শনিবার | ৮ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ রমজান, ১৪৪৬ হিজরি | ২৩ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বসন্তকাল | দুপুর ১:৩৭

শনিবার | ৮ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ রমজান, ১৪৪৬ হিজরি | ২৩ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বসন্তকাল | দুপুর ১:৩৭

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার, বিদ্যমান আইনি প্রতিকার ও পর্যালোচনা

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram
  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১২:১৪ অপরাহ্ণ
  • বিকাল ১৬:২৪ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৮:০৬ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৯:১৯ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

ফাইজুল ইসলাম: দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত একটি জীবন আছে। তার নির্দিষ্ট একটি গণ্ডি আছে, সেই গণ্ডিতে প্রবেশের অধিকার একমাত্র তারই। কিন্ত প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমান যুগে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি আজ হুমকির মুখে। আমরা নিজেরা নিজেদের গোপনীয়তা আজ হুমকির মুখে ফেলেছি। কারো গোপনীয়তা প্রকাশ করা অপরাধ আপনার কাছে যত প্রমাণই থাকুক না কেন।

তারপর এদেশে কয়েকদিন পর পর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস মহামারিতে রূপ নিয়েছে। যেমন: কয়েকদিন আগে এক নায়িকার ব্যক্তিগত ছবি ফাঁস, টেলিফোনে আড়ি পাতা, ২০১১ সালে স্বনামধন্য বিউটি পার্লারের সিসিটিভি কেলেঙ্কারি, ওসি প্রদীপের ফোনালাপ ফাঁস, সাবেক এক প্রতিমন্ত্রীর ফোনালাপ ফাঁস প্রভৃতি।

ব্যক্তির গোপনীয়তার সাথে মর্যাদার সম্পর্ক জড়িত। সাংবিধানিকভাবে কারো অধিকার লঙ্ঘন করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। গোপনীয়তার অধিকার নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন হলে যেকোনো ব্যক্তি আইনি প্রতিকার পেতে পারেন।

কোথায় কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার কথা বলা হয়েছে

আল কুরআন

আল্লাহ তায়ালা সূরা হুজরাতে বলেছেন, “তোমরা গোপন বিষয়ে অন্বেষণ করো না’। (সূরা হুজুরাত, আয়াত-১২)”

আল হাদিস

রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে সেই সব লোকজন, যারা মুখে ঈমান এনেছ কিন্তু এখনো ঈমান তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলিমদের ‘গোপনীয়’ বিষয় খোঁজে বেড়িও না। যে ব্যক্তি মুসলিমদের দোষ-ত্রুটি তালাশ করে বেড়াবে আল্লাহ্‌ তার দোষ-ত্রুটির অন্বেষণে লেগে যাবেন। আর আল্লাহ্‌ যার ত্রুটি তালাশ করেন তাকে তার ঘরের মধ্যে লাঞ্ছিত করে ছাড়েন।’ (সুনানে আবু দাউদ-৪৮৮০।)

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণাপত্র

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণাপত্র,১৯৪৭ এর ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি কখনোই অন্য এক ব্যক্তির গোপনীয়তা, পারিবারিক বিষয়, বাসস্থান বা যোগাযোগে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এমনকি আত্মসম্মান নষ্ট হয় এমন কোনো পদক্ষেপও নিতে পারবে না। এরকম হস্তক্ষেপ বা আক্রমণের বিরুদ্ধে আইন সুরক্ষিত করতে প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে।

জাতিসংঘের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ঘোষণার ১৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির নিজস্ব গোপনীয়, পরিবার, বাড়ি ও অনুরূপ বিষয়কে অযৌক্তিক বা বেআইনি হস্তক্ষেপের লক্ষ্যবস্তু বানানো যাবে না, তেমনি তার সুনাম ও সম্মানের ওপর বেআইনি আঘাত করা যাবে না

বাংলাদেশ সংবিধান

বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৩ ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ইস্যুতে যেসব ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয় সেগুলো হলো, অপ্রত্যাশিত ই-মেইল, প্রবঞ্চনা, অনুসন্ধান ও দখল, ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে ডাটাবেজ তৈরি, অযাচিত ফোন, মোবাইল মেসেজ ইত্যাদি। গোপনীয়তার সাথে সংশ্লিষ্টতা অনুযায়ী কারো বাসায় কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ, অনুসন্ধান সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সংবিধানের ধারা ৪৩ (ক) অনুযায়ী ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় উল্লেখযোগ্য কারণ ছাড়া, দেশের নিরাপত্তা, জনআদেশ, জননীতি ও জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণে গোপনীয়তার অধিকার বাতিল হতে পারে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন

২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৭৮ এবং ৭৯ নম্বর ধারায় নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষা সম্বন্ধে বলা হয়েছে।

কিভাবে লঙ্ঘিত হয় ব্যক্তিগত গোপনীয়তা

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা অনেকভাবে লঙ্ঘিত হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, কাছের মানুষ সব গোপন বিষয়গ ফাঁস করে দেয়। ধরুন কারও কাছে বিশ্বাস করে কিছু তথ্য দিয়েছেন কিংবা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়ে জানে। হঠাৎ মনোমালিন্য হলে দেখা যায় গোপন বিষয়গুলো বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় কিংবা দেওয়ার হুমকি দেয়। এমনকি নিজেদের ব্যক্তিগত ভিডিও কিংবা ছবিও অনেক সময় ছড়িয়ে দিতে দেখা যায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হলে একে অপরকে হেয় করার জন্য নিজেদের ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে।

ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে জিম্মি করে মানসিকভাবে নির্যাতনও করার ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে নিজের অজান্তে হ্যাকারদের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফেসবুকে এবং অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের অনেক ব্যক্তিগত তথ্য আমরা প্রকাশ করে থাকি। এ থেকেও নিজেদের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে। আবার নিজেদের ফোন নম্বর, ই-মেইল, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর এসবও নানাভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফোনালাপ ফাঁসের অহরহ ঘটনা আমাদের চারপাশে ঘটছে।

মনে রাখা দরকার, রাষ্ট্র যদি নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য নিতে পারে যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের মধ্যে না-ও পড়তে পারে। আবার সংবাদমাধ্যম যদি কোনো সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির যুক্তিসংগত তথ্য প্রকাশ করে সেটিও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন না-ও হতে পারে।

কোথায় পাবেন আইনি প্রতিকার

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬(২০১৩ সংশোধিত) ধারা ৫৭ এ বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে কোনো মিথ্যা বা অশ্লীল কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে, যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় অথবা রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তাহলে এগুলো হবে অপরাধ। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ৭ বছর কারাদণ্ড এবং ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা।”

উভয় (কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড) দণ্ড দেওয়ার বিধানও এই আইনে রয়েছে।

কোনোভাবে যদি কেউ অন্য কোনো ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে এবং মানহানি কিংবা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে তাহলে সেটি অপরাধের পর্যায়ে পড়বে। কারও অজান্তে ব্যক্তিগত তথ্য যদি কেউ কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করে এবং এটি যদি মানহানিকর হয় তাহলেও এটি অপরাধ। কোনো স্বামী তাঁর স্ত্রীর অশ্লীল বা বিভ্রান্তিমূলক ছবি প্রকাশ করলেও অপরাধ হবে। এ ধরনের অভিযোগে প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ আছে।

যদি অনলাইন বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অপরাধটি হয় তাহলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধনী ২০১৩)-এর আওতায় থানায় এজাহার দায়েরের মাধ্যমে মামলা করা যাবে।

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এর আওতায় মামলা করা যাবে। কোনো ব্যক্তি কোনো নারী, পুরুষ বা শিশুকে কোনো প্রলোভনে তাঁর জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে স্থিরচিত্র, ভিডিওচিত্র বা চলচ্চিত্র ধারণ করলে তিনি সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির সামাজিক বা ব্যক্তি মর্যাদাহানি করলে বা ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় বা অন্য কোনো সুবিধা আদায় করলেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। কোনো ব্যক্তির জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে ধারণ করা কোনো পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে মানসিক নির্যাতন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এসব আইন ছাড়াও দণ্ডবিধির আওতায় মানহানির মামলা দায়েরের সুযোগ রয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ ধারায় আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শন অথবা মিথ্যা বলে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয়প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন করার বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে বা কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে ওই ব্যক্তির এ কাজটি হবে অপরাধ।

২০১৮ এর ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ২৯ ধারার অধীনে মানহানির মামলা করার সুযোগ রয়েছে, যেখানে দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারা হতে কেবল মানহানির সংজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে।মানহানিকর কোনও তথ্য-উপাত্ত প্রমাণিত হলে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড এবং পুনরায় একই অপরাধ করেন তবে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে।

ফোনে আড়িপাতা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন

আমাদের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সদ্য প্রকাশিত এক রায়ে বলা হয়েছে, “সংবিধানের ৪৩ নম্বর অনুচ্ছেদে নাগরিকদের ব্যক্তিগত ও অন্যান্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে গোপনীয়তার অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এটি কোনো স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর জন্য সহজেই লঙ্ঘন করা যাবে না।”

হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতির একটি বৃহত্তর বেঞ্চের দেওয়া ওই রায়ে অভিমত এসেছে, সরকারি-বেসরকারি মুঠোফোন অপারেটর কোম্পানি থেকে আনুষ্ঠানিক লিখিত চাহিদা ছাড়া এবং গ্রাহককে অবহিত না করে কললিস্ট বা কল রেকর্ড (কথোপকথন) সংগ্রহ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। হাইকোর্টের এই রায় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আশা–জাগানিয়া পদক্ষেপ।

কারো ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করা এখন ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিন আগে সাবেক এক প্রতিমন্ত্রীর ফোনের রেকর্ডিং ফাঁস হয়েছে। এর কয়েকদিন আগে একজন রাজনীতিবিদের রেকর্ডিং ফাঁস হয়েছে। সরকারদলীয়, বিরোধীদলীয় কারো রেকর্ড ফাঁস বাকি নেই এই চক্রে।

অনেক মনে করতে পারেন এর কোন বিচার নেই। কিন্ত আনন্দের বিষয় এই অপরাধের বিচার রয়েছে। প্রয়োজন শুধু আমাদের দায়িত্বশীলতা।

আইনি নিরাপত্তা কোথায় আছে?

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭১ ধারায় কিন্তু বলা আছে যে, আড়িপাতা- আড়ি পাতলেই কিন্তু সেটা অপরাধ হয়ে যাচ্ছে। সেটা স্মার্ট ফোনের কথা বলেন, বা যে কোন ধরনের স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেন সেটা কিন্তু এখানে আলোচ্য বিষয় নয়। যখনই একজন ব্যক্তি অন্য দুজন ব্যক্তির ফোনে আড়ি পাতছেন সঙ্গে সঙ্গে সেটি অপরাধ হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে ফোনে আড়ি পাতার অপরাধ প্রমাণিত হলে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড দেয়ার বিধান আছে।

অনুমতি সাপেক্ষে নজরদারি বিষয়ে আইন

দেশে ফোনকলে আড়িপাতা এবং তা প্রকাশ ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত সবার জন্যই নিষিদ্ধ ছিল। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধন করে এর ৭১ ও ৯৭ ক ধারায় রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা বা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার জন্য এ কাজের বৈধতা দেওয়া হয়। আইন অনুসারে এসব কাজের জন্য সংস্থাগুলোক কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে; যদিও এ আইনে কাদের ফোনে আড়ি পাতা যাবে, কত দিন যাবে, তা বলা নেই।

আদালতের রায়

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আড়িপাতা বিষয়ে এক রায়ে ‘আড়িপাতা ব্যক্তির গোপনীয়তায় একটি মারাত্মক আগ্রাসন’ উল্লেখ করে বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খেয়াল-খুশিমাফিক আড়িপাতার অনুমতি দিতে পারবে না। ১৯৯৬ সালে পিইউসিএল বনাম ভারত মামলায় বিচারপতি কুলদীপ সিং ও এস সগির আহমেদের মাইলফলক ওই রায়ে বলা আছে, কোন রেকর্ডের কতটি অনুলিপি হবে, কতটুকুর ট্রান্সক্রিপশন হবে, কে কে দেখতে পাবেন, সেসব প্রাথমিক অনুমতির আদেশেই নির্দিষ্ট করতে হবে।

বাংলাদেশের একটি রায়ে বলা হয়েছে, “আনুষ্ঠানিক চাহিদাপত্র ও গ্রাহককে অবহিতকরণ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি থেকে কললিস্ট বা কল রেকর্ড সংগ্রহ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন দ্বারা অনুমোদিত না হলে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোও দেশের নাগরিক বা গ্রাহকের কল লিস্ট সম্পর্কিত কোনো তথ্য কাউকে সরবরাহ করতে পারে না। নইলে সংবিধান কর্তৃক নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হবেন।”

আদালত আরো বলেন, “আমরা এটা ভুলে যেতে পারি না যে সংবিধানের ৪৩ নম্বর অনুচ্ছেদে একজন নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। তাই এটা রক্ষা করা ফোন কোম্পানি ও বিটিআরসির দায়িত্ব। তাই এটা বন্ধে বিটিআরসিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।”

মন্তব্য

ভারতের সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, জীবনের অধিকারের মতোই নিজের ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখাও একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। কেউ এমনটা করলে অন্যের মৌলিক অধিকার ভঙ্গ করার অপরাধে অপরাধী হবেন এবং আপনার বিরুদ্ধে সংবিধান অনুযায়ী রিট করা যাবে।

কিন্তু বাংলাদেশে ব্যক্তির গোপনীয়তার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনো আইন নেই। তবে বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ লংঘিত হলে অনুচ্ছেদ ৪৪ ও ১০২ অনুযায়ী হাইকোর্ট এ রিট করা যাবে।

অসুস্থ এই প্রতিযোগিতা বন্ধ হোক। কাউকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় হুমকিতে ফেললে ধ্বংসযজ্ঞ বৈ আর কিছুই মিলে না। আইনের যথাযথ প্রয়োগই পারে আমাদের বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে। উল্লিখিত আইনের প্রয়োগে কারো শাস্তি হয়েছে বলে তেমন নজির নেই।

আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদিকে দৃষ্টি নিবন্ধন করবেন। মনে রাখা দরকার, নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার তাঁর মৌলিক অধিকার। এই অধিকার খর্ব করা মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন। এছাড়াও তা অনৈতিক ও অবৈধ।

লেখক: শিক্ষার্থী; আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র:

PEUCL Vs The State

Zahorul Islam, Secretary, Ministry of Agriculture vs The State, 49 DLR

প্রথম আলো, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮

দৈনিক ইত্তেফাক, ২২ অক্টোবর

অনুচ্ছেদ ৪৩ বাংলাদেশ সংবিধান

TIB Report, March, 2016

UDHR,1948

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram

Leave a Comment

সর্বশেষ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

জিএমআইটির বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ

জিএমআইটির বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে “দৈনিক যায় যায় দিন” পত্রিকার অনলাইন পোর্টালে “জিএমআইটির উদ্যোক্তা তৈরির ফাঁদে মানহীন হারবাল পণ্য বিক্রি” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। উক্ত সংবাদ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জিএমআইটি দীর্ঘদিন ধরে স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গুণগতমানসম্পন্ন পণ্য ও

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ, দৈনিক আজকের বাংলা পত্রিকার অনলাইন পোর্টাল এ

তুরাগের চাঞ্চল্যকর শুভ হত্যা মামলার আসামিকে ব্যবহৃত ছুরিসহ গ্রেফতার করেছে তুরাগ থানা পুলিশ

এইচ এম মাহমুদ হাসান।  রাজধানীর তুরাগে চাঞ্চল্যকর ফারদিন শাহরিয়ার শুভ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনসহ হত্যাকাণ্ডের

  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১২:১৪ অপরাহ্ণ
  • বিকাল ১৬:২৪ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৮:০৬ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৯:১৯ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ