অর্থনৈতিক সুপার পাওয়ার হওয়ার অভিলাষ থেকে তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে চীন। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের আওতায় পাকিস্তানে যে ব্যাপক বিনিয়োগ করা হয়েছে তার জন্যও একটি স্থিতিশীল আফগানিস্তান প্রয়োজন। এছাড়া আফগানিস্তানের তামা ও তেলের খনিতে বিনিয়োগ করেছে চীন। এসব কারণেই আফগানিস্তানের তালেবান নেতৃত্বকে ১৯৯৬ সালে স্বীকৃতি না দিলেও এবার তাদের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে চীনা কর্তৃপক্ষকে। মঙ্গলবার আল-জাজিরার পক্ষ থেকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে। ওই সময় চীনা কর্তৃপক্ষ তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। তারা বছরের পর বছর আফগানিস্তানে অবস্থিত চীনা দূতাবাস বন্ধ করে রাখে। কিন্তু, এবার চীনই প্রথম দেশগুলোর অন্যতম যারা আফগানিস্তানের তালেবান কর্তৃপক্ষকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে।
চীনের এ স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় দু’সপ্তাহ আগে। ওই সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই একটি তালেবান প্রতিনিধি দলকে দেশটির উত্তরাঞ্চলের বন্দর তিয়ানজিনে স্বাগত জানান। ওই সময় তালেবানরা আশরাফ গনির সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছিল। ওয়াং ইয়ের এ পদক্ষেপের মাধ্যমে তালেবানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পথ অবারিত হয়ে যায়।
বর্তমানের চীন ১৪.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশ। ১৯৯৬ সালের তুলনায় তাদের অর্থনীতির আকার এখন ১৭ গুণ বড়। এখন তারা এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বাণিজ্যিক ও অবকাঠামোগত বিনিয়োগ করছে।
চীন নিজেও ইসলামী উগ্রবাদের ভয়ে আছে। উইঘুর সংখ্যালঘুদের ওপর ভিত্তি করে এ উগ্রবাদের শঙ্কায় আছে দেশটি। এসব কারণে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এমন একটি সুযোগ খুঁজছেন যাতে করে মার্কিনবিরোধী অবস্থান নিয়ে এ উগ্রবাদ দমন করা যায়। এর মাধ্যমে তিনি মার্কিন প্রভাবকে চীন সীমান্ত থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে। উইঘুরদের সমর্থন দেয়া মার্কিন বাহিনীকে চীন সীমান্ত থেকে দূরে রাখাও তার লক্ষ্য।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটন ভিত্তিক স্টিম সন সেন্টারের চীন বিশেষজ্ঞ ইয়ান সান বলেন, ২০ বছর আগে চীন বৈশ্বিক শক্তি ছিল না। তাই আফগানিস্তানে কি হলো তা নিয়ে চীন ভাবত না। কিন্তু, আজ চীনের সামনে একটি নতুন সময় এসেছে। উইঘুর ইস্যু, অর্থনীতি ও চীনের বৈশ্বিক পরাশক্তি হওয়ার অভিলাষ দেশটিকে আফগানিস্তানে টেনে আনবে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র হুয়া চুনিং সোমবার বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চীন আশা করছে তালেবানরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠন করতে পারবে যাতে করে আফগানিস্তানে শান্তি আসবে।
এ বক্তব্যের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে চীন আফগানিস্তানে পশ্চিমাদের মতো সরাসরি হস্তক্ষেপ না করে আলোচনার মাধ্যমে শান্তির পথ খুঁজছে।
এছাড়া আফগানিস্তানে মার্কিন অর্থে নির্মিত অবকাঠামো থেকে সুবিধা লাভ করতে চায় চীন। চীন চায় একটি স্থিতিশীল আফগানিস্তান। কারণ, চীন দেশটির তামা ও তেলের খনিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। এর মাধ্যমে চীন দেশটিতে তার অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে চায়।
এছাড়া চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের আওতায় পাকিস্তানে ৫০ বিলিয়ন বিনিয়োগ করা হয়েছে যাতে করে দেশটি ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করতে পারে। এসব বিনিয়োগ রক্ষার জন্যও একটি স্থিতিশীল আফগানিস্তান প্রয়োজন। এ সম্পর্কে চীনের সমকালীন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক ফু শিয়াওকিয়াং বলেন, আফগানিস্তানের অস্থিতিশীলতা পাকিস্তান, উজবেকিস্তান ও চীনের পশ্চিম সীমান্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে তাই দেশটিতে শান্তি প্রয়োজন।
এদিকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সাথে বৈঠকের সময় তালেবান আলোচক মোল্লা আবদুল গনি বারদারকে চাপ দেন যেন তারা স্পষ্টভাবে উইঘুর বিদ্রোহীদের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে। এর প্রেক্ষিতে আবদুল গনি বারদার চীনকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে আফগানিস্তানের মাটি এমন কোনো শক্তিকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না যারা দেশটির জন্য ক্ষতিকর। সূত্র : আল-জাজিরা