বিশ্ব মুসলিমদের কেবলা পবিত্র কাবা শরিফ। এদিকে মুখ করেই পুরো বিশ্বের মুসলমানরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে থাকেন। ঘরটি কালো কাপড়ে সোনালী সুতায় ডিজাইন করা গিলাফ দিয়ে ঢাকা থাকে। কাবা শরিফের একটি বিশেষ দরজা রয়েছে। সৌদি আরবের আমন্ত্রিত বিশেষ রাজকীয় মেহমানদের জন্য এ দরজা খোলা হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্যও মাঝে মাঝে খোলা হয়। অন্যান্য সময় এর দরজা বন্ধ থাকে।
সৌদি আরবের বাদশাহ নিজেদের মসজিদে হারামাইনের (কাবা শরিফ ও মসজিদে নববী) খাদেম ঘোষণা করলেও তারা কখনোই নিজেদের অধিকারে চাবি রাখেন না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জীবদ্দশায় উসমান ইবনে তালহার (রা.) হাতে কাবা শরিফের চাবি সমর্পণ করেন। এখন পর্যন্ত সে ধারা চালু রয়েছে। কাবা শরিফের চাবি থাকে শায়বা গোত্রের কাছে।
বর্তমানে যিনি এ দায়িত্ব আঞ্জাম দিচ্ছেন তার নাম শাইখ সালেহ আশ-শাইবী। তিনি উসমান ইবনে তালহার (রা.) ১০৮তম উত্তরসূরি।
সম্প্রতি সৌদি সফরে গিয়ে ওমরাহ পালন করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এবং পাকিস্তান ও আইভরি কোস্টের প্রধানমন্ত্রী। তাদের আগমন উপলক্ষে কাবা শরিফের দরজা খুলে দেওয়া হয়। যথারীতি সে দায়িত্ব পালন করেন শাইখ সালেহ আশ-শাইবী।
উল্লেখ্য, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ সা. নিজেই উসমান ইবনে তালহার (রা.) নিকট চাবি হস্তান্তর করে তাকে সম্মানিত করেন। জাহিলী যুগেও এ দায়িত্ব ছিল শায়বা গোত্রের কাছে।
মক্কা বিজয়র আগে কোনো এক প্রয়োজনে মহানবী মুহাম্মদ সা. চাবিটি চাইলেও উসমান তা দেননি। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বাধা মেনে নেন এবং বলেন, উসমান! একদিন এই চাবি আমার হাতে আসবে। আমি তখন যাকে ইচ্ছা চাবিটা দেব।
ঠিকই মুসলমানদের মক্কা বিজয়ের পর কাবা শরিফের চাবি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। পবিত্র কাবা শরিফের চাবি রাখার দায়িত্ব পেতে অনেকেই আগ্রহী ছিলেন। হযরত আব্বাস রা. ও হযরত আলী রা. সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সকল শঙ্কা দূরে ঠেলে রাসুল সা. আবারো উসমান বিন তালহাকে ডেকে নেন। তার হাতে চাবি তুলে দিয়ে বলেন, এখন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত এ চাবি তোমার বংশধরের হাতেই থাকবে। তোমাদের হাত থেকে এ চাবি নিয়ে কেউ যেতে চাইলে সে হবে জালিম!
পরে উসমান ইবনে তালহা ইসলাম কবুল করেন এবং ৪২ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইসলাম পূর্ব জাহিলী যুগ ও ইসলাম পরবর্তী যুগে কাবার চাবির রক্ষক তারই বংশধররা। সেই ধারা এখনও চলমান। বিষয়টি নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো বিতর্ক হয়নি। আশা করা যাচ্ছে কিয়ামত পর্যন্ত তাদের কাছেই কাবার চাবি রক্ষিত থাকবে।