চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০২১ এর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির মেয়র পদপ্রার্থী আলহাজ মুহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম ২৯ দফার এ ইশতেহার প্রকাশ করেন। তিনি ‘হাতপাখা’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
১. সিটি কর্পোরেশনের সকল ক্ষেত্রে শুধু দুর্নীতি দমন নয়, দুর্নীতি মূলোৎপাটন কর্মসূচি গ্রহণ: নগর উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হল দুর্নীতি। দুর্নীতিকে আড়াল করতে সন্ত্রাস, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয় নেওয়া হয়। দুর্নীতির কারণে অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়। এই অপরিকল্পিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে মূলত জনগণের আমানতের খেয়ানত করা হয়। তাই সর্বাগ্রে আমাদের কাজ হবে দুর্নীতি নির্মূলে কর্মসূচি গ্রহণ করা। স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মূলোৎপাটন করা। এ লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ উত্থাপন করা হলো:
ক. সিটি কর্পোরেশনে সংঘটিত দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয় অশুভ প্রভাব-প্রতিপত্তির বিরুদ্ধে নগরবাসীকে সচেতন করা হবে। এ কাজে সকল প্রচারযন্ত্র, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মসজিদের ইমাম, আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখসহ অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের সমন্বিত ভ‚মিকা পালনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
খ. নগরবাসীর অভ্যন্তরীণ মূল্যবোধকে উন্নত করার জন্য ব্যবহারিক জীবনে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করা হবে। কারণ একজন সত্যিকারের ধার্মিক মানুষ কখনও অন্যের ক্ষতি তো দূরের কথা দেশ ও মানুষের অকল্যাণের কথা চিন্তাও করতে পারে না, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসসহ কোনো অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে পারে না।
গ. সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণকে সততা ও যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হবে এবং যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশংসাপত্রসহ পুরস্কৃত করা হবে।
ঘ. সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কোনো জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যদি কোনো দুর্নীতি বা অনৈতিক কর্মকাÐে লিপ্ত হয়, তবে সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে আইনগতভাবে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঙ. সিটি কর্পোরেশনের ক্ষমতাকে ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে।
চ. ‘ওয়ান স্টেপ সেবা প্রদান’ বা একটেবিলে গিয়ে যাতে লোকজন এক একটা কাজ সুসম্পন্ন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছ. অফিস পরিচালনায় আমূল পরিবর্তন আনা হবে। নিম্ন কর্মি থেকে বড় কর্মকর্তা কেউই নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে ফাইল বা কার্যাদেশ ধরে রাখতে পারবে না।
জ. জনসাধারণের কাজ-কর্ম সরল ও সহজ করা হবে। অহেতুক সময় ক্ষেপণ যাতে না করতে হয় তার জন্য ন্যূনতম কাগজপত্রের ভিত্তিতে অফিস আদেশ জারির ব্যবস্থা করা হবে।
ঝ. দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রতিটি অফিসে ‘অভিযোগ বাক্স’ স্থাপন করা হবে এবং মেয়র, প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সংরক্ষিত আসনের একজন কাউন্সিলর, দুইজন সাধারণ কাউন্সিলর মোট ৫ সদস্য বিশিষ্ট টিম অভিযোগ পত্রগুলো দ্রæত তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ঞ. গোপনীয়ভাবে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর ও চাঁদাবাজদের খোঁজ-খবর নিয়ে প্রাথমিকভাবে চারিত্রিক সংশোধনের চেষ্টা করা হবে। সংশোধিত না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ট. চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে টেন্ডার হবে, কিন্তু টেন্ডারবাজি করতে দেওয়া হবে না।
ঠ. অনলাইন ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হবে।
২. ভেজালমুক্ত খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও ইনসাফপূর্ণ বাজার নিয়ন্ত্রণ: খাদ্য মানুষের বেঁচে থাকার জন্য একান্ত অপরিহার্য, যদি সে খাদ্য ভেজালমুক্ত হয়। ভেজালযুক্ত খাদ্য বিভিন্ন রোগের কারণই শুধু নয়, জীবনসংহারীও বটে। এজন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ সিটিতে ভেজালমুক্ত খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। যা দেশের জন্য হবে একটি রোল মডেল। অনেক ওয়ার্ড এবং মহল্লায় ওয়াসার পানি মারাত্মক দূষিত আকার ধারণ করে এর মাধ্যমে অনেক রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হয়। এর থেকে উত্তোরনের জন্য ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে এবং কোথাও দূষিত পানি দেখা দিলে তা নিরসনের লক্ষ্যে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও ইনসাফভিত্তিক বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যাতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হয়।
৩. নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন: দেশি-বিদেশি নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। তাঁদের পরামর্শে এবং বাস্তবতার নিরিখে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আধুনিক মেগাসিটিতে রূপান্তর করা হবে। এক্ষেত্রে ইস্তাম্বুল, হংকং, সিংগাপুর ও কুয়ালালামপুরকে অনুসরণ করা হবে।
৪. ‘ইউটিলিটি সার্ভিস’ তথা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ: নগরবাসীর জীবনমান সুন্দর-স্বাচ্ছন্দ রাখার স্বার্থে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সার্বক্ষণিক সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। রাস্তা-ঘাট ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করা হবে।
৫. জনজীবনকে শঙ্কামুক্ত ও নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ: জনজীবন শঙ্কামুক্ত ও নিরাপদ রাখার স্বার্থে সকল প্রকার সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি নির্মূল করা হবে। মাদক ও ইভটিজিংসহ সকল প্রকার অপসংস্কৃতিক কর্মকাÐ কঠোর হস্তে দমন করা হবে। জাতির ভবিষ্যৎ ছাত্র ও যুবসমাজের চরিত্র-বিধ্বংসী কর্মকাÐ কোনোভাবে বরদাশত করা হবে না।
৬. শ্রমিকের প্রকৃত মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা: এদেশে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ শ্রমিক। চট্টগ্রাম সিটিতে শ্রমিকের সংখ্যা আরও বেশি। শ্রমিকদের অবহেলা, অসম্মান করলে এবং তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখলে কোনো দেশ, কোনো অঞ্চল এবং কোনো শহর কখনো উন্নতি লাভ করতে পারে না। এজন্য শ্রমিকদের সাথে সুন্দর ব্যবহারের আচরণবিধি করা হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার যাতে ব্যাহত না হয় এ ব্যাপারেও একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হবে।
৭. নারীর মর্যাদা সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান: মায়ের জাতি নারী-সমাজের মর্যাদা ক্ষুণœকারী যেমনÑ নারী নির্যাতন, নারী অপহরণ, নারী ধর্ষণসহ এ ধরনের জঘন্য কর্মকাÐসমূহ কঠোর হস্তে দমন করা হবে। যৌতুকমুক্ত চট্টগ্রাম সিটি ঘোষণা করা হবে। মায়ের জাতি নারী-সমাজের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে বিজ্ঞাপনের নামে নারীদের অশোভনীয়-অশ্লীল প্রদর্শনী বন্ধ করা হবে। লোকাল বাসে ১০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে। এছাড়া মহিলাদের জন্য আলাদা বাসের সুব্যবস্থা করা হবে। নারী-শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বতন্ত্র মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা, মেডিকেল কলেজ ও টেকনিক্যাল কলেজ নির্মাণ করা হবে।
৮. গরীব-দুঃখী অসহায় ব্যক্তিদের জন্য সুদমুক্ত ঋণ প্রদান: পঙ্গু ও কর্মাক্ষম ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ভিক্ষুকমুক্ত মহানগরী ঘোষণা করা হবে। স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে রিক্সা, ভ্যান, টেম্পু, সিএনজি ও ট্যাক্সি চালকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে মালিকানায় উন্নীত করা হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকেও এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হবে। সাথে সাথে বেকারদের কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করণের লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৯. যানজট নিরসনকরণ: যানজট নিরসনে পুলিশ-প্রশানের সাথে সমন্বয় করে ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সাথে পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে প্রয়োজনীয় ফ্লাইওভার ও ওভারব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
১০. সংখ্যালঘুদের সার্বিক অধিকার নিশ্চিতকরণ: সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। তাদের জানমাল ও সম্মানের যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তারা যাতে শঙ্কামুক্ত জীবন-যাপন করতে পারেন তার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
১১. ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা: সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সকল ধরণের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক হানাহানি ও সংঘর্ষ নিরসনকল্পে সকল ধর্ম-বর্ণ ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে পারস্পরিক সহাবস্থান সম্প্রীতি-সৌহার্দ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুগোপযোগী ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ লক্ষ্যে সকল ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ বৈঠকের মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে যেকোনো প্রকার সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক উস্কানি ও সংঘাত বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
১২. সিটি কর্পোরেশনের স্বার্থ ও আমানত রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান: সিটি কর্পোরেশনের বেদখল হয়ে যাওয়া সকল সম্পত্তি পুর্নরুদ্ধার করে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় আনা হবে। অবৈধ স্থাপনাসমূহ আইন অনুযায়ী ভেঙে ফেলা হবে। সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কর্মকাÐ নুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য ন্যায্য ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।
১৩. ব্যবসায়িক কর্মকাÐ গতিশীল ও নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ: সিটি কর্পোরেশনের আওতায় সকল ব্যবসায়ী যাতে সহজ, নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবসা করতে পারেন তার জন্য সুষ্ঠু, সুন্দর ও উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হবে। শিল্প সুরক্ষা ও বিকাশে এবং মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়নে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চাঁদাবাজরা যাতে নিরাপদে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে থাকা ব্যবসায়ীদের কোনো রকম ঝামেলা করতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
১৪. মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ: সুস্বাস্থ্য, সুশিক্ষা ও চরিত্রের উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে আজকের শিশুরা যাতে আগামীতে দেশের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠতে পারে এবং দেশের উন্নয়নে বলিষ্ঠ অবদান রাখতে পারে সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মায়েরা যাতে সহজে সুচিকিৎসা পেতে পারেন সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
১৫. ক্রীড়া ও সংস্কৃতির বিকাশ: পীর-আউলিয়ার পূন্যভ‚মি এবং মসজিদের নগরী চট্টগ্রাম সিটির জনগণ একটি সুস্থ ও গতিশীল সংস্কৃতি লালন করে আসছেন। আমাদের সংস্কৃতির এ ঐতিহ্যকে রক্ষা, লালন ও বিকশিতকরণ এবং যেকোন অপসাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী নয় এমন সকল প্রাণবন্ত ক্রীড়া ও শিল্পকলা বিকাশের পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।
১৬. ‘ক্লিন চট্টগ্রাম গ্রিন চট্টগ্রাম: পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে পরিবেশ দূষণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অবাধে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা হবে। মহানগরীকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এবং ধুলো-বালিমুক্ত রাখার সুব্যবস্থা করা হবে এবং পাহাড় কাটা বন্ধ, বৃক্ষ নিধন রোধ ও বৃক্ষ-রোপনের বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
১৭. নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও জোয়ারের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি: একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়। এজন্য নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাই দায়ী। তাছাড়া চট্টগ্রাম জোয়ারের পানির কারণে নিদিষ্ট সময়ে অফিস আদালত পৌঁছা সম্ভব হচ্ছে না। জোয়ারের পানি যেন রাস্তায় না আসে তার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশি-বিদেশি নগর বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে নগরীর জলাবদ্ধতা ও জোয়ার পানি দূরিকরণে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৮. রিক্সা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ির নিবন্ধন ফি- মওকুফ: ক্ষুদ্র যানবাহন; রিক্সা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ফি মওকুফ করে দেওয়া হবে। যাতে গরীব যানবাহন চালকগণের ওপর মালিকদের হয়রানি ও তাদের অর্থকষ্ট লাঘব হয়।
১৯. হকারদের জন্য স্থায়ী বরাদ্দ ও ভ্রাম্যমান হকারদের পরিচয়পত্র প্রদান: ভ্রাম্যমান হকারদের হয়রানি বন্ধের জন্য তাদের পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে। পরিচয়পত্রধারীদের কোনো রকমের পুলিশি এবং অন্যান্য অশুভ শক্তির হয়রানি বন্ধের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হকারদের স্থায়ী পুনর্বাসনের আগে যে যেখানে আছে সেখানে থেকেই ব্যবসা চালিয়ে যাবে। অযথা কাউকে হয়রানি করতে দেওয়া হবে না।
২০. বিশ্বের বৃহত্তম নর্দমা খ্যাত কর্ণফুলীকে পরিচ্ছন্ন নদীতে পরিণত করা: কর্ণফুলী নদী আজ নোংরা-দুর্গন্ধময় নর্দমায় পরিণত হয়েছে। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম ঐতিহ্য ও ইতিহাস হচ্ছে, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত। আর এখন অবস্থা হলো বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর তীরে অবস্থিত। নদীর সন্নিকটে গেলে নৌকা কিংবা লঞ্চে আরোহন করলে বমি আসে, রুমাল দিয়ে নাক চেপে রাখতে হয়। এ কলঙ্ক মোচনের জন্য কর্ণফুলী নর্দমাকে মনোমুগ্ধকর ও পরিষ্কার কর্ণফুলী নদীতে রূপান্তর করা হবে।
এ কর্মসূচি বাস্তবায়ণের জন্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নদী এবং পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে পানি দূষণরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেসব নর্দমার ময়লা পানি কর্ণফুলী নদীতে পতিত হয় সেসব নর্দমার পানি সরাসরি যাতে নদীতে পতিত হতে না পারে সে লক্ষ্যে নদীর দুই কিনারা-ঘেঁষে দুইটি শক্তিশালী পয়ঃনিষ্কাশন ড্রেন নির্মাণ করা হবে। নিষ্কাশন ড্রেন দিয়ে নদীর দুই পাড়ের সকল ময়লা পানি বহু দূরে নিয়ে সর্বাধুনিক ডাম্প স্থাপন করে দূষিত পানি রিসাইক্লিন করে জাপানসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে।
২১. পথিক এবং ভ্রাম্যমান মানুষের জন্য নতুন ১০০০ স্যানিটারি টয়লেট নির্মাণ করা: ভাসমান ও ভ্রাম্যমান মানুষেরা যাতে রাস্তা-ঘাটে পায়খানা-প্রসাব করে পরিবেশ নোংরা করতে না পারে এবং ভ্রাম্যমান ও পথিকদের সুবিধার্থে নতুন ১০০০ স্যানিটারি টয়লেট নির্মাণ করা হবে। যা সিটি কর্পোরেশনের তত্ত¡াবধানে পরিচালিত হবে।
২২. সভা-সমাবেশ করার জন্য ২০টি মাঠ বরাদ্দ করা: গণতান্ত্রিক দেশে সভা-সমাবেশ করা মৌলিক অধিকার। রাস্তাঘাটে সভা-সমাবেশ করলে যান চলাচলে অনেক প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি হয়। লোকজনের অনেক কষ্ট হয়। জনসভা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য যাতে কোনোভাবে রাস্তা-ঘাট বন্ধ এবং অহেতুক যানজট না হয় সে লক্ষ্যে ২০টি মাঠ বরাদ্দ করা হবে।
২৩. সু-স্বাস্থ্য রক্ষায় সুপেয় পানির প্রয়োজন পূরণে প্রতিটি থানায় ১টি করে গভীর নলক‚প স্থাপন করা হবে: পানির লাইন এবং সুয়ারেজ লাইন যাতে কখনও একাকার হয়ে না যায় তার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওয়াসার সাথে সমন্বয় করে চট্টগ্রাম মহানগরের প্রতিটি থানায় ১টি করে গভীর নলক‚প স্থাপন করা হবে। বস্তি এলাকায় পানির সরবরাহ সহজলভ্য করা হবে।
২৪. ৩০% হোল্ডিং ট্যাক্স কমানো হবে: বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটি নীতিমালা করা হবে। যাতে উভয় পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। বাসা ভাড়া সহনশীল অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য বাসাবাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স ৩০% কমানো হবে।
২৫. সিএনজি লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা: যাত্রীসেবা উন্নত করণের লক্ষ্যে বিআরটির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিএনজির লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা হবে। যাতে মালিকরা ড্রাইভারের কাছ থেকে দৈনিক জমার নির্দিষ্ট টাকা ন্যায়-সংগতভাবে নিতে পারেন। মিটার ব্যবহারে বিশেষ নীতিমালা প্রনয়ন করা হবে যাতে মালিক ও চালকদের যথাযথ স্বার্থ সংরক্ষিত হয়।
২৬. প্রতিটি থানায় ১টি করে খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা: খেলা-ধুলার মানোন্নয়নের জন্য প্রতিটি থানায় একটি করে উন্নতমানের খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা হবে।
২৭. ধুলো-ধোঁয়া, মশা, জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে টাস্ক ফোর্স গঠন: ধুলো, ধোঁয়া, মশা, জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে প্রতিটি বিষয়ে একটি করে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে। যাতে তড়িৎ গতিতে উপরোক্ত সমস্যাগুলো নিরসন করা যায়। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের সাথে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
২৮. সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন ছোট-বড় সকল রাস্তা-ঘাট, পানির লাইন, ক্যাবল লাইন, ইলেক্ট্রিক লাইন, সুয়ারেজ লাইন ও আইল্যান্ডগুলো আন্তর্জাতিক মানসম্মত করা হবে।
২৯. ক্ষুদে টোকাইদের পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ: ক্ষুদে টোকাইদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ করে ফ্রি শিক্ষাসহ বিভিন্ন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।