চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক দুই পাঁচ শতাংশ। বেড়েছে দেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয়ও। এমন তথ্য দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা শেষে এসব তথ্য জানান তিনি। জানান, এখন থেকে নতুন রাস্তা বানানোর চেয়ে পুরনো রাস্তার সংস্কারে বেশি নজর দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনার ধাক্কা সামলে আবারও ঘুরে দাড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। অন্তত চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের তথ্য তাই নির্দেশ করে। সরকারি হিসাব মতে, মার্চ পর্যন্ত জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক দুই পাঁচ শতাংশ। এসময় বেড়েছে দেশের সম্পদ। এমনকি মানুষের গড় মাথাপিছু আয়ও গেল অর্থবছরের ২৫শ’ ৯১ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ২৮শ’ ২৪ ডলার। একনেক সভাশেষে এসব তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
মন্ত্রী জানান, জিডিপির মোট আকার ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কৃষি খাতে ২০২১-২২ অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে শতকরা ২ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর মধ্যে শস্য উপখাতে ১ দশমিক ৬ শতাংশ, পশুপালন উপখাতে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ, বন উপখাতে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং মৎস্য খাতে ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও সরকারও স্বীকার করছেন দেশে বাড়ছে বৈষম্য। তবে এ বৈষম্য সাময়িক বলেও মত তাদের।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, মঙ্গলবারের একনেক সভায় দেশের বিদ্যমান সড়ক সংস্কারে বেশি নজর দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আরও জানান, শিল্প খাতে ২০২১-২২ অর্থবছরে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের প্রবৃদ্ধি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ছাড়া বছর সাময়িক হিসাবে বিদ্যুৎ খাতে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং নির্মাণ খাতে ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে। সার্বিকভাবে শিল্প খাতে গত বছরের (২০২০-২১) তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে।
এর আগে শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় একনেক সভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসময় ১১টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
এসব প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮শ’ ২৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় হবে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
কৃষিখাত: সার্বিক বিবেচনায় কৃষি খাতের ২০২১-২২ অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে শতকরা ২ দশমিক ২০ ভাগ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর মধ্যে শস্য উপখাতে শতকরা ১ দশমিক ০৬ ভাগ, পশুপালন উপখাতে শতকরা ৩ দশমিক ১০ ভাগ, বন উপখাতে শতকরা ৫ দশমিক ০৮ ভাগ ও মৎস্যখাতে শতকরা ২ দশমিক ০৮ ভাগ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে।
শিল্পখাত: ২০২১-২২ অর্থবছরে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের প্রবৃদ্ধি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। এছাড়া বছর সাময়িক হিসাবে বিদ্যুৎখাতে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ ও নির্মাণ খাতে ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে। সার্বিকভাবে শিল্পখাতে গত অর্থবছরের (২০২০-২১) তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৪৪ ভাগ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে।
সেবাখাত: ২০২১-২২ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা খাতে ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ, যানবাহন খাতে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, ব্যাংক ও বিমা খাতে ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ, শিক্ষাখাতে ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ ও স্বাস্থ্যখাতে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে। সার্বিকভাবে সেবাখাতে গত অর্থবছরের (২০২০-২১) তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৩১ ভাগ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে।
জিডিপির হার করোনার আগের অবস্থায় এসেছে, তাহলে কি দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হয়েছে? এমন প্রশ্নে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, করোনা থেকে অর্থনৈতিক পুরোটা পুনরুদ্ধার হয়নি। কতদূর বৃত্তের বাইরে বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। গত দুই বছরে আমাদের রেমিট্যান্স বেড়েই চলেছে। রপ্তানি আয় ও অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তাছাড়া মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির বাড়ছে। আমরা আশা করছি বছর শেষে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ৭.২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.২৫ শতাংশ। করোনার এই পরিস্থিতিতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার অনেক ভালো। মার্চ পর্যন্ত ৭.২৫ হলে জুন শেষে এটা আরো বাড়তে পারে, ৭.৫ শতাংশও হতে পারে। আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে।