শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব বিষয় বাদ দেওয়া, কাদিয়ানিদের সালানা জলসা বন্ধ ও তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা এবং পূর্ব ঘোষিত ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে নতুন করে আরও ৫ দফা দাবি এবং ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির সুরক্ষা আইন ২০২৩ (খসড়া) প্রণয়ন করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ফেনী সমিতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।
সম্মেলন থেকে হেফাজতের পক্ষ সরকারের কাছে ইসলামি কারিকুলাম প্রস্তাবনা আকারে তুলে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়
সংবাদ সম্মেলনে মুনাজাত পরিচালনা করেন হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।তিনি বলেন, আমরা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন মানব না।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব শায়েখ সাজিদুর রহমানের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২৪ প্রোগ্রামের আওতায় জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২৩ এর ওপর ভিত্তি করে সংকলিত পাঠ্যপুস্তক ইতোমধ্যেই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর সে দেশের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষানীতি বা শিক্ষাক্রমের বিপুল প্রভাব থাকে। নাগরিকদের চিন্তা-চেতনা, ধ্যানধারণা ও নীতি-নৈতিকতা গঠনে সে রাষ্ট্রের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার সু-গভীর প্রভাবের বিষয়টি অনস্বীকার্য। এ কারণেই রাষ্ট্রের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি সে দেশের সচেতন নাগরিকদের সজাগ দৃষ্টি ও অনেক প্রত্যাশা থাকে। বিশেষ করে আলেম সমাজ ও তৌহিদি জনতার প্রাণের দাবি থাকে, জাতীয় শিক্ষাক্রম কোনোভাবেই যেন রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম এবং ইসলামি চিন্তা-চেতনার বিপরীত না হয়। জাতীয় শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে ইসলামি আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো চিন্তা যেন আমাদের সন্তান ও পরবর্তী প্রজন্মকে প্রভাবিত করতে সক্ষম না হয়।
তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, ইসলামফোবিয়ায় আক্রান্ত এক শ্রেণির ধর্মবিরোধী গোষ্ঠী এদেশের মুসলিম প্রজন্মের মন ও মানস থেকে ইসলামি ধ্যান-ধারণাকে চিরতরে মুছে দেওয়ার নীল নকশা বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠে পরে লেগেছে। আর তারা এই হীন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রমের অধীনে সংকলিত পাঠ্যপুস্তককে তাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলাম ঘনিষ্ঠ বিষয়বস্তুকে বাদ তো দিয়েছেই, অধিকন্তু ইসলামবিরোধী বিষয়বস্তুকে সুপরিকল্পিতভাবে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে দিয়েছে।
নতুনভাবে হেফাজতের ৫ দফা দাবিগুলো হলো-
১. জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব বিষয় বাদ দিতে হবে।
২. ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা আইন ২০২৩ (খসড়া) প্রণয়ন করা যাবে না।
৩. পঞ্চগড়ে কাদিয়ানিদের সালানা জলসা বন্ধ এবং তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।
৪. অবিলম্বে মাওলানা মামুনুল হকসহ সব কারাবন্দি আলেমদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং ২০১৩ সাল থেকে অদ্যাবধি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৫. হেফাজতের ১৩ দফা বাস্তবায়নে দ্রুত কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে।
কর্মসূচি
ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শ ও বর্তমান জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে জাতির ভবিষ্যৎ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হবে। সেখান থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মহিউদ্দিন রাব্বানী, সহসভাপতি মুফতি আহমদ আলী কাসেমী, সহসভাপতি আবদুল কাইয়ুম সুবহানী, মাওলানা মাহফুজুল হক, যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী, যুগ্ম মহাসচিব হারুন ইজাহার, যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস, মুজিবুর রহমান হামিদী, সহকারী মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিন, অর্থ সম্পাদক মুনির হোসাইন, সহঅর্থ সম্পাদক কামাল উদ্দিনসহ শীর্ষ নেতারা।