস্কে চূড়ান্তভাবে খিলাফত পতন হয় মূলত কামাল পাশার হাতেই। শুধু তাই নয় তুর্কী জাতির ইতিহাস থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার এমন কোন পথ বাকি ছিলনা যে পথে তিনি হাটেনি। তাই তিনি তুর্কী বীরের পাশাপাশি জঘন্য ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবে মুসলিম উম্মাহর নিকট পরিচিত।
ক্ষমতা গ্রহণের সাথে সাথে কামাল আতাতুর্ক সদম্ভে ঘোষণা করেন যে, ইসলামের সকল চিহ্ন তিনি তুর্কী জাতির জীবন থেকে ধ্বংস করবেন। শুধুমাত্র তখনই তুর্কী জাতি একটি আধুনিক, সম্মানীত ও প্রগতিশীল জাতিতে রূপান্তরিত হবে, যখন ইসলামের কর্তৃত্ব পরিপূর্ণ ভাবে মিটিয়ে ফেলা হবে। তিনি নির্ভীক এবং নির্লজ্জ ভাবে জনসাধারণের সামনে ইসলামকে আক্রমণ করে বক্তৃতার পর বক্তৃতা করতে থাকেন।
তিনি তুরস্ক থেকে ৪০০ বছরের পুরনো খেলাফত বিলুপ্ত করেন। উসমানীয় সুলতান ও তাদের বংশধরদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে পাঠান। অফিস আদালত এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বোরখা পরা নিষিদ্ধ করেন। এই নিষেধাজ্ঞা ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছিল। আরবিতে আযান নিষিদ্ধ করেন। ১৯৪৮ সালে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় সেনাবাহিনী ১৯৬০ সালে ততকালীল প্রধানমন্ত্রীকে ফাঁসি দিয়েছিল। তুর্কী ভাষা পূর্বে আরবীতে লেখা হত। তিনি তা বিলুপ্ত করে ল্যাটিন হরফে চালু করেন। যা এখনো আছে। এরদোগান অবশ্য আরবী হরফ চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন। বহু আলেমকে নির্দয়ভাবে হত্যা করেন। একবার এক মুয়াজ্জিন আরবীতে আযান দেয়ায় তার দুই হাত কেটে দিয়েছিলেন। ইসলামপন্থীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপর স্টিম রোলার চালান। ১৯৩৬ সালে বহু কুর্দিকে নির্মমভাবে হত্যা করে কামাল আতাতুর্ক সরকার।
মৃত্যুর আগের দিনগুলোতে তার সারা শরীরজুড়ে একপ্রকার অদৃশ্য পোকার আক্রমণে অস্থির হয়ে পড়েছিল। চুলকানিতে তার গোটা শরীররের রং বদলে গিয়েছিল। কাপড় খুলে সে প্রায় উলঙ্গ হয়ে থাকত। দেহের চামড়া একেবারে বেঙের খোলসের মত হয়ে গিয়েছিল। রক্ত, পুঁজ ও পানি বেরোত সবসময়।
প্রায় দু’বছর অসহনীয় যন্ত্রণার পর ১৯৩৮ সালের ১০ নভেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও চরমভাবে ইসলাম বিদ্বেষী হওয়ায় মৃত্যুর পর তার জানাযার নামাজ নিয়ে বিভক্তি দেখা দেয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জানাযার বিপক্ষে এবং সেনাপ্রধান জানাযার পক্ষে অবস্থান নেন। অবশেষে শরফুদ্দিন আফেন্দি নামের বিতর্কিত এক আলেমকে দিয়ে নামকাওয়াস্তে নামাজে জানাযা আদায় করা হয়।