২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার বারডেম জেনারেল হসপিটালে চিকিৎসাধীন ছিলেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহিমাহুল্লাহু। হাতে লাগানো ছিলো ক্যানোলা, চলছিলো স্যালাইন। জিজ্ঞাসা করলেন, দেশের কী খবরাখবর একটু বলো তো।
জানানো হলো, পঞ্চগড়ে কাদিয়ানীরা তিনদিন ব্যাপী ইজতেমার প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। কাদিয়ানীরা ইজতেমা করবে এ কথা শোনা মাত্রই যেন হযরত রহিমাহুল্লাহুর চেহারা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেলে। স্যালাইন চলাবস্থায় হযরত উঠে বসতে চাইলেন। আমরা উঠতে দেইনি। হযরত বললেন, অসম্ভব। যে কোন মূল্যে তা বন্ধ করা হবে। কোনভাবেই কাদিয়ানীদের এ ইজতেমা হতে দেব না। ডাক্তারদেরকে বলে হসপিটাল থেকে রিলিজ লও৷ বলো আমি সুস্থ। আমি মাদরাসায় গিয়ে ওলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে কাদিয়ানীদের এই ইজতেমা বন্ধ করার জন্য যা যা করতে হয় তাই করবো।
সেদিন রাত সাড়ে ৮ টায় হসপিটালে বেডে শুয়েই কড়া বিবৃতি দিয়েছিলেন। সেই বিবৃতিতে হযরত বলেছিলেন, পঞ্চগড়ের আহমদনগরে ‘কথিত মুসলিম নামধারী কাদিয়ানী অমুসলিমদের’ জাতীয় ইজতেমার নামে ঈমানবিধ্বংসী কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে, নইলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো বলেছিলেন, খতমে নবুওয়াত অস্বীকারকারী কাদিয়ানীরা অমুসলিম, কাফের। মুসলিম নাম ধারণ করে ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে তাদের ঈমানবিধ্বংসী কোনো কার্যক্রম চলতে দেয়া হবে না। এসব বন্ধ না করলে হাশর ভালো হবে না।
সেদিনের বিবৃতিতে হযরত রহিমাহুল্লাহু আরো বলেছিলেন, বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ। এ দেশের মুসলমানগণ বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিজেদের প্রাণের চেয়েও বেশি মুহাব্বাত করেন। বিশ্বনবী (সা.) এর রিসালতকে অস্বীকারকারী কাদিয়ানী অমুসলিমদের আস্ফালন এদেশের ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতা মেনে নেবে না। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ। গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে এদেশের হিন্দুরা হিন্দু নামে, বৌদ্ধরা বৌদ্ধ নামে এবং খ্রিস্টানরা খ্রিস্টান নামে তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করছে। কিন্তু কাদিয়ানী অমুসলিমরা মুসলমান নাম ধারণ করে সরলমনা সাধারণ মুসলমানদের ধোঁকা দিয়ে ঈমানবিধ্বংসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যা ইসলাম ধর্মের নামে অপপ্রচারের শামিল। তা কখনো মেনে নেয়া যায় না। অনতিবিলম্বে পঞ্চগড়ে অনুষ্ঠিতব্য কাদিয়ানীদের তথাকথিত জাতীয় ইজতেমাসহ বাংলাদেশে তাদের ঈমানবিধ্বংসী সব কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় আকিদায়ে খতমে নবুওয়াত রক্ষার্থে এ দেশের লাখো নবীপ্রেমিক তৌহিদি জনতা অমুসলিম কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।
আকিদায়ে খতমে নবুওয়াত নিয়ে কাজ করা আমাদের যে সকল মুরুব্বি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন আল্লাহ তায়া’লা তাঁদেরকে জান্নাতে সুউচ্চ মাকাম দান করুন আমিন।
[লেখক: H.M.Zunaid, খাদেম- আল্লামা বাবুনগরী রহিমাহুল্লাহু ]
এন.এইচ/