সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮)। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। ‘কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি ও সন্তানহীন নামাজি নারীর জন্য পাত্র চাই’- সংবাদপত্রে এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বহু মানুষের কাছ থেকে ৩০ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।সম্প্রতি ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রমাণসহ গ্রেফতার হয়েছেন এ নারী।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে সাদিয়াকে আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অভিযানে তার কাছ থেকে ভুক্তভোগীদের অনেক পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, ৩টি মেমরি কার্ড, ৭টি সিল, অসংখ্য সিম ও প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাত করা টাকার একটি হিসাব বই উদ্ধার করেছে সিআইডি।
জান্নাতসহ পাঁচজনকে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। অভিযুক্তরা হলেন সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল, জান্নাতের দ্বিতীয় স্বামী হাসান ওরফে জিহাদ, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, ফিরোজ মিয়া ও তামান্না।
সিআইডির মিডিয়া কর্মকর্তা সিনিয়র এসপি জিসানুল হক বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিয়ের নামে প্রতারণার অভিযোগে জান্নাত নামের এক নারী ও তার স্বামী এবং তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসএসসি পাস করতে না পারা জান্নাত এ পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করা স্বামীকে নিয়ে নামেন এই প্রতারণায়।
সিনিয়র এসপি জিসানুল হক জানান, চলতি বছরের আগস্ট মাসে একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কানাডার নাগরিক, ডিভোর্সি সন্তানহীন, নামাজি পাত্রীর জন্য ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্র চেয়ে একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। আগ্রহীদের একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে বারিধারার একটি বাড়িতে যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরে সিআইডির কাছে অভিযোগ দেয়া এক ভুক্তভোগী ওই বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেন। পরে তার সঙ্গে গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করেন জান্নাত। এ সময় ভুক্তভোগী নাজির দেড় লাখ টাকা ও পাসপোর্ট তুলে দেন জান্নাতের হাতে।
একইভাবে অন্য একজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় প্রথমে জান্নাতকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, ডিএইচএল’র মাধ্যমে ওই টাকা ফেরত আনতে ভুক্তভোগী নাজির হোসেনের কাছ থেকে বিভিন্ন তারিখে ট্যাক্স/ভ্যাট/ডিএইচএল বিল বাবদ সর্বমোট ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর ফোন বন্ধ করে দেয় প্রতারক সাদিয়া।
তিনি বলেন, এভাবেই সে (সাদিয়া ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। সে তার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মিলে এই প্রতারণা শুরু করে। ঢাকা ও এর আশপাশে তার ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান আমরা পেয়েছি।
সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, গত ১১ বছরে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে সাদিয়া। তার একটি হিসাব খাতা জব্দ করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ২৫-৩০ কোটি টাকার হিসাব আমরা পেয়েছি। তার চারটি ব্যাংক হিসাবে আমরা ১ কোটি টাকা পেয়েছি।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পরই প্রতারক সাদিয়া মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দিত। আমরা এই চক্রের আরও সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।