কখনো কুমিল্লা, কখনো বরিশাল। পেন্ডুলামের মতো দুলল ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত এক রানের রুদ্ধশ্বাস জয়ে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার ফাইনালে ফরচুন বরিশালকে ১ রানে হারায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আগে ব্যাট করতে নেমে কুমিল্লা করে ৯ উইকেটে ১৫১ রান। জবাবে বরিশাল করতে পারে ৮ উইকেটে ১৫০ রান।
জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় ফরচুন বরিশাল। দ্বিতীয় ওভারে শহিদুলের বলে ডুপ্লেসিসের হাতে ক্যাচ দেন দারুণ ফর্মে থাকা মুনিম শাহরিয়ার। সাত বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি বরিশালের এই ওপেনার।
দায়িত্ব বর্তায় গেইলের কাধে। তবে শুরুর দিকে গেইল নয় ব্যাট হাতে আগুন ঝরান হুট করে ফাইনালে নামা সৈকত আলী। লিগ পর্বে তিন ম্যাচে কুমিল্লার হয়ে তার রান ছিল যথাক্রমে ৩৯, ১৫ ও ০। ফাইনালের মঞ্চে যেন খেপে গেলেন তিনি। বাউন্ডারিতে কাঁপিয়ে তুললেন চার পাশ। বরিশালের রান বাড়তে থাকে তরতরিয়ে।
২৬ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন সৈকত আলী। অবশেষে তিনি থামেন ব্যক্তিগত ৫৮ রানে। বরিশালের রান তখন ৭৯। তানভিরের বলে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ৩১ বলের ইনিংসে তিনি হাঁকান ১১টি চার। ছক্কা একটি।
সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন ক্রিস গেইল। সাথে ছিলেন কিপার ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান। এই জুটি দলকে নিয়ে যান ১০৭ রান পর্যন্ত। শুরুতে ধীর গতির হলেও আস্তে আস্তে স্বরুপে ফিরতে চলেছিলেন গেইল। তাতে বাধ সাধলেন তারই স্বদেশী সুনিল নারাইন। ১২.৫ ওভারে এলবির ফাদে ফেলেন গেইলকে। রিভিউ নিয়েও কাজ হয়নি, ব্যর্থ মনোরথে সাজঘরে ফেরেন গেইল ৩১ বলে দুই ছক্কা ও এক চারে ৩৩ রান করে।
এরপর বড় ভরসার জায়গা সাকিবও হতাশ করেন দলকে। তানভিরের বলে মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বরিশাল অধিনায়ক। সাত বলে এক চারে তার রান মাত্র ৭। বল ও রানের ব্যবধান তখন খুব সামান্য। কিন্তু দলীয় ১৩৬ রানের মধ্যে আরো দুটি উইকেট পড়ে গেলে চাপে পড়ে যায় বরিশাল। ছয় রানের মধ্যে পড়ে তিন উইকেট।
১৩ বলে ১৪ রান করে রান আউট নুরুল হাসান সোহান। পরের ওভারে ব্রাভোকে (২ বলে এক রান) এলবির ফাঁদে ফেলেন সুনীল নারাইন। ১২ ওভারে বরিশালের তখন দরকার ১৬ রান। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শান্তকে এলবিডব্লিউ করেন ফিজ। এই ওভারে আসে মাত্র ৬ রান।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার পড়ে ৬ বলে ১০ রান। ক্রিজে বরিশালের তখন মুজিব উর রহমান ও তৌহিদ হৃদয়। বল করতে আসেন শহিদুল ইসলাম। স্ট্রাইক প্রান্তে হৃদয়। প্রথম বল ডট। পরের দুই বলে দুই রান। পরেরটি ওয়াইড। শেষ বলে দরকার ছিল ৩ রান। হৃদয় নিতে পারেন মাত্র এক রান। দুই রান নিতে গিয়ে তিনি হন রান আউট। ১ রানের রুদ্ধশ্বাস জয়ে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা।
এর আগে টস জিতে ব্যাট হাতে শুরুটা উড়ন্ত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের। তার মূল কারিগর সেই সুনীল নারাইন। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার মাচে যার ব্যাটে উঠেছিল ঝড়। করেছিলেন বিপিএলের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। অপর প্রান্তে লিটন দাস অনেকটা নিষ্ক্রিয় থাকলেও নারাইন এদিনও ছিলেন মারমুখি। প্রথম থেকে শুরু করেন চার-চার ছক্কার ফুলঝুড়ি।
রান উঠছে তরতরিয়ে। এমন অবস্থায় কুমিল্লার উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন বরিশাল অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বোল্ড করেন দেন লিটন দাসকে (৬ বলে ৪ রান)। জয়কে সাথে নিয়ে নারাইনের ঝড়ো ইনিংস তখনো চলছে। আগের দিন ১৩ বলে ফিফটি করা নারাইন এদিন ৫০ পূর্ণ করেন ২১ বলে। এর মধ্যে ছিল পাঁচটি চার ও চারটি ছক্কার মার।
ফিফটির পরপরই নারাইনকে ফিরিয়ে বরিশাল শিবিরে স্বস্তি এনে দেন মেহেদী হাসান রানা। কুমিল্লার রান তখন ৬৯। রানার স্লোয়ারে শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ক্যারিবীয় এই অলরাউন্ডার। যাওয়ার আগে করে যান ২৩ বলে ৫৭ রানের মারকাটারি ইনিংস। তার ইনিংস সাজানো সমান পাঁচটি করে চার ও ছক্কায়।
নারাইনের বিদায়ের পর কুমিল্লার ব্যাটিং লাইনআপে যেন মোড়ক লাগে। দলীয় ৯৫ রানের মধ্যে নেই ছয় উইকেট। দলীয় ৭৩ রানে দুর্ভাগ্যজনক রান আউটের শিকার মাহমুদুল হাসান জয় (৭ বলে ৮ রান)। ফাইনালের মঞ্চে জ্বলে উঠতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার ফাফ ডুপ্লেসিস। আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমানের বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ডুপ্লেসিস। সাত বলে তিনি করেন মাত্র তিন রান।
অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ফাইনালে থেকেছেন নিষ্প্রভ। ১২ বলে ১২ রানে তিনি ফেরেন সাজঘরে ব্রাভোর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। পরের ওভারেই ফেরেন রানের খাতা খুলতে না পারা আরিফুল হক। মুজিবের বলে তিনি হন বোল্ড।
সপ্তম উইকেটে হাল ধরার চেষ্টা করেন ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন আলী ও আবু হায়দার রনি। এই জুটি দলকে এক শ’ পার করে। এই জুটিতেই চ্যালেঞ্জিং স্কোরে পৌঁছায় কুমিল্লা। যদিও শেষ ওভারটি কুমিল্লার জন্য হতাশার ছিল। শফিকুল ইসলামের বলে এই ওভারে বিদায় নেয় কুমিল্লার তিন ব্যাটার। রান আসে মাত্র তিন।
দুই রান নিতে গিয়ে প্রথম বলে রান আউট হয়ে ফেরেন মঈন আলী। ৩২ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় তিনি করেন ৩৮ রান। সপ্তম উইকেট জুটিতে আসে সর্বোচ্চ ৫৩ রান। তৃতীয় বলে আউট আবু হায়দার রনি। শফিকুলের হাতেই ক্যাচ দেন ২৭ বলে একটি করে চার ও ছক্কা হাঁকানো রনি। শহিদুল, তানভির ও মোস্তাফিজ রানের খাতাই খুলতে পারেননি। ৯ উইকেটে কুমিল্লার ইনিংস শেষ হয় ১৫১ রানে। বল হাতে বরিশালের হয়ে মুজিব ও শফিকুল দুটি, সাকিব, ব্রাভো ও রানা নেন একটি করে উইকেট।