জীবনের জন্য পানি অপরিহার্য। পানি ছাড়া আমাদের একটি দিনও চলতে পারে না,তবে সে পানি হতে হবে বিশুদ্ধ। এক ধরনের খাবারের বিকল্প হিসেবে আমরা অন্য রকম খাবার খেয়ে থাকি,কিন্তু পানির বিকল্প হতে পারে শুধু পানিই। নিজেদের সুস্থতা ও পরবর্তী প্রজন্মের সুস্থতা এর সাথে জড়িত।
আমরা জানি আমাদের শরীরের ৭৫ শতাংশই পানি।শরীরে প্রতিটি কোষ গঠনে পানির ভূমিকা অপরিসীম। রক্তের ৮০ ভাগের বেশিই পানি, মস্তিষ্ক আর ফুসফুসেও ৯০ ভাগের বেশিই পানির উপস্থিতি।
পিপাসা পেলেই যে প্রচুর পানি পান করতে হবে এটা ঠিক নয়।প্রতিদিন নির্দিষ্ট বিরতিতে অল্প অল্প করে পানি পান করতে হবে।
একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ লিটার বা ৮-৯ গ্লাস পানি পান করা উচিত,যারা বাইরে রোদে কাজ করে তাদের আরেকটু বেশি পান করা উচিত শরীরের চাহিদা অনুযায়ী।
এ ক্ষেত্রে কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে-
দাঁড়িয়ে পানি পান না করে বসে পান করা উচিত,
একবারে অনেক বেশি পানি পান না করে অল্প অল্প করে পান করতে হবে,
সকালে ঘুম থেকে উঠে ১ গ্লাস পানি পানের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে,
ঘুমাতে যাওয়ার আগেও ১ গ্লাস পানি পান করা,
কর্মক্ষেত্রে বা পড়ার টেবিলে হাতের কাছে পানির বোতল রাখতে হবে,
ঘরের বাইরে রোদে গেলে সাথে পানি রাখতে হবে,
যারা রোদে শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করেন ঘেমে গেলেই চট করে ওর স্যালাইন খাওয়া যাবে না- অনর্থক বা অতিরিক্ত স্যালাইন খাওয়া কিডনি ও মস্তিষ্কের ক্ষতির সাথে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে,
শরীর, মন ও ত্বককে সতেজ রাখতে এবং কর্মক্ষমতা ধরে রাখতে বিশুদ্ধ পানির বিকল্প নেই। ওজন কমানো এবং ক্যান্সার প্রতিরোধেও পানির ভূমিকা আছে।গরমে পর্যাপ্ত পানি পান না করার কারনে মাথা ব্যথা,বমি বমি ভাব,পেট ব্যথা,ত্বক ও জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া,গ্যাস্ট্রিক,বদহজম,পায়খানা কষা হয়ে যাওয়া এসব সমস্যা দেখা দেয়।
এই পানিই আবার যখন দূষিত হয়ে পড়ে তখন তা প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়।দূষিত পানি পান করে প্রতি বছর ডায়রিয়া,কলেরা,আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস(হেপাটাইটিস) এ অনেক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন।মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পানিতে আরেকটি বিষ হিসেবে গণ্য।পানি দূষণের জন্য আমাদের অবহেলা দায়ী।দীর্ঘদিন ধরে আমরা আমাদের সুপেয় পানির উৎসগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছি।এভাবে চলতে থাকলে প্রাকৃতিকভাবে সুপেয় পানি পাওয়াটা অসম্ভব হয়ে যাবে।
বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার সরকারের একার পক্ষে তা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।তাই ব্যক্তি পর্যায় থেকে আমাদের এ ব্যাপারে উদ্দ্যোগ নিতে হবে।এখনই যদি আমরা ব্যাপক আকারে সচেতনতা তৈরি করতে না পারি তাহলে আমরা. ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এক বিরাট বিপদের মধ্যে ফেলে যাবো- যেখান থেকে বের হয়ে আসাটা হবে খুব কঠিন।কেননা সুস্থভাবে বেঁঁচে থাকতে হলে বিশুদ্ধ পানি পান এবং ব্যবহার নিশ্চিত করতেই হবে।
লেখকঃ ডাঃ মোঃ রাশীদ মুজাহিদ(এম.বি.বি.এস)
এক্সিকিউটিভ
দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড।