আজ ১৫ আগষ্ট। ২০০২ সালের এ দিনটি বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণার বাতিঘর। রক্তের হরফে লেখা একটি দিন। আল্লাহর ঘর মসজিদ রক্ষার আন্দোলনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন কথিত ইসলামী মূল্যবোধের বিএনপি-জামাত সরকারের হিংস্র আঘাতে সেদিন ঝরে গিয়েছিল ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কর্মী শহীদ আবুল বাশার, সদস্য শহীদ রেজাউল করিম ঢালী সহ চারটি তাজা প্রাণ। প্রতি বছর এই দিনটিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র।
প্রতিবছর সারাদেশে জেলায় জেলায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হলেও এবছর করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব এর কারণে কর্মসূচি সংকীর্ণ করে শুধুমাত্র বায়তুল আজিম শহীদি মসজিদ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে সংগঠনটি। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী শহীদদের স্মরণে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।
ঘটনাটির সূত্রপাত ছিল একটি মসজিদ ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে। রাজধানী ঢাকার মালিবাগ টিএন্ডটি বায়তুল আজিম জামে মসজিদ। যা বর্তমানে শহীদী মসজিদ নামে নামকরণ করা হয়েছে। আল্লাহর ঘর মসজিদ ভেঙ্গে মার্কেট নির্মাণ করার দুঃসাহস দেখিয়েছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। এতে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের চোখ রাঙানি ও হুমকি-ধমকি কে পরোয়া না করে রাজপথে আন্দোলনে নেমেছিল আল্লাহর ঘর রক্ষা করার জন্য। সে আন্দোলনের ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কর্মী শহীদ হাফেজ আবুল বাশার, শহীদ রেজাউল করীম ঢালী, শহীদ ইয়াহইয়া এবং শহীদ জয়নাল আবেদীনকে নির্মমভাবে শহীদ হতে হয়। আনসারের গুলিতে আহত হয় আরো ৬০ জন। এভাবেই তাজা রক্তের বিনিময়ে সেদিন জোট সরকারের হিংস্র থাবা থেকে মসজিদ রক্ষা করতে হয়েছিল।
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি আহমাদ আবদুল কাইয়ূম ভাই সেদিনের স্মৃতিচারণ করেন এভাবেই…
“১৫ আগষ্ট ২০০২ বৃহস্পতিবার মসজিদ রক্ষার দাবীতে অনুষ্ঠিতব্য মালিবাগের সামনে পুলিশ ও আনসারের গুলিতে শহীদ হওয়ার ঘটনায় আমি কয়েকজন সাথীকে নিয়ে মালিবাগ ঘটনাস্থলে গিয়ে শহীদদের না দেখলেও তাদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত এ দৃশ্য দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলাম না। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চার শহীদের লাশ দেখে চোখের পানি সংবরণ করতে পারিনি। রক্ত মাখা জামাসহ লাশের প্রতিচ্ছবি আজো ভেসে ওঠে চোখের সামনে। আর লাশ থেকে বেহেস্তের খুশবু আজো আমাকে নাড়া দেয়। আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় হযরত সাহাবায়ে কিরামের কথা। তাদের তাঁজা রক্তে আজো দীন টিকে আছে। মহান আল্লাহর বাণী, “যারা আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করে তাদেরকে মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত। তোমরা তা বুঝতে পার না।” (সূরা আল বাকারা) আসলেই সেদিন শহীদদের লাশ দেখে মনে হয়নি তাঁরা মৃত। তাদের চেহারা আলোকিত ও হাস্যোজ্জ্বল। মনে হয় তাঁরা ঘুমিয়ে আছে। শহীদ ভাইদের কথা মনে হলে আজও নিরবে আত্মা কেঁদে উঠে, অশ্রুশিক্ত হয়ে যায় মন তখন ঠিক থাকতে পারিনা। যারা আমাদেরকে ঋণী করে রেখেছে তাদের জন্য যখন কিছু করা না যায় তখন ব্যথিত ও মর্মাহত না হয়ে পারিনা। শহীদদের জন্য আমাদের করার কিছু আছে। আর তা হলো শহীদী তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে দীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা আরো শাণিত করা।”