সরকারের দ্বিমুখী আচরণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হুমকিগ্রস্ত করেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান।
তিনি বলেন, ভাস্কর্য-বিরোধিতার আড়ালে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করতে চায়, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। জনগণকে সব ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ শক্তিকে প্রতিরোধ ও পরাজিত করার লড়াই এবং ভাত-ভোট ও গণতন্ত্রের লড়াই জোরদার করতে দেশপ্রেমিক, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সিপিবি সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান। প্রবীণ এই কমিউনিস্ট নেতা বলেন, ক্ষমতায় এসে এই সরকার উগ্র-সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী শক্তিকে কিছুটা দমন করতে পেরেছিল। তারপরও মাথাচাড়া দিচ্ছে মৌলবাদী অপশক্তি। জনগণ এই অপশক্তিকে কখনই গ্রহণ করেনি। এই অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা পাকিস্তান আমলেও জয়ী হয়েছি, এখনো জয়ী হব। ধর্মান্ধ মৌলবাদী অপশক্তিকে যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করতে জনগণকেই রাজপথে নামতে হবে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশকে পাকিস্তানি ধারায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এই অপশক্তির ভাস্কর্যবিরোধী অবস্থান বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করব। একাত্তরের এই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আওয়ামী লীগ ভোটারবিহীন নির্বাচন করে বোকামি করেছে। সাধারণভাবে নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগ জয়ী হতো। এর বিরুদ্ধে বিএনপি যে সন্ত্রাসের পথ বেঁছে নিয়েছে, তা মানুষ গ্রহণ করেনি। সাম্প্রতিক লড়াইয়ে দেশের বামপন্থিদের কিছুটা সাফল্য থাকলেও, জনগণকে একত্রিত করতে পারছে না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আওয়ামী লীগের বিকল্প হতে পারে বাম-গণতান্ত্রিক শক্তি। মনজুরুল আহসান খান মনে করেন, দুর্নীতি আর লুটপাটে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমেছে। তবে এখনো তাদের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় যায়নি। যদিও গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। এটা ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু এর সুবিধা যাতে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি না পায় সে দিকেও নজর দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, এখন ডিসেম্বর মাস, বাঙালির বিজয়ের মাস। ২০২০ সাল মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির বছর। ৩০ লাখ মানুষের আত্মাহুতি ও দুই লাখ মা-বোনের ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশ হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করি। সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানের মূল নীতি হিসেবে ঘোষিত হয়। কিন্তু গণ মানুষের সেই বিজয় ছিনতাই হয়ে যায়। কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক এই সভাপতি বলেন, ১৯৭৫ এর নির্মম রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পরাজিত পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ধারা পুনরায় পুনর্বাসিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী, বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ একই ধারায় দেশ পরিচালনা করছে। দেশে ধন বৈষম্য, শ্রেণি বৈষম্য পর্বত প্রমাণ। ২২ পরিবারের জায়গায় হাজার হাজার কোটিপতির জন্ম হয়েছে। খুন, দুর্নীতি, মাদক, ধর্ষণ ও সন্ত্রাস মহামারী রূপ নিয়েছে। বেকার, বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা সীমাহীন। মানুষের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও খাদ্যের নিরাপত্তা নাই। ভোট ও গণতন্ত্র নির্বাসনে। এর মধ্যেই সাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ধর্মান্ধ শক্তির হুমকি ও আস্ফালন অব্যাহত আছে। তাদের সঙ্গে সরকারের আপস ও তোষণ নীতির কারণে এদের সাহস ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।