আল আমীন,ভোলা সরকারি কলেজ বাংলা ডিপার্টমেন্ট:
ভ্রমণের শখ সবার মধ্যেই কমবেশি আছে। আসলে ভ্রমণ করতে চান না এমন মানুষ খুঁজে বের করাটা কঠিন। ভ্রমণের মধ্য দিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়।
তাইতো এবারের গন্তব্য কুয়াকাটা। ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে আছে ভোলা সরকারি কলেজের বাংলা ডিপার্টমেন্ট (১ম বর্ষ-৪র্থ বর্ষ) এবং শিক্ষকমণ্ডলীগণ তারা কেউ কেউ কুয়াকাটায় এই প্রথমবার। যাই হোক, আজকের ভ্রমণের মধ্য দিয়ে আপনাদের জানাবো কুয়াকাটা ভ্রমণ সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা।
সুন্দরবনের প্রান্ত ছুঁয়ে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে দক্ষিণে প্রসারিত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভাগ হল বরিশাল। আর পটুয়াখালী হলো বরিশালের একটি অন্যতম জেলা। আর এ জেলার সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠে কুয়াকাটা বা সাগরকন্যা। ধারাবাহিকভাবে এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়।
সড়ক পথেই কুয়াকাটায় যাওয়া যায়। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে সহজেই আপনি কুয়াকাটায় আসতে পারবেন। রাজধানী থেকে সরাসরি কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য বাস পাওয়া যায়। বাস ছাড়াও আপনি প্রাইভেট কারে সেখানে যেতে পারবেন।
কুয়াকাটা নামের ইতিহাস সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তা হলো, ২৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ইংরেজ শাসন শুরু হওয়ারও আগে মুঘল আমলে বর্তমান মায়ানমার ওতৎকালীন বার্মা হতে বিতাড়িত হয়ে কিছু উপজাতিরা এখানে এসে আশ্রয় নেয়।
সাগরে লোনা পানি থাকায় তখন বিশুদ্ধ পানির খুব অভাব ছিল। তাই তারা সাগরের বালি সরিয়ে গর্ত করে কুয়া বানিয়ে খাবার পানির ব্যবস্থা করে। বলা হয়ে থাকে এই কুয়া থেকেই কুয়াকাটা নামের উৎপত্তি।
শুটকি মাছের ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে সে কি স্বাদ, এখনো মুখে লেগে আছে সবার। খাবার শেষ করে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে আবারও বেরিয়ে পরলাম সবাই ঘুরতে এসে বসে থাকলে চলবে?
সেখান থেকে সবাই গেলাম বৌদ্ধ মন্দিরে। ওই মন্দিরের ভেতরটা সুন্দরভাবে সাজানো। কিছুক্ষণ ঘুরে দেখলাম মন্দিরের সাজ। মন্দিরের কাছেই আছে বিশাল একটি নৌকা। কয়েকবছর আগে এটি সমুদ্রের বালির ভেতর থেকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। নৌকাটি সম্পর্কে বিশেষ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে দেখে মনে হচ্ছে বেশ পুরোনো দিনের একটি নৌকা। সেখান থেকে গেলাম সবাই ঝাউবনে।
এর মধ্যেই সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত যাওয়া দেখছি। সূর্যাস্তের এত সুন্দর দৃশ্য কি অসাধারণ!না দেখলে বুঝানো সম্ভব না।
শিক্ষকদের ব্যবস্থাপনায় নানা ধরনের খেলার আয়োজন করা হয়েছে এবং বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।
এরপর চারপাশে আরও কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে হোটেলে চলে আসি সবাই। হালকা নাস্তা শেষে বসে গানের আড্ডা। যা চলছিল মধ্যরাত পর্যন্ত।
সকালে তড়িঘড়ি করে উঠে সূর্যোদয় দেখতে সমুদ্র পাড়ে যাই কাউয়ার চর যেখানে সূর্য উদয় দেখা যায় । মৃদু একটা বাতাস ভেসে আসতেছিল সমুদ্র থেকে। সেই আলতো বাতাসে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ লাগছিল। গঙ্গামতির চর ভ্রমণ এরপর চলে যাই রাখাইন পল্লী। সঙ্গে সূর্যোদয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সব মিলিয়ে এক ভিন্নরকম ভালোলাগা। ২৮/২৯ ঘন্টা কেটেছে রোমাঞ্চকর ইভেন্টে।
এবার ফেরার পালা। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। রোদ উঠে গেছে। সকালের নাস্তা শেষ করে কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নিচ্ছি সবাই । ফেরার পথে আরও একবার পথে প্রান্তরে পরিদর্শন চোখে পড়লো চীন-মৈতী সেতু, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, লেবুখালী ব্রিজসহ ইত্যাদি দেখার মতো দৃশ্য।