দ্বীন ইসলাম,ডেমরা প্রতিনিধি:
রাজধানীর ডেমরায় পাঁচ তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মোছা. হালিমা (২২) ও সাদমান নামে তার ১৪ মাসের ছেলের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।তবে এ মৃত্যু নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার সকাল ৬ টার দিকে পশ্চিম সানারপাড় দারুস সালাম মসজিদ সংলগ্ন তাজুল ইসলাম এর পাঁচ তলা ভবনে এ ঘটনা ঘটে। তারা ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া।
এদিকে খবর পেয়ে ডেমরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে সুরত হাল শেষে রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে ময়না তদন্তের জন্য রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এদিন ঘটনাস্থলেই মা হালিমার মৃত্যু হলেও শিশু সাদমানকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে তার চাচা কবির হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
নিহত মা ও ছেলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মৃতের স্বামী মোঃ শাহিনুর রহমানকে ডেমরা থানা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। হালিমা লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ থানার শ্রীখাতা গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছোট মেয়ে। শাহিনুর একই এলাকার বুলিয়ার হাট গ্রামের জেহের উদ্দিনের ছেলে।
মৃতের বড় বোন রাহেনা ও ভাই আবু সাঈদ বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে আমার বোন ও ভাগিনাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে আমার ভগ্নিপতি শাহিনুর। হত্যার পর লাশ বাড়ির পাশের জমির ডোবায় ফেলে রেখে ছাদ থেকে পড়ে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে শাহিনুর সহ তার পরিবার।
গত ৩ বছর আগে ভগ্নিপতি শাহিনুর তার প্রথম বিয়ে ও সন্তানের কথা গোপন করে আমার বোনকে বিয়ে করেছে। আমার ভাগিনা সাদমান এর জন্মের ছয় মাস পরে বিষয়টি জানতে পারলে হালিমার উপর প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে শাহিনুর। গত রমজানের ঈদের পর রাগ করে হালিমা গ্রামের বাড়িতে পিত্রালয় চলে আসেন। পরে তার শাশুড়ি গ্রাম থেকে বুঝিয়ে শুনিয়ে হালিমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসলেও নির্যাতন থামায়নি শাহিনুর। এ বিষয়ে গত তিন মাস আগেও ডেমরা থানায় শাহিনুরের নির্যাতনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন হালিমা।
তারা আরও জানায়, শাহিনুরের সঙ্গে বর্তমানে তাদের পারিবারিক আত্মীয় অন্য এক মহিলার সম্পর্ক থাকার কারণে প্রায়ই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা হতো। রোববার পারিবারিক কলহের জের ধরেই আমার বোনকে হত্যা করার সময় ভাগিনার মাথায় আঘাত লেগেছে বলে আমরা ধারণা করছি। এই ঘটনায় আমার বোনের মৃত্যু নিশ্চিত হলে আমার ভাগিনাকে সহ তাদের ভবনের পাশের ডোবা জমিতে ফেলে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে শাহিনুর ও তার পরিবার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হালিমা যদি পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে তার শিশু ছেলেসহ লাফিয়ে পড়তো তাহলে তাদের দেহ ক্ষতবিক্ষত হয়ে ডোবার নিচে চলে যেত। কিন্তু লাশ পাশের জমির ডোবায় থাকা ময়লার উপরে পড়েছিল। এতে স্পষ্ট বুঝা যায় হালিমা ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েনি।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার ওসি মোঃ শফিকুর রহমান (পিপিএম) বলেন, আমরা খবর পেয়ে হালিমার লাশ উদ্ধার করি, পরে রোববার দুপুরের দিকে তার ছেলে সাদমানের লাশ নিজের ভাসুর কবির হোসেন থানায় নিয়ে আসে। এটি হত্যা না আত্মহত্যা বিষয়টি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বেরিয়ে আসবে। আর মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এই বিষয়ে মামলা দায়ের করা হবে।
আর.আই/