আট জেলায় সারাদেশে বজ্রপাতে ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ময়নসিংহে ৬ জন, সিরাজগঞ্জে ৩ জন, রাজশাহীতে মারা গেছেন ২ জন। এছাড়া নওগাঁ, বগুড়া, জামালপুর, ঢাকা ও নাটোর জেলায় একজন করে মারা গেছেন।
শুক্রবার (১৭ জুন) সকাল থেকে বিকেলের মধ্যে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো-
ময়মনসিংহে শিশুসহ ছয়জনের মৃত্যু:
জেলায় বজ্রপাতে পৃথক ঘটনায় তিন শিশুসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বেলা ২টার দিকে ময়মনসিংহ সদর, নান্দাইল ও ধোবাউড়া উপজেলায় পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়।
এর মধ্যে নান্দাইলে ফুটবল খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো গাঙ্গাইল ইউনিয়নের পংকরহাটি গ্রামের শহীদুল্লাহর ছেলে সাঈদ মিয়া (১২), হাদিস মিয়ার ছেলে স্বাধীন মিয়া (১১), বিল্লাল হোসেনের ছেলে শাওন (৮)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান আকন্দ ঢাকা মেইলকে জানান, বৃষ্টির সময় ওই তিন শিশু এক সাথে খেলছিল। দুপুর দুইটার দিকে হঠাৎ বজ্রপাতে তারা গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে দুজনকে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও একজন কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে জেলার সদর উপজেলার দড়ি কুষ্টিয়া ইউনিয়নের দড়ি কুষ্টিয়া গ্রামের কৃষক বাক্কার হোসেন ও জাহাঙ্গীর হোসেন বজ্রপাত নিহত হন।
ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) টিপু সুলতান জানান, সকালে মুষলধারে বৃষ্টির সময় চরমোহিনী গ্রামের ঘোগরা বিলে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে আহত হন গফুর মিয়ার ছেলে আবু সাঈদ (৩০)। তাকে উদ্ধার করে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
সিরাজগঞ্জে তিনজনের মৃত্যু:
জেলায় পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর সিকিউরিটি গার্ডসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন দুজন।
শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলার সায়দাবাদ ইউনিয়নের সায়দাবাদ শিল্পপার্ক এলাকায় জাহাঙ্গীর আলম খানের ছেলে নাসির উদ্দিন মারা যান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যমুনার দুর্গম চরাঞ্চল কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বর্ণি এলাকায় দরবেশ আলী মুন্সীর ছেলে আবদুর রাজ্জাক মুন্সী মারা যান।
এছাড়া তাড়াশে বজ্রপাতে দূর্গা চরন (৫২) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওই এলাকার বোয়ালিয়া মাঠে কাজ করার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
রাজশাহীতে নারী ও কিশোরের মৃত্যু:
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বজ্রপাতে নাদিরা বেগম (৫৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের পূর্ব বামনাইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নাদিরার বাবার নাম পাতান আলী। রিশিকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম টুলু এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বৃষ্টির সময় মাঠে গরু আনতে গিয়েছিলেন নাদিরা বেগম। এ সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে মোহনপুর উপজেলায় ফুটবল খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। নিহত কিশোরের নাম রাব্বি হোসেন (১২)। রাব্বি আমগাছি গ্রামের মো. কাউছার আলীর ছেলে।
মোহনপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম জানান, দুপুরে বৃষ্টির সময় খোলা জায়গায় কয়েকজন কিশোর ফুটবল খেলছিল। বজ্রপাতের বিকট শব্দ হলে রাব্বি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায়।
গরু চরাতে গিয়ে কিশোরের মৃত্যু:
নওগাঁর মান্দা উপজেলায় বজ্রপাতে নাঈম হোসেন (১৪) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। শুক্রবার (১৭ জুম) দুপুরে উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত কিশোর ওই গ্রামের ইয়াছিন আলীর ছেলে।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, দুপুরের দিকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে নাঈম হোসেন বাড়ির পাশে মাঠে গরু নিয়ে যায়। এ সময় বজ্রপাত ঘটলে ঘটনাস্থলেই নাঈম মারা যায়।
ক্ষেতে কাজ করার সময় যুবকের মৃত্যু:
বগুড়ার আদমদীঘিতে মরিচ ক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে জহুরুল ইসলাম (২১) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের কোমারভোগ গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে জহুরুল ইসলাম সকালে তার বাড়ি পাশের মাঠে মরিচ ক্ষেতের পরিচর্যার কাজ করতে যায়। এসময় বজ্রপাতে জহুরুল ইসলাম মরিচ ক্ষেতের মাঠে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
ঘটনার কিছু পর স্থানীয়রা জহুরুলকে মরিচ ক্ষেতে পড়ে থাকতে দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করে আদমদীঘি উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাড়ির ছাদে প্রাণ গেল কলেজশিক্ষকের:
বজ্রপাতে নাটোরের বাগাতিপাড়ার বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের দর্শন বিভাগের এক শিক্ষক নিহত হয়েছেন। তার নাম আতাউর রহমান। তিনি নাটোর সদরের কাফুরিয়া ইউনিয়নের পাইকপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
বাঁশবাড়িয়া কলেজের অধ্যক্ষ সাবিহা সুলতানা জানান, আতাউর রহমান তাঁর কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি শুক্রবার দুপুরে নিজ বাড়ির পানির লাইনে সমস্যা হওয়ায় তা দেখতে ছাদে যান। তখনই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। ছাদ থেকে ফিরতে দেরি দেখে তার স্ত্রীও ছাদে যান। তিনি গিয়ে দেখেন আতাউর পড়ে আছেন। স্ত্রীর চিৎকারে লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে পুঠিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাছ ধরতে গিয়ে স্কুলছাত্র নিহত:
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বিলের পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে শাকিল (১৫) নামের এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এদিন সকালে উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের শুয়াকৈর বিলে এ ঘটনা ঘটে। শাকিল উপজেলার শুয়াকৈর দক্ষিণপাড়া গ্রামের আনোয়ারের ছেলে ও জমশের আলী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকালে শুয়াকৈর বিলে মাছ ধরতে যায় শাকিল। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে বিলের পানিতে লুটিয়ে পড়ে সে। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ রাজবংশী জাগো নিউজকে বলেন, আজ সকালে মৃত অবস্থায় ছেলেটিকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
খেলতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের:
ঢাকার কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর এলাকায় খেলার মাঠে খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে সজীব সরকার (১৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৭ জুন) সকাল ১০টায় নতুন সোনাকান্দা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক বালুর মাঠে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু ছালাম মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, সকাল ৮টা থেকে বালুর মাঠে ফুটবল খেলছিলেন সজীবসহ অন্যরা। একপর্যায়ে বল মাঠের বাইরে চলে গেলে সজীব দৌড়ে বল আনতে যাওয়ার সময় বজ্রপাত হয় এবং ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।