ভারতে ‘জয় শ্রী রাম’ ও ‘মোদী জিন্দাবাদ’ না বলায় ৫২ বছর বয়সী এক অটোচালককে বেধড়ক মারধর করেছে দুই হিন্দু যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে রাজস্থানের সিকার জেলায়। বৃদ্ধ মুসলিম ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগে ২ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, গফফার আহমেদ কাছওয়ার এফআইআরের ভিত্তিতে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মারধরের পাশাপাশি তাঁর থেকে নগদ ৭০০ টাকা ও হাতঘড়ি লুট করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন গফফার আহমেদ কাছওয়া। এছাড়াও তার একাধিক দাঁত ভেঙেছে, এবং চেহারায় আঘাত করে রক্তাক্ত করেছে উগ্র দুই হিন্দু যুবক। তাঁকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে গফফার আহমেদ জানিয়েছেন, “এক ব্যক্তি আমায় ‘মোদী জিন্দাবাদ’ স্লোগান বলতে বলেন। আমি তা অস্বীকার করি…এরপরই আমায় বারবার চড় মারা হয়। তারপরই আমার গাড়ি নিয়ে সিকারের দিকে পালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তারা আমার গাড়ি অনুসরণ করে জগমালপুরার কাছে আমায় আটকায়। জোর করে আমায় গাড়ি থেকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়…এরপর তারা আমায় জোর করে ‘মোদী জিন্দাবাদ’ ও ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিতে বলেন”। মারধরের পর তাঁকে পাকিস্তানে পাঠানোর কথাও বলা হয় বলে অভিযোগ তাঁর।
এ ঘটনা প্রসঙ্গে সিকার সদর থানার স্টেশন হাউস অফিসার পুষ্পেন্দ্র সিং জানিয়েছেন, ”এফআইআরের ভিত্তিতে আমরা গতকাল দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছি। একজন শম্ভুদয়াল জাট(৩৫), আরেকজন রাজেন্দ্র জাট (৩০)। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, ওই দুই ব্য়ক্তি গাড়ি দাঁড় করিয়ে মদ্যপান করছিলেন। তারপরই গফফারকে আটকে তাঁকে মারধর করেন”।
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের দেওয়ান আব্দুল গণি কলেজের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও সমাজকর্মী ড. মুহাম্মাদ ইসমাইল রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘ভারতে যাদের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেওয়ার কথা নয়, যারা মনেপ্রাণে চায় না তা বলতে, তাদেরকে জোর করে বলানো হচ্ছে, বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনকে। এখন আবার নতুন করে গত ৫ আগস্ট রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যদিয়ে বিজেপি আরও একটা চেষ্টা করতে চাচ্ছে, সমান্তরালভাবে শ্রী রামের পাশাপাশি মোদিকেও আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছে। আসলে এর উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ধরে রাখা। দীর্ঘ প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদে এপর্যন্ত গঠনমূলক কাজকর্ম দেখলে স্পষ্ট হবে, বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা, বেকারত্ব ও অন্যান্য সমস্যা বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওরা ধর্মকে কেন্দ্র করে একটা শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। যার মধ্য দিয়ে অশিক্ষিত মানুষজনকে মগজ ধোলাই করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে। এটাই ওদের মূল উদ্দেশ্য এবং এটা অবশ্যই নিন্দনীয়। কারণ জোর করে কাউকে ‘জয় শ্রীরাম’ও বলানো যায় না, আর মোদির নামে ধবনিও দেওয়ানো যায় না। শাসকশ্রেণির প্রশ্রয়ে এসব যুবক এবং বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব কাজকর্ম করাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বরাবরই এসবের নিন্দা জানিয়েছি এবং সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এসব ঘটনার নিন্দা জানাবে বলেও আমাদের বিশ্বাস।’
সূত্র : পার্সটুডে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা