ধর্মনিরপেক্ষ বিশাল আয়তনের ভারতে নামাজ পড়ার জায়গা পাচ্ছেন না মুসলমানরা। সরকারিভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া কয়েকটি স্থানে জুমা আদায় করা হলেও হিন্দু বিক্ষোভকারীদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। তাদের দাবি, এভাবে প্রার্থনা করায় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যাতায়াতে সমস্যা হয়। শিশুদের ক্রিকেট খেলতেও সমস্যা হয়।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির নিকটবর্তী আধুনিক শহর গুরগাঁও। সেখানেই বেশ কিছুদিন ধরে চলছে এমন উৎপাত। শহরটি নতুন করে সাজানোর সময় মুসলমানদের নামাজের জন্য জায়গা রাখাই হয়নি বলা চলে। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে কোনোভাবে এই সমস্যার সমাধান করা হলেও জুমার নামাজ আদায় করা নিয়ে বাধে বিপত্তি। পরে মুসলমানদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কয়েকটি জায়গায় জুমা পড়ার সুযোগ দেয়া হয়।
কিন্তু সেই জায়গাগুলোও উগ্র হিন্দুদের টার্গেট হয়ে পড়েছে। নামাজের সময় নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছে তারা। স্থানীয় প্রশাসনও তাদের সমর্থন করছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে হরিয়ানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, গুরগাঁওয়ে বাইরে (খোলা জায়গায়) প্রার্থনা আর সহ্য করা হবে না। এ অবস্থায় জুমার নামাজ আদায় করার জন্য একটু জায়গার সংকুলান করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানকার মুসলমানদের জন্য।

পর্যাপ্ত মসজিদ না থাকায় জুমা পড়তে হয় খোলা জায়গায়
জানা গেছে, পাঁচ লাখ মুসলিম অধ্যুষিত শহরটিতে মসজিদ রয়েছে মাত্র ১৫টি। এমনকি মুসলিম জনবহুল এলাকাগুলোতে মসজিদের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। এ অবস্থায় আরো মসজিদ নির্মাণের অনুমতি চাওয়া হলেও তাতে সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে বাধ্য হয়ে জুমার নামাজ আদায় করতে হচ্ছে খোলা জায়গায়। কিন্তু উগ্র হিন্দুরা ওইসব স্থানে গোবর ছিটিয়ে যেমন ইবাদতে বিঘ্ন ঘটিয়েছে, তেমনি মুসল্লিদের সন্ত্রাসী ও পাকিস্তানি বলে অভিহিত করে ক্ষেপানোর চেষ্টা করছে।
গত সপ্তাহে উগ্রবাদী হিন্দু নেতা যুক্ত সংঘর্ষ সমিতির চেয়ারম্যান মহাবীর ভরদ্বাজ চলমান সমস্যা সমাধানের অদ্ভূত এক সমাধান প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেন, মুসলমানদের ধর্মান্তরিত করা উচিত। তাদের প্রার্থনা করার জন্য মন্দির থাকবে এবং এই (নামাজ পড়ার) সমস্যাটি শেষ হয়ে যাবে।
এ অবস্থায় গুরগাঁওয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় মুসলিম নেতা সাবির কাসমি এএফপিকে বলেছেন, সরকার যদি শিগগির এই সমস্যার সমাধান না করে, তাহলে সংকট আরো জটিল ও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।
ভারতের রাজনৈতিক ভাষ্যকার আরতি আর. জেরাথ এ প্রসঙ্গে বলেন, ভারতকে বহুত্ববাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশ থেকে হিন্দু দেশে রূপান্তর করার এজেন্ডা চলছে। মুসলিম পরিচয়ের যে কোনো কিছু সে প্রকল্পের অংশ হতে চলেছে। এটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতামূলক কোনো প্রকল্প নয়, তবে অবশ্যই এই সরকারের সমর্থকদের একটি প্রকল্প, যারা সরকারের কাছ থেকে নিরঙ্কুশ সমর্থন পান।






