মাওলানা আব্দুল জব্বার মাহমুদী:
মহান আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসের রোজাকে ফরজ করে দিয়েছেন। রমজান তাকওয়া অর্জনের অন্যতম সময়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগের লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (আল বাকারাহ: ১৮৩)
তাকওয়া অর্জন করতে হলে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। আর মানুষকে পরিশুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসূলদের পাঠিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
‘আমি তোমাদের মধ্যে স্বয়ং তোমাদের থেকেই একজন রাসূল পাঠিয়েছি, যে তোমাদেরকে আমার আয়াত পড়ে শোনায়, তোমাদের জীবন পরিশুদ্ধ করে সুসজ্জিত করে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় এবং এমন সব কথা তোমাদের শেখায়, যা তোমরা জানতে না।’ (আল-বাকারাহ: ১৫১)
নিজেকে পরিশুদ্ধ করা সম্ভব হবে তখন, যখন নিজেকে সব পাপাচার থেকে বিরত রাখা যাবে। পাপ থেকে বিরত থাকার অন্যতম মাধ্যম হলো রোজা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন,
রোজা হলো ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ কোনদিন রোজা রাখলে তার মুখ থেকে যেন খারাপ কথা বের না হয়, সে যাতে মূর্খতাসুলভ আচরণ না করে। কেউ যদি তার সাথে বিবাদে লিপ্ত হয় কিংবা গালমন্দ করে সে যেন বলে আমি রোজাদার। নিশ্চয়ই আমি রোজাদার। (আবু দাউদ: ২৩৫৫)
কিয়ামতের দিন রোজা বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদি:) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন,
‘রোযা ও কুরআন, রোজাদার বান্দার জন্য (আল্লাহর কাছে) কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। রোজা বলবে হে আল্লাহ! আমি এ ব্যক্তিকে দিনে খাবার ও অন্যান্য কামনা-বাসনা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি, আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।’ (আল হাদিস)
প্রতীক্ষার প্রহর শেষে এল মাহে রমজান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
‘যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়; শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় (বুখারি, খণ্ড: ৩, হাদিস: ১৭৭৮)।’
রমজানের প্রধান ইবাদত সিয়াম পালন করা। ‘সিয়াম’ হলো ‘সাওম’-এর বহুবচন, যার অর্থ বিরত থাকা। ফারসি, উর্দু, হিন্দি ও বাংলায় সাওমকে ‘রোজা’ বলা হয়। পরিভাষায় সাওম বা রোজা হলো, ‘ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইবাদতের উদ্দেশ্যে পানাহার ও রতিক্রিয়া থেকে বিরত থাকা।’
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা পানাহার কর ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা স্পষ্টভাবে তোমাদের কাছে প্রতিভাত না হয়। অতঃপর রাত (সূর্যাস্ত) পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)।
প্রাপ্তবয়স্ক, সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বা জ্ঞানসম্পন্ন, রোজা পালনে সক্ষম সব নারী-পুরুষের জন্য রমজান মাসে রোজা পালন করা ফরজ ইবাদত। ঋতুবর্তী নারী, সন্তান প্রসবকারী মা, অসুস্থ ব্যক্তিরা এ রোজা পরবর্তীকালে কাজা আদায় করবেন। এমন অক্ষম ব্যক্তিরা, যাঁদের পুনরায় সুস্থ হয়ে রোজা পালনের সামর্থ্য লাভের সম্ভাবনা বিদ্যমান নেই, তাঁরা রোজার জন্য ফিদিয়া প্রদান করবেন। অর্থাৎ প্রতিটি রোজার জন্য একটি সদকাতুল ফিতরের সমান দান করবেন।
রোজাদারের জন্য রয়েছে জান্নাতে বিশেষ অভ্যর্থনা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
‘জান্নাতে রায়্যান নামের একটি তোরণ আছে। এ তোরণ দিয়ে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদারেরাই প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশের পর এ দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না (বুখারি, খণ্ড: ৩, হাদিস: ১৭৭৫)।’
রমজান মাস ইবাদতের বসন্তকাল। এ মাসে প্রতিটি নেক আমলের ফজিলত ৭০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। একেকটি নফল ইবাদতের সাওয়াব ফরজ ইবাদতের সমান দান করা হয়।
রমজান মাসে ফরজ ইবাদাত সমূহের মধ্য থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ হলো পূর্ণ মাস রোজা পালন করা। এ মাসের সঙ্গে সম্পর্কিত ওয়াজিব দুটি; সদকাতুল ফিতর প্রদান ও ঈদের নামাজ আদায় করা। রমজানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুন্নাতগুলো হলো ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ আদায় করা, সাহ্রি খাওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা, ইফতার করা ও করানো, কোরআনুল মাজীদ বেশি বেশি তেলাওয়াত করা এবং ই’তিকাফ করা, রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোয় শবে কদর সন্ধান করা, ঈদের জন্য শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে রোজার মাধ্যমে তাকওয়া ও জান্নাত অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
এন.এইচ/