মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমি একজন অনার্সের ছাত্র। সকল অনার্সের শিক্ষার্থী এখন মানসিক চাপের মধ্যে আছে। ইতিমধ্যে আমরা ২০ তম ছুটির শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ১৪ মাস (৪৫৩ দিন) পিছিয়ে গেছি। যে ক্ষতির ঘাটতি কখনও পূরণ করা যাবে না।
করোনার মধ্যে ইতিমধ্যে অনলাইনে বিভিন্ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে অনেক শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এখান থেকেই বুঝা যায়, অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের কতটুকু উপস্থিতি ছিল। বাংলাদেশে জরিপ করলে দেখা যাবে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের আওতাভুক্ত নয়। বর্তমান যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে মনে হয় না, আগামী জুলাই বা আগস্ট মাসের আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে।
সম্প্রতি (১০ মে ২০২১) প্রকাশিত পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ গবেষণা জরিপে দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬০ লক্ষ শিক্ষার্থী শিখতে না পারার ঝুঁকিতে রয়েছে।
পুনরুদ্ধার কর্মসূচি হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীদের না শেখালে তারা ঝরে পড়বে।
করোনা পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক হয় তাহলে দেখা যাবে আমাদের জীবন থেকে আরও অনেক সময় চলে যাবে। আমাদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি কিছু দিনের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাওহোক তা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সঠিকভাবে মেনে নিবো ।
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। কিন্তু শিক্ষা যদি হয় অটোপাশ তবে জাতি হবে মেধা শূন্য। শিক্ষার্থীরা আজ বই-খাতা রেখে জীবিকার তাড়নায় কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। অনেকেই শিক্ষার আশা ছেড়ে দিচ্ছে। অপর দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। মাদক, ইয়াবা ও শিশু ধ্বংসাত্মক ডিভাইস তাদের নিত্য সঙ্গী হচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনি জানেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির জন্য অনেকের অর্থনৈতিক অবস্থাও সংকটে। কারো কারো পরিবার খাবারটুকুও সংগ্রহ করতে পারছে না। এই সময় যদি অনার্স পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করা হয় তাহলে অনেক পরিবার ফর্ম ফিলআপের টাকা দিতে পারবে না। যা তার পড়ালেখাকে হুমকির মুখে ফেলবে।
অনতিবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে না দিলে আবারও এসএসসি ও এইচএসসিতে অটোপাশ দিতে বাধ্য হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট বাড়বে। তাই অটোপাশ নয়, সেশনজট নয়। শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় মনযোগ ফিরাতে অতিসত্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে।
আবার ১ বছর সময় বাড়ানোও সম্ভব নয়। কেননা আমরা অনেক পিছয়ে গেছি। তাই সকল শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে আমি আপনার কাছে চারটি প্রস্তাব তুলে ধরছি।
১. অনতিবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক। ২. আর্থিক সহযোগীতা করা হোক।
৩. আমাদের মানসিক চাপ নিরসনের জন্য সার্বিকভাবে বিবেচনা করে সিলেবাস কমিয়ে দেয়া হোক। ৪. অথবা এসাইনমেন্ট এর মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হউক।
আপনিই আমাদের শেষ ভরসা। আপনি এখন পর্যন্ত যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছেন সেগুলো আমাদের পক্ষে ছিল। তাই উপরের বিষয়গুলো বিবেচনা করার বিনীত অনুরোধ করছি।
নোমান আহমাদ নাঈম, সরকারি বিএম কলেজ, বরিশাল